ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ এখন বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই এই সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড আবর্তিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধাক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেয়ার দাবিতে গত শানিবার ঢাকায় বিরোধী দল বিএনপি’র বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এই গণসমাবেশ হয়েছে রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠে। মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মাঠের আশপাশের এলাকায়ও নেতা–কর্মীদের ভিড় দেখতে পাওয়া গেছে। মাঠে জায়গা না হওয়ায় অনেক নেতা–কর্মীই রাস্তায় অবস্থান নেন। নেতা–কর্মীরা মাঠে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন।
আর এই সমাবেশ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিদেশি মিডিয়া। এর মধ্যে আছে ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস, বার্তা সংস্থা এএফপি, স্ট্রেইটস টাইমস, এনডিটিভি প্রভৃতি।
হিন্দুস্তান টাইমসের শিরোনাম- ‘‘বাংলাদেশ অপোজিশন মাউন্টস হিউজ প্রটেস্ট ইন ঢাকা: ‘শেখ হাসিনা ভোট থিফ’। এনডিটিভির শিরোনাম- ‘ম্যাসিভ প্রটেস্ট ইন বাংলাদেশ ক্যাপিটাল এগেইনস্ট শেখ হাসিনা’জ গভর্নমেন্ট’। এএফপি’র শিরোনাম- ‘বাংলাদেশ অপোজিশন মাউন্টস হিউজ প্রটেস্ট ইন ক্যাপিটাল’।
হিন্দুস্তান টাইমস তার প্রতিবেদনে লিখেছে, নতুন নির্বাচন দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভে যোগ দিতে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী ঢাকায় সমবেত হন। শনিবার রাজধানী ঢাকায় উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। এরই মধ্যে বিক্ষোভকারীরা আগের নির্বাচনে ‘ভোট চুরি’ নিয়ে স্লোগান দেন। সহিংসতায় উস্কানি দেয়ার অভিযোগে বিরোধী দলের শীর্ষ দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিরোধী দল দেশজুড়ে যখন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে বিক্ষোভ করছে, তখন তাদের র্যালি থেকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক আবহে এরই মধ্যে জাতিসংঘ সহ পশ্চিমা দেশগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
বিএনপি’র একজন কর্মকর্তা শনিবার দাবি করেছেন, এদিনের র্যালিতে যোগ দিতে সকালের মধ্যে সমাবেশস্থলে যোগ দেন প্রায় দুই লাখ মানুষ। বার্তা সংস্থা এএফপিকে মুখপাত্র জহিরুদ্দিন স্বপন বলেছেন, আমাদের প্রধান দাবি হলো- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে। জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে এবং নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মূলত বার্তা সংস্থা এএফপি’র রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে খবর পরিবেশন করেছে হিন্দুস্তান টাইমস। এএফপি আরও বলেছে, এদিন শহরের প্রবেশপথগুলোতে চেকপয়েন্ট বসায় পুলিশ। বিস্তৃত মেট্রোপলিটন শহরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঢাকার রাস্তাঘাট স্বাভাবিক সময়ে যানজটে আটকে থাকে। সেই রাস্তাগুলোতে এদিন হাতেগোনা সাইকেল, রিকশা ও কার চলাচল করতে দেখা গেছে।
বিরোধী বিএনপি’র কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, সরকার অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে, যাতে মানুষজন সমাবেশে যোগ দিতে না পারেন। স্থানীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, শুক্রবার বিএনপি’র নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। এনডিটিভি লিখেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ, নতুন নির্বাচন দাবিতে শনিবার ঢাকায় প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র মিটিংয়ে সমবেত হয়েছিলেন প্রায় এক লাখ সমর্থক।
গোলাপবাগ মাঠে আয়োজিত এই র্যালি আশপাশের সব সড়কে ছড়িয়ে পড়ে। এই বিক্ষোভেই পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি’র সাত জন এমপি। পার্লামেন্টে এই দলটির আসনই আছে সাতটি। ফলে পার্লামেন্ট পরিণত হবে ব্যাপকভাবে রাবার স্ট্যাম্পে। এখানে এমনিতেই শেখ হাসিনার দলের কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।
এমন অবস্থায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ ও পশ্চিমা সরকারগুলো। দেশীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন হয়েছে শতকরা ২৫ ভাগ। ফলে খাদ্য আমদানির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণি। খাদ্য ও অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ প্রকাশ করতে র্যালিতে যোগ দিয়েছিলেন অটোরিকশাচালক রাসেল মিয়া।
তিনি বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধির ফলে তার পরিবারের দিনে তিনবারের খাবার সরবরাহে লড়াই করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, নিষ্পেষণের শিকার আমি। যেসব মানুষ আমার এই পরিণতির জন্য দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আমি এখানে এসেছি। কিন্তু বাংলাদেশে আছে অর্ধডজন বেসরকারি টেলিভিশন। তাদের কেউই এই ইভেন্ট সরাসরি সম্প্রচার করেনি। এতে সংশয় বেড়েছে যে, কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সম্প্রচার না করতে চাপ দিয়েছে।
এসডব্লিউএসএস/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ