ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলন করেছে দলটি। এতে ১২ নভেম্বরের গণসমাবেশ সফল করার আহ্বানের পাশাপাশি প্রশাসন-পুলিশের বৈরী আচরণের অভিযোগ করা হয়েছে। আজ বুধবার বেলা একটার দিকে ফরিদপুর প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।
বিএনপি ফরিদপুর বিভাগের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) শামা ওবায়েদ।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, গণসমাবেশের আগে অতি উৎসাহী পুলিশ সদস্যরা তৎপর হয়ে উঠেছেন। তাঁরা পুরোনো ওয়ারেন্ট তামিল করার নামে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলা ও মহানগরের বিভিন্ন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে পুলিশ নারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছে। নগরকান্দায় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, কোনো কিছু দিয়ে এ সমাবেশ বানচাল করা যাবে না। বানচাল করার চেষ্টা করা হলে ফরিদপুরের আনাচকানাচে সমাবেশ হবে। গ্রেপ্তার করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। হাজার হাজার মানুষ সমাবেশে যোগ দেবেন।
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নিজেদের জন্য এ গণসমাবেশ করছে না। মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে এ আন্দোলন করছে। তাই এটা বিএনপির গণসমাবেশ নয়, গণমানুষের গণদাবি আদায়ের সমাবেশ। সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে ফরিদপরের গণসমাবেশ ইতিহাস সৃষ্টি করবে। এ এলাকার মানুষ বুঝিয়ে দেবে, আমরা নদীভাঙা ও প্রাকৃতিক দৈবদুর্বিপাক সহ্য করা মানুষ। এ এলাকার মানুষ কাউকে পরোয়া করে না।’
এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চাই। আমরা অন্তত এক মাস আগে সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠ বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। কিন্তু প্রশাসন আমাদের দেয়নি। বাধা দেওয়া বা বাধাগ্রস্ত করার এমন কোনো পথ ছিল না, যা আগের সমাবেশগুলোতে হয়নি, ফরিদপুর তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। একই কায়দায় ডাকা হয়েছে বাস ও মিনিবাসের ধর্মঘট।’
‘আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বিশ্বাসী, আমরা কোনো বিশৃঙ্খলা চাই না’ মন্তব্য করে এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে গণমানুষকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন দিয়ে দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের লক্ষ্য।’
জাহিদ হোসেন প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘সব দলের প্রতি সমান সুযোগ করে দিন। রাজনীতি করার অধিকার সবার আছে। যার যার অবস্থান থেকে সবাই রাজনীতি করুক, কেউ কারও সঙ্গে ঝামেলা যেন না করে, এ দায়িত্ব প্রশাসনের। আমরা সবার সাহায্য চাই।’
শামা ওবায়েদ বলেন, সারা দেশে আজ গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বিএনপি নেতাদের বাড়িতে অভিযানের নামে হয়রানি, দুর্ব্যবহার করছে। গতকাল রাতে নগরকান্দায় সাতজনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি ফরিদপুরে অন্তত ছয়জন নেতার বাড়িতে অভিযানের নামে হয়রানি করেছে পুলিশ। বিএনপির নেতা মিজানুর রহমানের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁর ভাইকে আটক করেছে। আরও নেতাদের বাড়িতে অভিযান করে নারীদের সঙ্গে ন্যক্কারজনক আচরণ করেছে।
আগামী শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির উদ্যোগে ষষ্ঠ বিভাগীয় গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বেলা ১১টায় কোমরপুর আব্দুল আজিজ ইনস্টিটিউট মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
জনাকীর্ণ ওই সাংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জহিরুল হক, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নায়াব ইউসুফ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুর রহমান ও মো. সেলিমুজ্জামান, কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার নাসির ও ইয়াসমিন আরা হক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সদস্যসচিব এ কে কিবরিয়া, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহসভাপতি মাহবুবুল হাসান ভূঁইয়া প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির করা অভিযোগের ব্যাপারে ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ ইমদান হোসাইন বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে, ওয়ারেন্ট রয়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতি করার রেকর্ড আছে, পুলিশ নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে তাঁদের বাড়িতে গেছে, তল্লাশি করেছে। এ সময় কোনো নারীর সঙ্গে অসম্মানজনক আচরণ করা হয়নি। যে অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে আনা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯১৫
আপনার মতামত জানানঃ