দিল্লিতে নয় বছরের বাচ্চা মেয়েকে শ্মশানঘাটে ধর্ষণ করার পর জ্বালিয়ে দেয়ার লোমহর্ষক অভিযোগ উঠেছে। নিহতের পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে ঘটনার প্রায় চব্বিশ ঘন্টা পর দিল্লি পুলিশ অভিযুক্ত এক পুরোহিত ও তার তিন সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে। দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির সেনানিবাস এলাকার পাশ ঘেঁষে রয়েছে একটি বাল্মিকী বস্তি; সেখানেই ঘটেছে এই ঘটনা।- সূত্র বিবিসি বাংলা।
রাধেশ্যাম নামে মূল অভিযুক্তক পুরোহিতকে সোমবার রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আটক হয়েছেন লক্ষ্মীনারায়ণ, কুলদীপ ও সালিম নামে তার তিন সঙ্গীকে। তাদের নামে বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যা, ভয় দেখানো ও প্রমাণ লোপাট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, পরিবারের সঙ্গে দিল্লির ক্যান্টনমেন্ট অঞ্চলের পুরানা নঙ্গল এলাকায় থাকত ওই শিশু। রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টার দিকে সে মাকে বলে শশ্মানযাত্রীদের জন্য বসানো কুলার থেকে পানি আনতে গিয়েছিল। বেশ কিছুক্ষণ পরেও সে না ফেরায় চিন্তা করছিলেন মা। পরে শ্মশানের পুরোহিত রাধে শ্যাম কয়েক জন লোককে দিয়ে ডেকে পাঠান মাকে। শিশুটির মরদেহ দেখিয়ে বলেন, কুলার থেকে বিদ্যুতে শক খেয়ে মারা গেছে সে।
শিশুটির মা পুলিশকে জানিয়েছেন, তার মেয়ের ডান হাতের কবজি থেকে কনুই পর্যন্ত পোড়া দাগ ছিল। ঠোঁটও নীল হয়ে গিয়েছিল। পুরোহিত তাকে পুলিশে না জানানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, এতে ঝামেলা বাড়বে। দেহ নিয়ে গিয়ে ময়না তদন্ত করবে পুলিশ। মর্গ থেকে তার নানা প্রত্যঙ্গ চুরি করে নেবে। এর চেয়ে চুপিচুপি সৎকার করা ভালো।
শিশুটির অভিভাবকরা পুরোহিতের কথা না শুনে কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রতিবেশীদের খবর দেন। তারা ওই শশ্মান ঘিরে ফেলেন। পুলিশেও অভিযোগ করে শিশুটির পরিবার। দিল্লির দক্ষিণ-পশ্চিম জেলা পুলিশে এই অভিযোগ করা হয়েছে।
প্রতাপ সিং নামের পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রোববার রাত সাড়ে ১০টায় তাদের কাছে একটি ফোন আসে। প্রায় ২০০ লোক শ্মশানে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন শুনে তারা ঘটনাস্থলে যান। সেখানেই মেয়েটির মায়ের বয়ান রেকর্ড করা হয়। মেয়েটিকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, এমন অভিযোগ পরিবারের।
এদিকে, পুরানা নাঙ্গাল নামে ওই এলাকায় অবশ্য এখনও পুলিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র। অনেকেই বলছিলেন, চার জন অভিযুক্তকে পুলিশই জিপে করে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে এবং তারা গরিব ও বাল্মিকী বলেই বিচার পাচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, নিহত মেয়েটির মা-বাবাকে থানার ভেতরেই উল্টে মারধর করা হয়েছিল।
এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পুলিশের মদতেই ওই শ্মশানঘাটে বহুদিন ধরে চলছিল জুয়া, মদ্যপান ও নানা অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া।
এই মুহুর্তে অভিযুক্তদের মৃত্যুদন্ড ছাড়া তারা যে কোনও শাস্তিতেই সন্তুষ্ট হবেন না বাল্মিকীরা সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন। পুরোহিত ও তার সঙ্গীদের ফাঁসির দাবিতে পুরানা নাঙ্গাল সরব হলেও দিল্লি সরকারের ক্যাবিনেট মন্ত্রী রাজেন্দ্র গৌতম ওই বস্তিতে গিয়ে কথা দিয়ে এসেছেন দোষীদের অবশ্যই উপযুক্ত শাস্তি হবে।
গৌতম বলেছেন, দেশের রাজধানীতে এমন ঘটনা ভাবাই যায় না। উত্তরপ্রদেশের দেহাত অঞ্চলে শোনা যায় ভিক্টিমের পরিবারকেই ভয় দেখিয়ে বয়ান বদলাতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু দিল্লিতেও কেন এ জিনিস ঘটবে?
তিনি বলেন, যদিও দিল্লিতে আইন-শৃঙ্খলা আর পুলিশ রাজ্য সরকারের হাতে নেই, তবু নির্দিষ্ট সময়ের ভেতর দোষীরা যাতে সাজা পায় আমরা তা নিশ্চিত করব।
তবে দলিত সংগঠনগুলি প্রশ্ন তুলছে, এমন পাশবিক ঘটনাতেও দিল্লির প্রতিবাদ স্তিমিত কেন। ভীম আর্মির নেতা হিমাংশু বাল্মিকী বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, ‘এ দেশে একটা গরু মরলেও মিডিয়া থেকে আরএসএস হইচই শুরু করে দেয়, কিন্তু এখন তারা চুপ কেন।’
তিনি বলেন, ‘অভিযুক্ত মুসলিম হলে বিজেপি এতক্ষণে কী করত ভাবুন তো? দশ মাইল দূরে পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছে, কারও মুখে একটা আওয়াজ পর্যন্ত নেই। এই মেয়েটি দলিত না হলে সব বড় দলের নেতাদের তো এখানে এসে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা দেওয়ার হিড়িক পড়ে যেত! আমাদের বস্তিতে আসতে ওনাদের কী নাকে দুর্গন্ধ লাগে?’
প্রায় নয় বছর আগে দিল্লিতে ‘নির্ভয়াকাণ্ড’ নামে পরিচিত ধর্ষণ মামলায় নিহত মেয়েটি যে উচ্চবর্ণের ছিল এবং গোটা দিল্লি যে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল, দলিত নেতারা সখেদে সেটাও আজ মনে করিয়ে দিচ্ছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২৫৭
আপনার মতামত জানানঃ