কোনও পুরুষ অভিভাবক বা মাহরাম ছাড়াই ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সী নারীদের ওমরাহ পালনের অনুমতি দেবে সৌদি আরব।
তবে দীর্ঘদিনের পুরনো এই রীতি বাতিল করে নারীদের ওমরাহ পালনের জন্য একটি শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো একটি দলের অংশ হিসাবে ওমরাহ পালনে যেতে হবে নারীদের।
এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় বলেছে, নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওমরাহ বা হজ যাত্রার জন্য আবেদন করা নারীদের আংশিকভাবে টিকা নেওয়া থাকতে হবে। অর্থাৎ কমপক্ষে ১ ডোজ টিকা নিতে হবে তাদের। এছাড়া কোনো ধরনের অসুস্থতা থাকা যাবে না।
দেশটির এই মন্ত্রণালয় বলেছে, সৌদি আরবে বসবাসরত এবং সৌদি নাগরিক, যারা গত ৫ বছরে হজ করেননি তারা চলতি বছরে হজের জন্য নিবন্ধন করতে পারবেন।
গত বছর সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে সব বয়সী নারীদের ‘মাহরাম’ ছাড়াই হজ পালনের অনুমতি দেয়। তবে নারীদের অবশ্যই একটি দলের অংশ হতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়।
সৌদি আরবে গত কয়েকবছর ধরে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কারকাজ চলছে৷ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন৷
গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে সৌদি নারীরা পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে পারছেন৷ কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ নারী করতে চায় দেশটি৷ এ সব ছাড়াও সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব৷
২০১৭ সালের পর সৌদির পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। যুবরাজ সালমান দেশটির সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনায় আগের চেয়ে স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারছেন নারীরা। ২০১৭ সালের আগে সৌদিতে নারীদের সাইকেল চালানোর কথা যেখানে ভাবাই যেতো না।
২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় দেশটি। ফলে গাড়ি চালাতে সৌদি নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না। এছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা।
ওজন ও উচ্চতার শর্ত পূরণ করে নারীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। তবে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করা লাগবে তাদের।
২০২০ সালে সৌদি আইন মন্ত্রণালয় ১০০ নারীকে পাবলিক নোটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, শিগগিরই আদালতে নারী বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হবে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো নারী বিমানবালা নিয়োগ দেয় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস। দেশটিতে নারী যাত্রীদের সেবার জন্য ৫০ জন বিমানবালা নিয়োগ করা হয়।
সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব দেরি হলেও নিজেদের বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। উবার চালানো, সাইকেল চালানো সৌদি নারীদের জন্য যুগান্তকারী এক ব্যাপার বটে। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন নারীদের মতো সৌদি আরবের নারীরাও নিজেদের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা লক্ষণীয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এসএস/২১০৫
আপনার মতামত জানানঃ