করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে মসজিদ কিংবা অন্যান্য উপাসনালয়ে নামাজ ও প্রার্থনার আগে ও পরে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। বুধবার (৭ এপ্রিল) ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের সব মসজিদে জুমা ও ওয়াক্তের নামাজ এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনার আগে ও পরে গণজমায়েত নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। সঙ্গে আরও কিছু শর্ত প্রতিপালনের জন্য ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সব ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিকে অনুরোধ করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে-
১. জুমা ও অন্যান্য ওয়াক্তের নামাজ এবং প্রার্থনার আগে ও পরে মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে কোনো প্রকার সভা ও সমাবেশ করা যাবে না।
২. মসজিদে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তারাবিসহ অন্যান্য নামাজ আদায় করতে হবে এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে প্রার্থনা করতে হবে।
৩. এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ২৯ মার্চের (২০২১) প্রজ্ঞাপন এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ৪ এপ্রিলের (২০২১) নির্দেশনা মোতাবেক ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৫ এপ্রিল জারি করা সব নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে মেনে চলতে হবে।
এসব নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ের পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য বলা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার (৫ এপ্রিল) মসজিদে জামায়াতে নামাজের জন্য আবশ্যিকভাবে পালনীয় মোট ১০টি নির্দেশনা জরুরি বিজ্ঞপ্তি আকারে জারি করে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে-
১. মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে এবং আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে।
২. প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে, সুন্নত নামাজ ঘরে আদায় করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।
৩. মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবানুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে, মুসল্লিদের নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসতে হবে।
৪. কাতারে নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
৫. শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যেকোনো অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি জামায়াতে অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবেন।
৬. সংক্রমণ রোধ নিশ্চিতে মসজিদের ওযুখানায় সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না।
৭. সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিতে, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
৮. মসজিদে ইফতার ও সেহরির আয়োজন করা যাবে না।
৯. করোনাভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নামাজ শেষে মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে খতিব ও ইমামরা দোয়া করবেন।
১০. সম্মানিত খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলো বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে উল্লেখিত নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে স্থানীয় প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনী, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সংশ্লিষ্ট মসজিদের পরিচালনা কমিটিকে উল্লিখিত নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ জানানো হলো।
গত বছর এপ্রিলের প্রথম দিকে ঘরে নামাজ পড়ার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয় যে, দৈনিক জামায়াতে সর্বোচ্চ পাঁচ জন এবং জুম্মার নামাজে সর্বোচ্চ ১০ জন মুসল্লি অংশ নিতে পারবেন। এর কিছুদিন পর রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করার ওপরও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তারাবির নামাজে সর্বোচ্চ ১২ জন অংশ নিতে পারবেন বলে জারি করা হয়েছিল নির্দেশনা।
এদিকে, করোনার বিরুদ্ধে সতর্কতা হিসেবে রমজান মাসে সৌদি আরবের মসজিদ ও তার আশেপাশে একযোগে ইফতার ও সেহেরি না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কোনো মসজিদেই এতেকাফে বসা যাবে না। রমজানের শেষ ১০ দিন আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একা একা এবাদত-বন্দেগী করে কাটানোর রীতিকে এতেকাফ বলে। দেশটির ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল লতিফ আল-শেখ মঙ্গলবার এইনির্দেশনা দেন। সৌদি গেজেটে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
এসব নির্দেশনা সংবলিত বিজ্ঞপ্তি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সারা দেশের সব মসজিদে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বিজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এই পদক্ষেপগুলো নিয়েছে মন্ত্রণালয়। নির্দেশনায় ঈদের জামাতের স্থান না বাড়ানোর জন্যও বলা হয়েছে। আর বলা হয়েছে, তারাবিসহ অন্যান্য নামাজের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আরও সাত হাজার ৬২৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গতকালও অতীতের রেকর্ড ভেঙে সাত হাজার ২১৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। আজ সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড হলো। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। মোট শনাক্ত হয়েছেন ছয় লাখ ৫৯ হাজার ২৭৮ জন।
এ নিয়ে টানা চতুর্থ দিন দৈনিক সাত হাজারে বেশি রোগী শনাক্ত হলো। গত ৪ মার্চ সাত হাজার ৮৭ জন ও ৫ মার্চ সাত হাজার ৭৫ জন শনাক্ত হয়েছিল। একই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৬৩ জন। গতকাল ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন নয় হাজার ৪৪৭ জন।
আজ বুধবার দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত অ্যান্টিজেন ও আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে ৩৪ হাজার ৬৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে করোনায় আক্রান্ত আরও সাত হাজার ৬২৬ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২২ দশমিক ০২ শতাংশ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৪৫
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ