
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়া বোমা হামলা চালানোর পর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একে যুদ্ধাপরাধ বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, সোমবারের ঐ হামলাটি যে বেসামরিক লোকজনকে লক্ষ্য করে চালানো হয়েছিল তার সাক্ষী রয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোও অভিযোগ করছে যে রুশ আগ্রাসনের সময় যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয়েছে। ওদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) এসব অভিযোগ নিয়ে নিজস্ব তদন্ত শুরুর করার কথা বিবেচনা করছে।
এই আদালতে প্রধান কৌঁসুলি করিম খান বলছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটেছে একথা মনে করার “বিশ্বাসযোগ্য ভিত্তি” রয়েছে।
তিনি জানান, তারা যে তদন্ত চালাবেন তাতে তারা দেখবেন ইউক্রেইনের বর্তমান লড়াই এবং ২০১৪ সালে সে দেশের ওপর প্রথম রুশ আগ্রাসনের সময় ইউক্রেনে কোন যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত হয়েছে কিনা।
টুইটারে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটা ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি।
Barbaric Russian missile strikes on the central Freedom Square and residential districts of Kharkiv. Putin is unable to break Ukraine down. He commits more war crimes out of fury, murders innocent civilians. The world can and must do more. INCREASE PRESSURE, ISOLATE RUSSIA FULLY! pic.twitter.com/tN4VHF1A9n
— Dmytro Kuleba (@DmytroKuleba) March 1, 2022
তবে এই তদন্ত শুরু করতে আইসিসির বিচারকদের অনুমোদন লাগবে।
কৌঁসুলি করিম খান বলেন, এই পর্যায়ে তিনি তার সহকর্মীদের বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলাসহ এসব অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ জোগাড় করতে।
কিন্তু রাশিয়া কিংবা ইউক্রেন, দুটি দেশের কোনটিই আইসিসির সদস্য নয়। তবে কিয়েভের সরকার এখন এই আদালতের বিচারিক এখতিয়ারকে মেনে নিয়েছে।
পাশাপাশি কয়েকদিন আগে করিম খান ইউক্রেনে রুশ হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বার্তায় বলেছিলেন, ‘আমি বিবদমান সব পক্ষকে স্মরণ করিয়ে বলতে চাই আইসিসি তার ক্ষমতাবলে ইউক্রেনে কোনো গণহত্যা, মানবতাবিরোধী কাজ বা যুদ্ধাপরাধ হয়েছে কিনা তা তদন্ত করতে পারে।’
করিম খান বলেন, ইউক্রেন আইসিসির সদস্য না হলেও আদালতের তদন্ত করার এখতিয়ার রয়েছে। তিনি বলেছেন যে, গত বছর ক্রিমিয়া এবং ডনবাস সম্পর্কিত পূর্ববর্তী প্রাথমিক তদন্ত এবং ইউক্রেনের বর্তমান ঘটনাগুলির উপর ভিত্তি করে তদন্ত শুরু করা যেতে পারে।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত হেগ ভিত্তিক আইসিসি যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার তদন্ত এবং বিচার করে থাকে।
গত সপ্তাহে করিম এ এ খান যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে সতর্ক করে বলেন, ইউক্রেনে কার্যক্রম চালানোর ক্ষমতা তার কার্যালয়ে রয়েছে। কারণ ২০১৫ সালে ইউক্রেন সরকার আইসিসি’কে স্বীকৃতি দেয়। যদিও এই আদালত প্রতিষ্ঠা হয় যে রোম চুক্তির মাধ্যমে সেই চুক্তিকে প্রাথমিকভাবে সই করেনি ইউক্রেন।
সোমবার এক বিবৃতিতে করিম খান বলেন, ‘আমি ইউক্রেনের মাটিতে ঘটে যাওয়া ঘটনাপ্রবাহ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ অব্যাহত রাখবো এবং আবারও ধৈর্য্য ধারণ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’
ইতিমধ্যেই লিথুয়ানিয়া ইউক্রেনে রাশিয়া এবং বেলারুশ দ্বারা সংঘটিত সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করার জন্য আইসিসিকে আহ্বান জানিয়েছে। লিথুয়ানিয়ার প্রধানমন্ত্রী, ইনগ্রিডা সিমোনিটে, ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, “পুতিন যা করছেন তা কেবল একটি হত্যা ছাড়া অন্য কিছু নয় এবং আমি আশা করি তিনি হেগে উপস্থিত থাকবেন।”
ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক বিচার বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ডেভিড বস্কো বলেন, এটি খুব বেশি ফল দেবে কিনা তার জানা নেই কারণ একটি বিষয় স্পষ্ট নয় যে এই মামলার বিষয়ে আইসিজে-র কতটা এক্তিয়ার থাকবে। তারপরেও যদি মামলা চলে তাহলে এর প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ হতে পারে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯৪৫
আপনার মতামত জানানঃ