বিশ্বে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ঠিক মহামারির এমন সময়ে উল্টো পথে হাঁটছে ইসরাইল। দেশটি রোববার (১৮ এপ্রিল) বাইরে মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে। পাশাপাশি পুনরায় স্কুল, বার, রেঁস্তোরা খোলার অনুমতি দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ৯৩ লাখ জনসংখ্যার দেশ ইসরায়েলে কোভিড ১৯ সংক্রমণ মোকাবিলায় জোরদার টিকাদান কর্মসূচি পরিচালিত হচ্ছে। এরই মধ্যে ফাইজারের দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন ৫৪ শতাংশ নাগরিক, পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা অনেক কমে এসেছে দেশটিতে।
ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খোলা জায়গায় বা রাস্তায় মাস্ক পরতে হবে না। কেবল আবদ্ধ পাবলিক প্লেস বা গণজমায়েতে মাস্ক পরতে হবে। তবে কারো নিজের বাসায় বা যেখানে বেশি মানুষ নেই, সেখানে মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। সেজন্য বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় নাগরিকদের মাস্ক সঙ্গে রাখারও পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
শুরুতেই ডে-কেয়ার থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীকে গতকাল থেকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। দীর্ঘ বন্ধের পর স্বাভাবিক স্কুলে ফিরতে একটি কাঠামোবদ্ধ পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়েছে, সপ্তাহে ছয়দিন ক্লাস হবে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী কারো চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না। তবে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে বা ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে পুরো প্রক্রিয়াটি নজরদারির মধ্যে থাকবে বলেও জানানো হয়েছে। স্কুলগুলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। যেমন ব্যক্তিগত সুরক্ষা বজায় রাখা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, শ্রেণীকক্ষে মাস্ক পরা, কক্ষগুলোতে যথাযথ বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা ও বিরতির সময়ও প্রয়োজনীয় দূরত্ব মেনে চলা।
শিক্ষার্থীদের স্কুলের খোলা জায়গায় মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। এমনকি খাওয়ার সময় বা জিম ক্লাস করার সময়ও মাস্ক বাধ্যতামূলক নয়। যেহেতু এ শিশুরা টিকার আওতায় আসেনি, তাই তাদের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বেশি সচেতন থাকতে শিক্ষক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এছাড়া গত এক বছরের মানসিক, সামাজিক ও শিক্ষায় যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিতে পারবেন বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে কোনো শিক্ষার্থীকে একাকী বা দলগতভাবে শিক্ষা দেয়া যাবে। এক চিঠিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, করোনাভাইরাসের আতঙ্ক এখনো কাটেনি। কিন্তু এখন সবাইকে নিজের মতো করে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার সুযোগ দেয়া উচিত।
স্কুল খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে ইসরায়েল কিছু যুক্তি দেখিয়েছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, মহামারীর কারণে গৃহবন্দি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মোটরনিউরন দক্ষতা ও শারীরিক কর্মদক্ষতা কমে গেছে। এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী মানসিক অস্থিরতায় ভুগছে। তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে আগের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক মিশেল গ্রিনস্টেইনের গবেষণা বলছে, প্রতি পাঁচজনে একজন শিশুর মধ্যে উত্কণ্ঠা বা অ্যাংজাইটির লক্ষণ দেখা গেছে। করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট সমস্যার কারণে দেশটির মোট শিশুর অর্ধেকেরই মনস্তাত্ত্বিক সাহায্য প্রয়োজন।
মাস্ক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও বিদেশীদের ইসরায়েলে প্রবেশ এখনো সীমিত। টিকা নেননি এমন ইসরায়েলিরা দেশে ফিরলে তাদের বাধ্যতামূলকভাবে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। এর কারণ হলো বিদেশ থেকে আগতদের মাধ্যমে দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্টের ভাইরাসের প্রবেশ ঠেকানো। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, এরই মধ্যে সাতজনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনয়ামিন নেতানিয়াহু বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, বিশ্বে তারাই প্রথম এসব পদক্ষেপ নিয়েছেন। তবে করোনাভাইরাস নির্মূল হয়ে গেছে এমন কথা বলা যাবে না, এটি আবার ফিরে আসতে পারে।
করোনায় মৃত্যু ৩০ লাখ ছাড়াল
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে ৩০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে প্রথম করোনার অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। এরপর প্রতিদিনই বাড়ছে করোনার সংক্রমণ; বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। এশিয়ার দেশ ভারতে ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্তে রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। শনিবার দেশটিতে দুই লাখ ৩০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে। বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়ানোর পাশাপাশি শনাক্তও ১৪ কোটি ছাড়িয়ে গেছে।
জনস হপকিন্সের তথ্যমতে, এখন বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত শীর্ষ তিন দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও চীন। এই তিন দেশে মৃতের সংখ্যা সবমিলিয়ে ১০ লাখ ছাড়িয়েছে। আর গত সপ্তাহে প্রতিদিন বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাসে। শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, ‘নতুন শনাক্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি সপ্তাহে নতুন শনাক্ত হওয়ার সংখ্যা গত দুইমাসে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।’যুক্তরাষ্ট্র, ভারত আর ব্রাজিলে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
ভারতেই শুধুমাত্র শুধুমাত্র শনিবার ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির তথ্য অনুযায়ী, গত সপ্তাহে বিশ্বে প্রতিদিন প্রায় ১২ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে।তবে বিশ্বের অনেক দেশেই শনাক্ত ও মৃত্যুর সরকারি তথ্য সঠিকভাবে পাওয়া যায় না।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৪৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ