গাজীপুরের টঙ্গী থেকে মাদক বিক্রির অভিযোগে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (২৮ এপ্রিল) সকালে তাকে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) দিবাগত রাতে রেজাউলকে হিমারদীঘি কেরানিরটেক বস্তি এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল করিম (৩২) টঙ্গীর নোয়াগাঁও হিমারদীঘি এলাকার হোসেন আলীর ছেলে। তিনি টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
জানা গেছে, গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ গোপন খবরের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) মধ্যরাতে ছাত্রলীগ নেতা রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কক্সবাজার থেকে মাদক এনে টঙ্গীর বিভিন্ন কারবারির হাতে পৌঁছে দিতেন তিনি। থানায় রিমান্ডে থাকা আসামি জাকির হোসেন নামে এক মাদক ব্যবসায়ী পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তিনি ছাত্রলীগ নেতা রেজাউলের কাছ থেকে মাদক নিয়ে খুচরা বিক্রি করতেন।
সম্প্রতি সাজ্জাদুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ীর কাছে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন ছাত্রলীগের এই নেতা। ভুক্তভোগীর স্ত্রী শিল্পী আক্তার এই ঘটনায় বাদী হয়ে টঙ্গী পশ্চিম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলায় ও মাদক ব্যবসার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার ইলতুৎমিশ বলেন, রেজাউলের বিরুদ্ধে টঙ্গী পশ্চিম থানায় চাঁদাবাজির মামলা আছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রেজাউলকে মহানগরের টঙ্গীপূর্ব থানাধীন দত্তপাড়া এলাকায় তার নিজের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উপকমিশনার ইলতুৎমিশ বলেন, একই দিন নবীন হোসেন নামে একজন মাদক কারবারিকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ৭৭০ গ্রাম গাঁজা ও ৫০০টি ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে নবীন পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন যে ওই ৫০০ ইয়াবা বিক্রির উদ্দেশ্যে রেজাউল করিম তাকে সরবরাহ করেছেন। আজ সকালে রেজাউল করিম ও নবীন হোসেনকে গাজীপুর আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
বাসের টিকিট বিক্রেতা থেকে কোটিপতি ছাত্রলীগ নেতা
এর আগে চার বছরে মাদক ব্যবসা করে কোটিপতি বনে গেছেন বলে অভিযোগ উঠে এক সময় পড়াশোনার খরচ চালাতে বাসের টিকিট বিক্রি করা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে। তিনি একাধারে গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক। রাজধানী–সংলগ্ন শিল্পনগরী টঙ্গীর ব্যবসায়ীরা রেজাউলকে এক নামেই চেনেন। পুলিশের সঙ্গেও সম্পর্ক বেশ ভালো। আগে থেকেই ফুটপাত ও ঝুট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা নিতেন বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও টঙ্গীর মাদক ব্যবসার পুরো নিয়ন্ত্রণ তারই দখলে।
টঙ্গীর ব্যাংকের মাঠ বস্তি ও কেরানীর টেক বস্তি এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন সাঈদা বেগম। সম্প্রতি তিনি ইয়াবাসহ ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাকে ঘিরেই রেজাউলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত বলে জানা গেছে। সাঈদা বেগম বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এরপরই সাঈদার সঙ্গে রেজাউলের কথোপকথনটি প্রকাশ্যে আসে। ওই কথোপকথনে কক্সবাজার থেকে আনা রেজাউলের এক লাখ ইয়াবা বেহাত হওয়ার জন্য সাঈদাকেই দায়ী করেন এ ছাত্রলীগ নেতা।
গাজীপুরের টঙ্গীর হিমারদিঘী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রেজাউলের বাবা আগে টঙ্গী রেলস্টেশনের পাশে কাপড় সেলাইয়ের কাজ করতেন। চার ভাই–বোনের মধ্যে সবার ছোট রেজাউল পুবাইল আদর্শ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৭ সালে টঙ্গী সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হওয়ার পর পড়ালেখার খরচ জোগাতে রেজাউল করিম বাস কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করতেন তিনি। তখনই মাদক ব্যবসায় যুক্ত হন।
টিকিট বিক্রির পাশাপাশি ফেনসিডিলও বিক্রি শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে সাবেক টঙ্গী মডেল থানায় ফেনসিডিল ব্যবসার অভিযোগে মামলাও হয়েছিলো। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। হাতে টাকা আসতে থাকলে একের পর এক দরজা খুলতে শুরু করে। গাজীপুরের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে টঙ্গী সরকারি কলেজের সাধারণ সম্পাদক হন। টিকিট বেচা বাদ দিয়ে কেবলই মাদক বিক্রি শুরু করেন। খুচরা মাদক বিক্রেতা থেকে এখন তিনি টঙ্গী এলাকার ইয়াবা ব্যবসার নিয়ন্ত্রক বলে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে।
পাঁচ বছর আগে বিয়ে করেন। একটি মেয়েও রয়েছে। ছাত্রত্ব নেই অনেক দিন। তবু ছাত্রলীগের পদ ধরে রেখেছেন। দত্তপাড়া এলাকায় আড়াই কাঠা জমির ওপর গড়েছেন অট্টালিকা। এ ছাড়া পরিবহন ও ঝুট ব্যবসায়ও রয়েছে তার বিনিয়োগ। চাঁদাবাজিতেও সিদ্ধহস্ত ছাত্রলীগের এই নেতা।
টঙ্গী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, তাদের কমিটি অনেক আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে। একসঙ্গে রাজনীতি করলেও রেজাউলের মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগে মাদক কারবারিদের স্থান নেই। তার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। তদন্ত করে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩০
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ