খুলনায় বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদুর কুশপুত্তলিকাদাহ করার সময় ভুল করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের লাঠিচার্জ করায় সদর থানার দুই উপপরিদর্শককে (এসআইকে) প্রত্যাহার করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন সদর থানার এসআই মিয়া রব ও এসআই মোমিনুর রহমান। বুধবার ( ৩ মার্চ) বিকালে নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেককে নিয়ে অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদে বুধবার বিকেল ৫টায় বিক্ষোভ মিছিল এবং পিকচার প্যালেস মোড়ে শামসুজ্জামান দুদুর কুশপুত্তলিকা দাহ কর্মসূচি ঘোষণা করে নগরীর ২১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ। নির্ধারিত সময়ে মিছিলটি শুরু হয়। এতে ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগ নেতা শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন, আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিক্ষোভ এবং তার কারণে সৃষ্ট যানজটের কথা শুনে সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়। যেহেতু মহানগর ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাই পুলিশ ভেবেছিল, বিএনপির কোনো কর্মসূচি। সঙ্গে সঙ্গেই তারা লাঠিপেটা শুরু করে। কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের বিক্ষোভের কথা জানতে পেরে তারা সেখান থেকে চলে যায়।
আওয়ামী লীগ এবং পুলিশ- দুই পক্ষ থেকেই এটাকে ‘ভুল বুঝাবুঝি’ আখ্যা দেওয়া হলেও পার পাননি দুই পুলিশ সদস্য। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে খুলনা সদর থানার এসআই মিয়া রব ও এসআই মোমিনুর রহমানকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
স্থানীয় কাউন্সিলর আ’লীগ নেতা শামসুজ্জামান মিঞা স্বপন বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি খুলনায় বিএনপির মহাসমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও পুলিশ নিয়ে অশালীন বক্তব্য দেন। এই বক্তব্য নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করছে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতারা। যার অংশ হিসাবে ২১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের প্রতিবাদ বুধবার নগরীর হেলাতলা থেকে শুরু হয়। প্রতিবাদ মিছিলটি হেলাতলা হয়ে থানার মোড় হয়ে সোসাইটির মোড়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
সেখানে বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু’র কুশপুত্তলিকার পোড়ানো ও প্রতিবাদ সমাবেশ করার কথা ছিল। কিন্তু থানার মোড়ে যানজট থাকায় কে ডি ঘোষ রোডের বিএনপি অফিসের আগে সমাবেশ শুরু করে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা। এ সময় কয়েকজন পুলিশ সদস্য এসে নেতা কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে। তখন পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় চারপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। এ সময় পুলিশের উদ্ধর্তন কর্মকর্তা ও স্থানীয় কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগের নেতারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শামসুজ্জামান মিঞা স্বপন আরও বলেন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে অনুমতি নেন কর্মসূচি পালনের। তারপরও ঐখানে পুলিশের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা আমাদের নেতা কর্মীদের উপর লাঠিচার্জ করে। পরে অবশ্য এটি ভুল হয়েছে বলে দুঃখ প্রকাশ করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, বিএনপি অফিসের সামনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে হাতাহাতি হয়েছিল। এতে আমাদের অফিসের কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সামনের অংশের বেড়া ভেঙে গেছে।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশরাফ হোসেন বলেন, দলীয় কার্যালয়ের সামনে অনুমতি ছাড়াই বিএনপি নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন হচ্ছে ভেবে পুলিশ কর্মকর্তারা বাঁধা দিতে যায়। এ সময় কিছুটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। ওই দুই এসআইকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, পুলিশ দিয়ে বিরোধী দলের উপর নির্যাতন, জুলুম আমাদের দেশের জন্য স্বাভাবিক দৃশ্য। রাষ্ট্র ক্ষমতায় যে দল থাকুক না কেন, তারা পুলিশ বাহিনী দিয়ে অন্যায়ভাবে বিরোধীপক্ষের উপর নির্যাতন, জুলুম চালিয়ে আসছে। এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে বের হবার জন্য কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান তারা। আইনের রক্ষক হয়ে যদি তা লঙ্ঘন করেন তবে সেটা অন্যদের নিকট গ্রহণযোগ্যতা হারায়। তারা বলেন, দেশে পুলিশের বিরুদ্ধে এতো এতো অভিযোগ আসে যে, সন্ত্রাসীদের চেয়ে পুলিশ নিয়ে ভাববার সময় চলে এসেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১০
আপনার মতামত জানানঃ