অস্ট্রেলিয়ার পার্ক রেঞ্জাররা (বনরক্ষী) দেশটির গভীর অরণ্যে বিশাল আকারের একটি কুনো ব্যাঙের খোঁজ পেয়েছেন, যেটি ওজনের দিক দিয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আজ শুক্রবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
হলিউডের অতিকায় দানব ‘গডজিলার’ নাম অনুযায়ী এই ব্যাঙের নাম রাখা হয়েছে ‘টোডজিলা’।
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর কুইন্সল্যান্ডে কনওয়ে ন্যাশনাল পার্কে দানবাকার এই ব্যাঙ পেয়েছেন সেখানকার এক বনকর্মী। এখন প্রশ্ন ‘কেন টোড’ প্রজাতির এ ব্যাঙটিকে ‘টোডজিলা’ নাম দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার কুইন্সল্যান্ডের পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিভাগ জানিয়েছে, এটি বিশ্ব রেকর্ড হতে পারে। কারণ, এর আগে এত ওজনের ব্যাঙয়ের ‘হদিস’ পাওয়া যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা টোডজিলার ওজন মেপে ২ কেজি ৭০০ গ্রাম বা ৬ পাউন্ড পান। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় কুনো ব্যাঙের ওজন হিসাব করা হয়েছে ২ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা ৫ দশমিক ৮ পাউন্ড। ১৯৯১ সালে সুইডেনের একটি পোষা ব্যাঙ এই রেকর্ড সৃষ্টি করে।
ব্যাঙটির আকার এতটাই বিশাল, সেটিকে কল্প কাহিনীর সবচেয়ে বড় দৈত্য গডজিলার আকারের ন্যয় তুলনা করে নামটি দেওয়া হয়েছে। বনকর্মীরা বলছেন, ব্যাঙটি নবজাতক মানব শিশুর ওজনের সমান!
আল জাজিরা বিশালাকার এ ব্যাঙটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, টোডজিলা নাম দেওয়া ব্যাঙটির ওজন প্রায় ৩ কেজি।
খবরে আরও বলা হয়, ব্যাঙটি খুঁজে পেয়েছিলেন কাইলি গ্রে নামে কুইন্সল্যান্ডে কনওয়ে ন্যাশনাল পার্কের এক কর্মী। তিনি গত সপ্তাহে পার্কের অভ্যন্তরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় একটি সাপ দেখে তিনি গাড়িটি থামাতে বাধ্য হন। সাপটি মূলত কেন টোড ব্যাঙ থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাইছিল।
কাইলি বলেন, সাপটি চলে যাওয়ার পর আমি ব্যাঙটিকে দেখি। যখন ধরলাম, সেটি যে কত বড় ও ভারী ছিল বিশ্বাস করতে পারিনি। তাই আমি ব্যাঙটির নাম দিয়েছি টোডজিলা। তাকে আমি একটি নিরাপদ পাত্রে রেখেছি যাতে অন্য বন্য প্রাণীরা আক্রমণ করতে না পারে।
কেন টোড ব্যাঙয়ে বৈজ্ঞানিক নাম রাইনেলা মেরিনা। এ প্রজাতির ব্যাঙ নিওট্রপিকাল টোড বা মেরিন টোড নামেও পরিচিত। এ ধরনের ব্যাঙ দক্ষিণ আমেরিকা, ওশেনিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে পাওয়া যায়। ১৯৩৫ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি স্থানে এসব ব্যাঙ পাওয়া যেত।
কৃষি রাসায়নিক ব্যবহারের আগে কুইন্সল্যান্ডের আখ শিল্পের কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণে চাষিরা এসব ব্যাঙয়ের ব্যবহার করতেন। দেশটির সরকারের মতে, এখন উত্তর অস্ট্রেলিয়া জুড়ে কেন টোড পাওয়া যায়।
কুইন্সল্যান্ডে কনওয়ে ন্যাশনাল পার্কের রেঞ্জার কাইলি আরও বলেন, ব্যাঙটির মুখের আকার এতটাই বড়, এটি বড় ধরনের পোকা মাকড়, সরীসৃপ বা ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী খেয়ে ফেলতে পারে। যে সাপটি পালিয়ে গেছে, ব্যাঙটি হত সেটিকে খেয়ে ফেলতে আক্রমণ করেছিল।
কাইলিকে উদ্ধৃত করে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি নিউজ বলেছে, ব্যাঙটি নারী ও দেখতে প্রায় ফুটবলের মতো। এটি পার্কের ৩৯৩ মিটার উচ্চতায় বসবাস করে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ধরনের ব্যাঙ ১৫ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। আকারে বিশাল হওয়ায় কুইন্সল্যান্ড মিউজিয়াম টোডজিলাকে নিতে আগ্রহী।
শিকারি থেকে বাঁচতে কেন টোড ব্যাঙ বিষ ছুড়তে পারে। স্ত্রী কেন টোড এক মৌসুমে ৩০ হাজার পর্যন্ত ডিম দিতে সক্ষম।
এটি কুনো ব্যাঙের ‘কেইন টোড’ প্রজাতির প্রতিনিধি। আক্রমণাত্মক প্রাণী কেইন টোড অস্ট্রেলিয়ার বাস্তুতন্ত্রের ওপর হুমকি সৃষ্টি করে আসছে বেশ কিছুদিন ধরেই।
যদিও আশঙ্কার কথা কাইলি’র সহকর্মী ও জ্যেষ্ঠ পার্ক রেঞ্জার ব্যারি নোলান রয়টার্সকে জানান, ‘বাস্তুতন্ত্রের ওপর নেতিবাচক প্রভাব’ ঠেকাতে টোডজিলাকে ব্যাথাহীন মৃত্যু দেয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার এই প্রজাতির কুনো ব্যাঙগুলোর কপালে সাধারণত এ ভাগ্যই লেখা থাকে।
এসডব্লিউএসএস/২০২২
আপনার মতামত জানানঃ