জবাবদিহিতা ও সংস্কার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) এবং এর ৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ অ্যান্ড ফ্রেডরিখ এবার্ট স্টিফটাং আয়োজিত ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
এই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ পুলিশের বিদায়ী মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের জন্য প্রযোজ্য হবে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে এ কথা বলেন পিটার হাস। পুলিশের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনের আগে র্যাবের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন বেনজীর।
পিটার বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞাগুলো শাস্তির উদ্দেশ্যে নয় বরং আচরণের পরিবর্তন এবং তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে।’
পিটার হাস বলেন, বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। কাজ করছে। আমরা আশা করছি, র্যাবের আচরণ পরিবর্তন হবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে পিটার হাস বলেন, ইন্দো প্যাসিফিক কৌশল-আইপিএসে বাংলাদেশের যোগ দেওয়া না দেওয়াটা কোনো বিষয় নয়। কেননা এটা একটি নীতি। এটা বাংলাদেশ কিভাবে নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।
এক প্রশ্নের উত্তরে পিটার হাস বলেন, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ-বিআরআইয়ে যোগ দেওয়াটা বাংলাদেশের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ কোন জোটে যোগ দেবে, সেটা তাদের বিষয়।
নিষেধাজ্ঞাগুলো শাস্তির উদ্দেশ্যে নয় বরং আচরণের পরিবর্তন এবং তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, গত বছরের ডিসেম্বরে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে পরিবর্তিত হয়েছে।
“এটি খুবই ভাল একটি সংকেত,” পিটার বলেন।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতার কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, সহিংসতা থাকলে একটি অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক মানের একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এমন একটি নির্বাচন যা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতী নয়।
বক্তব্যে এই মার্কিন কূটনীতিক বাণিজ্য, শ্রম অধিকার, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক রাজনীতি এবং ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলসহ আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন।
এসময় রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও সাবেক কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
করোনা মহামারিকালে রাষ্ট্রের নানা সঙ্কটের মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ক্রসফায়ার বা কথিত বন্দুকযুদ্ধসহ রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে বছরের বিভিন্ন সময়ে।
এ সময় করোনা মহামারির কারণে রাষ্ট্রের নানা সঙ্কটের মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে অপহরণ ও গুমের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এমন অভিযোগ করে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)।
গত তিন বছরে পুলিশি হেফাজতে মৃত্যু, কথিত বন্ধুকযুদ্ধ ও ক্রসফায়ারসহ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন ৫৬টি জেলার ৫৯১ জন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
সিজিএস বলছে, এই ৫৯১ জনের মধ্যে ৮৬ শতাংশেরই মৃত্যু হয়েছে কথিত বন্ধুকযুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যরা সরাসরি এসব ঘটনায় জড়িত ছিল বলে মন্তব্য করেছে সিজিএস।
এদিকে, গত বছর ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। একইসঙ্গে এটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বড় ধরনের কূটনৈতিক চাপ হিসেবেও দেখা হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিরা হলেন র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান মহাপরিদর্শক তথা আইজিপি বেনজীর আহমেদ, র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) খান মোহাম্মদ আজাদ, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) তোফায়েল মুস্তফা সরওয়ার, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ও আনোয়ার লতিফ খান এবং বাহিনীটির সাবেক কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল মিফতাহ উদ্দিন আহমেদ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৩
আপনার মতামত জানানঃ