আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালাতে মাঠে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নামাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে গুজব অপপ্রচার রোধে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ কমিটি। এ লক্ষ্যে সারা দেশে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করছে দলের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটি।
নির্বাচন সামনে এলেই ষড়যন্ত্র দানা বাঁধে। অনলাইনে গুজব ও অপপ্রচার বাড়ে। আগামী দিনে এগুলো রোধে কাজ করতে দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব-অপপ্রচার রোধে এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট’র সমন্বয়ে একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অন্তর্গত থানা সমূহের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদকদের নিয়ে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র কাউন্সিল হলে ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার কৌশল’ শীর্ষক কর্মশালা আয়োজন করা হয়।
এ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় সার্বিক সহযোগিতা দেয় আওয়ামী লীগের গবেষণা সেল সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উপকমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর।
স্বাগত বক্তব্যে আবদুস সবুর বলেন, আগামী দিনে বাংলাদেশ যত উন্নত হতে থাকবে, আগামী নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, তত বেশি গুজব অপপ্রচার ছড়ানোর চেষ্টা করবে প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব অপপ্রচার ছড়িয়ে তারা জনগণকে বিভ্রান্ত করে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করার জন্য চেষ্টা করবে। যেহেতু তারা রাজপথে পেরে উঠতে পারবে না, তাই তাদের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে গুজব ও অপপ্রচার। আমাদেরকে আগামী দিনে এই গুজব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা সারাদেশে এরই মধ্যে ৬৯টি কর্মশালা সম্পন্ন করেছি, আজ ৭০তম কর্মশালা চলছে। আমাদের লক্ষ্য, জেলা পর্যায়ে ১০ হাজার মাস্টার ট্রেইনার তৈরি করা। তাদের দিয়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত এক লাখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট তৈরি করা। প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী যেন আগামী দিনে কোনো ধরনের গুজব-অপপ্রচারের মাধ্যমে আমাদের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করবে এ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা।
প্রশিক্ষণ কর্মশালা পরিচালনা করা সিআরআই’র কো-অর্ডিনেটর ইঞ্জিনিয়ার তন্ময় আহমেদ বলেন, সারাদেশে আমাদের এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা চলমান। এর অংশ হিসেবে আজ ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদকদের নিয়ে কর্মশালা করা হচ্ছে। আগামীতে এ কর্মশালা ওয়ার্ড পর্যায়েও হবে।
আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর সভাপতির বক্তব্যে বলেন, দেশে উন্নয়নের ধারা চলমান রাখতে সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে। সঠিক তথ্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে।
উপ-কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. রনক আহসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. নজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েল ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এফ এম শরিফুল ইসলাম প্রমুখ।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন পৃথিবীর পট পরিবর্তন হয়েছে। সবকিছুই ভার্চ্যুয়ালমুখী হয়ে উঠেছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে কার্যক্রম পরিচালনাকারী আওয়ামী লীগের অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠন— ছাত্রলীগ যুবলীগের মতই অনলাইন কার্যক্রম পরিচালনাকারী অ্যাক্টিভিস্টের ভূমিকা হবার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বাইরের মত ভার্চ্যুয়ালি ক্ষমতা দখলের একটি অংশ হিসাবেই একে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, দীর্ঘ তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে বাইরের পরিস্থিতি আওয়ামী লীগের অনুকূলে নিয়ে আসতে পারলেও ভার্চ্যুয়ালে দলটি ব্যর্থ হয়। সরকারের পক্ষ থেকেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার বিভিন্ন কলাকৌশল অবলম্বন করলেও তা ভেস্তে যায়। ক’দিন আগেও আইসিটি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনার এখতিয়ারের বাইরে বলে জানান। তাই ভিন্ন কৌশলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ক্ষমতাসীন দলটি কর্তৃত্ব বজায় রাখার কৌশল হিসাবে মাঠে এক লাখ অ্যাক্টিভিস্ট নামাচ্ছে। যা দিন শেষে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মত সংগঠনগুলোর আগ্রাসী ভূমিকাই দেখাতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০০৭
আপনার মতামত জানানঃ