
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ শহরের কেন্দ্র থেকে ১৯ মাইল দূরে ট্যাঙ্কসহ ভারী অস্ত্র নিয়ে গত ৪ দিন ধরে রুশ সেনা বহর আটকে রয়েছে। বহরটির দৈর্ঘ্য ৪০ মাইলের বেশি।
দ্রুতই বহরটি তীব্র ঠাণ্ডার কবলে পড়তে পারে। এতে বহু রুশ সেনার মৃত্যু হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার (৯ মার্চ) দ্য ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এরই মধ্য রাতের বেলায় ওই এলাকায় তাপমাত্রা শূন্যের নিচে চলে যায়। আগামী দিনগুলোতে তাপমাত্রা মাইনাস ১০ ডিগ্রিতে নামবে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। এ সময় তুষারপাতও শুরু হবে।
তাছাড়া আর্কটিক বাতাসের সঙ্গে পূর্বদিকের বাতাস মিলিত হওয়ার কারণে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রিতে নামতে পারে। এমন বরফময় আবহাওয়ায় বহরে অবস্থান করা রাশিয়ান সেনাবাহিনীর জীবনযাত্রার পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাল্টিক সিকিউরিটি ফাউন্ডেশনের একজন সিনিয়র প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্লেন গ্রান্ট বলেন, তীব্র ঠাণ্ডায় ট্যাঙ্কগুলোর ইঞ্জিন যদি না চালানো হয় তাহলে আস্তে আস্তে সেটি রেফ্রিজারেটরে পরিণত হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ইঞ্জিন না চালালে ধাতব ট্যাঙ্ক একটি ফ্রিজ মাত্র। মৃত্যু এড়াতে রুশ সেনারা অপেক্ষা না করে বেরিয়ে পড়বে ও জঙ্গলের দিকে হাঁটবে। ট্যাঙ্কের মধ্যে অবস্থান করার অর্থই হলো মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করা।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, গত কয়েক দিন ধরে রুশ সেনাদের বহরটি আর এগোয়নি।
আবার কেউ কেউ বলছেন, ইউক্রেনের কর্দমাক্ত রাস্তায় হয়তো রুশ গাড়িগুলোর চাকা আটকে গেছে। এ ধরনের বেশ কিছু ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে, যদিও তার সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া, রুশ বহরটির জ্বালানি ও সৈন্যদের খাবার ফুরিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন কিছু বিশ্লেষক। এটিও কতটুকু সত্য, তা নির্ণয় করা কঠিন
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই রুশ সেনারা ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করেন।
দেশটিকে ‘অসামরিকায়ন’ ও ‘নাৎসিমুক্তকরণ’ এবং দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রক্ষা করার জন্যই এমন সামরিক পদক্ষেপ বলে দাবি করে আসছে রাশিয়া।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, যুদ্ধ থেকে বাঁচতে ইউক্রেন ছেড়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছে ২০ লাখ মানুষ।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে ইউক্রেনের ২০ লাখ ১১ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া দেশটির দুই হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং রাশিয়ার ১১ হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন।
অন্যদিকে রাশিয়া দাবি করেছে, যুদ্ধে তাদের ৪৯৮ সৈন্য নিহত এবং ইউক্রেনের ২ হাজার ৮৭০ জনের বেশি ইউক্রেনীয় সেনা নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘ জানিয়েছে, রুশ হামলায় এখন পর্যন্ত ইউক্রেনের ৪৭৪ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। যদিও সংস্থাটি বলেছে, এটি নিশ্চিত যে প্রকৃত হতাহতের সংখ্যা হয়তো অনেক বেশি।
ইউক্রেনে মার্কিন সেনা মোতায়েনের আহ্বান
ইউক্রেনে মার্কিন সেনা মোতায়েনের আহ্বান জানিয়েছেন ট্রাম্পের অধীনে ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করা জোটের মার্কিন দূত হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী জেমস জেফরি।
বুধবার সুরক্ষিত মানবিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য জাতিসংঘ এবং মার্কিন সেনাদের ইউক্রেনে প্রবেশের আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বিবিসির।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের উচিত জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চাওয়া। শান্তিরক্ষা হস্তক্ষেপের মতো, যা ২০০৬ সালে দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলি অনুপ্রবেশ বন্ধ করেছিল।
তিনি বলেন, ইউক্রেনকে এ মানবিক অঞ্চল থেকে শুরু করা যে কোনো সামরিক অভিযান পরিত্যাগ করতে হবে।
তিনি ডিফেন্স ওয়ানে লিখেছেন— ইউক্রেনে তার আইনি সরকার কর্তৃক আমন্ত্রিত বাহিনীকে আক্রমণ করার এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ম্যান্ডেট এবং মানবিক মিশনে রাশিয়ার সিদ্ধান্ত ছাড়া কোনো সংঘাত শুরু হবে না।
জেফরি বলেন, রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে ন্যাটো সাহায্য করতে পারবে না, তবে মার্কিন সেনারা তার জটিল পরিকল্পনার অধীনে দেশটির মাটিতে থাকবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৪৩০
আপনার মতামত জানানঃ