মিশরে দুই হাজার ভেড়ার মাথার মমি খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। গত শনিবার তারা জানিয়েছেন, দক্ষিণ মিশরের প্রাচীন শহর অ্যাবিডোসে দ্বিতীয় রামসেসের মন্দিরে টলেমাইক যুগের এই মাথাগুলো পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও বিশাল একটি প্রাসাদের কাঠামোও আবিষ্কৃত হয়েছে।
ওই মন্দিরে ভেড়ার মাথাগুলোর সঙ্গে মমি করা কুকুর, বুনো ছাগল, গরু, হরিণ এবং বেজির মাথাও পাওয়া গেছে। দেশটির পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় রামসেস মারা যাওয়ার এক হাজার বছর পর তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এই মাথাগুলো আনা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, মমিগুলো থেকে টলেমাইক সময়কাল নিয়ে নানা তথ্য জানা যাবে। টলেমাইক রাজবংশ, যাকে কখনো কখনো ল্যাগিড রাজবংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। টলেমীয় রাজ্য ছিল মিশরের একটি প্রাচীন হেলেনীয় রাজ্য।
খ্রিস্টপূর্ব ৩০৫ অব্দে আলেকজান্ডারের সঙ্গী প্রথম টলেমি সোটার এই রাজ্যটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং খ্রিস্টপূর্ব ৩০ অব্দে ক্লিওপেট্রার মৃত্যু পর্যন্ত এই রাজ্যটির অস্তিত্ব বজায় ছিল। প্রায় তিন শতাব্দীকাল রাজত্বকারী টলেমীয় রাজবংশ ছিল দীর্ঘতম ও সর্বশেষ প্রাচীন রাজবংশ।
কায়রো থেকে প্রায় ২৭০ মাইল (৪৩৫ কিমি) দক্ষিণে অবস্থিত অ্যাবিডোস শহর। মিশরের অন্যতম প্রধান এবং কম পরিদর্শন করা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান এটি। এটি একটি প্রাচীন মিশরীয় রাজপরিবারের জন্য বড় ও নকশা করা কবরস্থান। যেখানে বিস্তৃত সমাধির স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে এবং দেবতা ওসিরিসের উপাসনার জন্য তীর্থস্থান ছিল। স্থানটি মন্দির এবং সমাধির জন্য বিখ্যাত।
খনন কাজটি করেছে নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব দ্য অ্যানসিয়েন্ট ওয়ার্ল্ড। মমিকৃত প্রাণীর দেহাবশেষ এর পাশাপাশি পুরনো রাজ্যে ষষ্ঠ রাজবংশের প্রায় পাঁচ মিটার পুরু দেয়ালসহ একটি বিশাল প্রাসাদের কাঠামো আবিষ্কৃত হয়েছে। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি মূর্তি, প্যাপিরাস (পুরু কাগজের অনুরূপ একটি উপাদান যা প্রাচীনকালে লেখার জন্য ব্যবহৃত হত), প্রাচীন গাছের দেহাবশেষ, চামড়ার পোশাক এবং জুতা রয়েছে।
নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির একদল প্রত্নতত্ত্ববিদ ফেরাউনের উপাসনালয় ‘ফারাও দ্বিতীয় রামসেস’ থেকে ভেড়ার মাথার প্রাচীন এসব মমি আবিষ্কার করেন। গতকাল রোববার দেশটির পর্যটন ও পুরাকীর্তি মন্ত্রণালয়ের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে এনডিটিভি।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, ভেড়ার মাথার মমি ছাড়াও কুকুর, ছাগল, গরু, হরিণ ও বেজির মাথার মমিও উত্তোলন করা হয়েছে। উপাসনালয় ও সমাধির জন্য মিশরের দক্ষিণাঞ্চলীয় অ্যাবাইডোস শহর বিখ্যাত। এটি রাজধানী কায়রো থেকে প্রায় ৪৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
আমেরিকান মিশনের প্রধান সামেহ ইস্কান্দার বলেন, এগুলো দ্বিতীয় রামসেসের জন্য উৎসর্গ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাত দশকেরও বেশি সময় রাজত্ব ছিল দ্বিতীয় রামসেসের। তার সময়কাল ছিল খ্রিষ্টপূর্ব ১৩০৪-১২৩৭ পর্যন্ত।
দ্বিতীয় রামসেস, যিনি মহান রামসেস হিসেবেও পরিচিত, মিশরের উনবিংশতম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও রাজা ছিলেন। প্রায়শই তাকে মিশরীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে মহান, সবচেয়ে উদযাপিত ও সবচেয়ে শক্তিশালী ফারাও হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার উত্তরসূরিগণ এবং পরবর্তী মিশরীয়রা তাকে “মহান পূর্বপুরুষ” বলে সম্বোধন করতেন।
ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস ছিলেন পৃথিবীর সুখি শাসকদের অন্যতম। ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস এর শেষ জীবনটিও নাকি বেশ সুখে শান্তিতেই কেটেছে। ৬৭ বছর শাসন করেছেন মিশর। প্রাচীন মিশরের জনগনের গড় আয়ূ অত ছিল না। প্রায় ১০০টি সন্তানাদির জনক ছিলেন ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস। ৯২ বছর বয়েসে চিরনিদ্রায় শায়িত হন ফারাও দ্বিতীয় রামেসেস।
মিসরের সুপ্রিম কাউন্সিল অফ অ্যান্টিকুইটিসের প্রধান মোস্তফা ওয়াজিরি বলেন, এই আবিষ্কারগুলো দ্বিতীয় রামসেসের মন্দির এবং খ্রিষ্টপূর্ব ২৩৭৪ থেকে ২১৪০ এবং টলেমিক যুগের ৩২৩ থেকে ৩০ খ্রিষ্টপূর্বের মধ্যকার নির্মাণকার্য সম্পর্কে আরও জানতে সাহায্য করবে।
প্রাণীর এসব মমি ছাড়াও প্রত্নতত্ত্ববিদেরা ৪ হাজার বছরের পুরোনো ৫ মিটার পুরু দেয়ালসহ একটি প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন। প্রাচীন কয়েকটি মূর্তি, বৃক্ষ, চামড়ার পোশাক ও জুতাও সেখানে পাওয়া গেছে।
এসডব্লিউএসএস/১৯০৫
আপনার মতামত জানানঃ