দেশে গত জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৫৯টি। এসব দুর্ঘটনায় ৫১৬ জন নিহত এবং ৮১২ জন আহত হয়েছেন। নিহতের মধ্যে ১১৪ শিশু ও ৭৮ নারী রয়েছে।
এসময়ে ২০৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৬৯ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়ার ১২টি নৌ-দুর্ঘটনায় ৯ জন নিহত ও সাত জন নিখোঁজ রয়েছেন। একই সঙ্গে ৩৮টি কুরবানির গরুর মৃত্যু হয়েছে। তাছাড়া ২১টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৮ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়েছেন।
বুধবার (১২ জুলাই) দুপুরে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমানের পাঠানো জুন মাসের সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা যায়। ।
ও প্রতিবেদনে জানা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৬৯ জন, বাসযাত্রী ৭ জন, ট্রাক-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৬৫ জন, প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-র্যাবের জিপ আরোহী ২৪ জন, থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান) ১১৪ জন, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-করিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র) ২০ জন এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১৮ জন নিহত হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ১৮২টি জাতীয় মহাসড়কে, ২৪৭টি আঞ্চলিক সড়কে, ৬৮টি গ্রামীণ সড়কে, ৫৯টি শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৩টি সংঘটিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত বাহনের সংখ্যা ৯০৭টি। সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ভোর–সকালে ঘটেছে সবচেয়ে বেশি—প্রায় ২৭ শতাংশ। দুর্ঘটনার বিভাগওয়ারি পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা হয়েছে সবচেয়ে বেশি—৩০ দশমিক ৫ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৬৮টি দুর্ঘটনায় ১০৯ জন নিহত। বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে কম ২৪টি দুর্ঘটনায় ১৮ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলায় সবচেয়ে বেশি ২৬টি দুর্ঘটনা ঘটেছে এবং টাঙ্গাইল জেলায় ২৪ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে নড়াইল, পিরোজপুর ও রাঙামাটি জেলায়। এই ৩ জেলায় সামান্য মাত্রার ১১টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। অর্থাৎ অতিরিক্ত গতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
এই গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না। গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ যেমন দরকার, তেমনি দরকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা অর্জন। যানবাহনে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করতে হবে, যার মাধ্যমে গতিসীমা নজরদারি ও রেকর্ড করা যায়।
সাইদুর রহমান আরও বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে মূলত সড়ক পরিবহন খাতের নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনার কারণে। এ অবস্থার উন্নয়নে টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা।
প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ হিসেবে বলা হয়েছে— ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, বেপরোয়া গতি, চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা, বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল, তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো, জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, বিআরটিএর সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
সর্বশেষ সুপারিশ হিসেবে দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি, চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট, বিআরটিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত, মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি , পর্যায়ক্রমে সব মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ, গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ , রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো, টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এবং ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়নের ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৫৫
আপনার মতামত জানানঃ