ফরিদপুরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে শেখ আরাফাত হোসেন নামে এক যুবলীগ নেতাকে চোখ বেঁধে নির্যাতন করার ঘটনায় দুই ওসিসহ সাত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ফরিদপুরের এক নম্বর আমলি আদালতে আরাফাত এ মামলা দায়ের করেন।
আদালতের বিচারিক হাকিম মো. ফারুক হোসেন মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ফরিদপুরকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে আগামী ৭ জানুয়ারি।
আরাফাত (৩৬) ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার কাউলিবেড়া ইউনিয়নের শেখপুরা গ্রামের শেখ মোশাররফ হোসেনের ছেলে। তিনি ভাঙ্গা উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। মামলার আসামিরা হচ্ছেন—ফরিদপুর ডিবি পুলিশের সাবেক ওসি আহাদুজ্জামান আহাদ (৫৫), ভাঙ্গা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান (৪৯), ভাঙ্গা থানার এসআই এবাদুল হক মোল্লা (৩৫), আনিসুর রহমান (৪০), শামসুল হক সুমন (৩৮) ও রেজওয়ান মামুন (৩০) এবং গোয়েন্দা পুলিশের এসআই শাহীন। এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার কাউলিবেড়া বাজার এলাকা থেকে পাঁচ-ছয়জন পুলিশ সদস্য একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাসে এসে বিনা গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় আরাফাতকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে নেন। গাড়িতে ওঠানোর পর পুলিশ সদস্যরা তাঁকে মারধর করতে থাকেন এবং তাঁকে নিক্সন চৌধুরীর (ফরিদপুর-৪ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী) রাজনীতি করার কথা স্বীকার করতে বলেন। অন্যথায় তাঁকে ক্রসফায়ারের হুমকি দেওয়া হয়। পরে ভাঙ্গার পুখুরিয়া এলাকায় গিয়ে তাঁকে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। ডিবির গাড়িতে তুলে দিয়ে এসআই এবাদুল ভাঙ্গা থানার ওসিকে ফোনে বলেন, স্যার আরাফাতকে গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আহাদুজ্জামানের হাতে বুঝাইয়া দিয়েছি। এজাহারে আরো বলা হয়, পরে গোয়েন্দা পুলিশ তাঁকে ফরিদপুর পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের তৃতীয় তলায় গোয়েন্দা পুলিশের দপ্তরে নিয়ে যায়। সেখানে রাত ১১টার দিকে তাঁকে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। ওই রাতে কয়েক দফা তাঁকে পেটানো হয়। হাত জোড় করে মিনতি জানালে ওসি ডিবি বলেন, ‘আমি তোগের লোক না। আমি নিক্সন চৌধুরীর লোক।’ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. কামালউদ্দিন বলেন, আদালত আরাফাতের দায়ের করা মামলা আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৭ জানুয়ারি।
প্রসঙ্গত গত ২১ সেপ্টেম্বর ডিবি কার্যালয়ে নির্যাতনের একটি ভিডিও নিজের ফেসবুক আইডিতে আপলোড করেন আরাফাত। এরপর বিষয়টি সারা দেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। ঘটনার পরপরই ফরিদপুর ডিবি পুলিশের সাবেক ওসি আহাদুজ্জামানকে সদরপুরের চন্দ্রপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ থেকে ক্লোজ করে ফরিদপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। তবে বর্তমানে আহাদুজ্জামান রাজবাড়ীতে বদলি হয়েছেন। ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বিষয়টি তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন। পিবিআই তাদের মতো করে তদন্ত করবে। তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি আমরাও তদন্ত করছি। তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আপনার মতামত জানানঃ
![Donate](https://statewatch.net/wp-content/uploads/2021/06/xcard.jpg.pagespeed.ic.qcUrAxHADa.jpg)
আপনার মতামত জানানঃ