দেশে যক্ষ্মায় আক্রান্ত চিকিৎসাধীন ১২ হাজার রোগীর মধ্যে ১২ জন প্রাণঘাতী এইচআইভি/এইডস রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান (নিপসম)। সম্প্রতি তাদের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ সোমবার (২৮ জুন) বেলা ১১টায় নিপসম কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ। তিনি এই গবেষণায় প্রধান গবেষক হিসেবে ছিলেন। সাংবাদিকরা ভার্চুয়ালি সভায় যুক্ত হন।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) অংশ হিসেবে বাংলাদেশ যক্ষ্মা ও এইডস রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশে এইডসের প্রাদুর্ভাব নিম্ন পর্যায়ে। কিন্তু, যক্ষ্মা রোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের একটি এবং বৈশ্বিক যক্ষ্মা রোগীর তিন দশমিক ছয় শতাংশ এখানেই থাকেন।
এইডস আক্রান্ত মানুষদের যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। কারণ, এইডস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেওয়ার কারণে যক্ষ্মার জীবাণুর বিরুদ্ধে মানবদেহ সঠিক সুরক্ষা পায় না। বৈশ্বিকভাবে এইডস রোগে আক্রান্ত মানুষদের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ যক্ষ্মা।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে চিকিৎসাধীন ১২ হাজার যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত পাওয়া গেছে ১২ জন। প্রতি হাজারে এ সংখ্যা একজন। এদের মধ্যে পুরুষ ৬৫ শতাংশ, নারী ৪৩.০৮ শতাংশ এবং তৃতীয় লিঙ্গ ০.২ শতাংশ। দেশে ৩৫ লাখের অধিক যক্ষ্মা রোগী রয়েছে। গত বছরই ৩ লাখ নতুন করে যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
গত বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালনা করা হয়েছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসাধীন রোগীদের কাছ থেকে এই তথ্য নেওয়া হয়েছে। ৯০ হাজার যক্ষ্মা রোগীর মধ্যে ১২ হাজারের অধিক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয় গবেষণার জন্য।
গবেষণায় উঠে আসছে, এইচআইভিতে আক্রান্তদের বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে।
যারা এইডস আক্রান্ত, তাদের মধ্যে ৮৩ শতাংশ ফুসফুসের যক্ষ্মায় ভুগছেন। পরিবহন শ্রমিক ও দিনমজুরদের মধ্যে এইডসের প্রাদুর্ভাব বেশি বলে জানাচ্ছে এই গবেষণা প্রতিবেদন।
নিপসমের পরিচালক অধ্যাপক বায়জীদ খুরশীদ বলেন, ‘যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে যদি এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যায় তবে চিকিৎসায় মারাত্মক ব্যাঘাত তৈরি করবে। দেশে যক্ষ্মা রোগীদের মাত্রা শূন্য দশমিক শূন্য ১ ভাগ এইচআইভিতে আক্রান্ত, যা মোট জনগোষ্ঠীর তুলনায় অনেক কম, এটা স্বস্তিদায়ক।
তিনি বলেন, ‘গবেষণায় উঠে আসছে, যারা এইচআইভিতে আক্রান্ত তাদের বয়স ৩৫ থেকে ৪৪ বছরের মধ্যে, এটা চিন্তার বিষয়। কারণ এই বয়সটা নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ, অর্থনৈতিকভাবে উৎপাদনশীল।’
অধ্যাপক ডা. বায়জীদ খুরশীদ রিয়াজ বলেন, যক্ষ্মা রোগীদের মধ্যে কী পরিমাণ এইচআইভি/এইডসে আক্রান্ত রোগী রয়েছে এটা জানা যক্ষ্মা রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই কারণেই জরিপ করা হয়েছে। জরিপটি গত বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে করা হয়েছে। রোগীর মধ্যে ১২ হাজারের অধিক রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. শামিউল ইসলাম।
১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইচআইভিতে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ১০, ২০, ১০০ বা ২০০ জন করে নতুন রোগী প্রতিবছর শনাক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালে নতুন রোগী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৯ জনে। এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম এক রোগী মারা যান ২০০০ সালে। ২০১৮ সালে একই রোগে মৃতের সংখ্যা ১৪৮। ২০১৯ সালে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯০১
আপনার মতামত জানানঃ