চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করার গতকাল শনিবার ১১০ পার হলেও সেটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়নি। কারণ ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের মূল অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেও লালখান বাজার প্রান্তের উঠানামার পথ বা র্যাম্প এখনো প্রস্তুত হয়নি। সেখানে কাজের ধীরগতির কারণে দেওয়ান হাট মোড় থেকে টাইগার পাস হয়ে লালখান বাজার অংশে তীব্র যানজট এখন জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর আগ্রাবাদ থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত অংশে অন্য ১৪টি র্যাম্প নির্মাণ কাজ এখনো পুরোদমে শুরুও করা যায়নি। এ যেন- ‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ।’
তবে র্যাম্প ছাড়াই চলতি মাসে এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার তোড়জোড় চলছে। এ অবস্থায় এটি চালু হলেও শুধু বিমান বন্দর এবং পতেঙ্গাগামী হাতে গোনা কিছু যানবাহন চলাচল করতে পারে। এতে সোয়া চার হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই এক্সপ্রেসওয়ের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে সময় লেগে যাবে আরো বছর দেড়েক। এক্সপ্রেসওয়েতে উঠানামার র্যাম্পের কাজে হাতই দেওয়া যায়নি। সেগুলোর কাজ শেষ হতে হতে ২০২৫ সালের শেষ প্রান্তিকে গিয়ে ঠেকবে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- সিডিএর যে কয়টি মেগা প্রকল্প দফায় দফায় সময় এবং ব্যয় বাড়ানো হয়েছে এটি তার অন্যতম। তিন বছরের প্রকল্প ছয় বছরেও শেষ হয়নি। বন্দর নগরীর প্রধান সড়কে নির্মাণাধীন এই প্রকল্প কাজে ধীরগতির কারণে বিগত ২০১৯ সাল থেকে চরম দুর্ভোগ মোকাবিলা করতে হয়েছে নগরবাসীকে। এমন একটি উন্নয়ন প্রকল্প পুরোপুরি শেষ না করেই বাহবা পেতে ভোটের আগে উদ্বোধন আবার উদ্বোধনের চার মাসেও কাজ শেষ করতে না পারায় জনমনে অসন্তোষ রয়েছে।
এদিকে চলতি মার্চে যান চলাচল উন্মুক্ত হলে চলাচলের জন্য দিতে হবে টোল। তবে কোন যানবাহনের জন্য কত টাকা দিতে হবে, তা এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। টোল প্লাজা নির্মাণও শেষ হয়নি। চার হাজার ২৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর পর্যন্ত এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য ১৬ কিলোমিটার। আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র চট্টলবীর মরহুম এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে এ উড়াল সড়ক গত ১৪ নভেম্বর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেদিন কিছু সময়ের জন্য বিমানবন্দর থেকে টাইগারপাস অংশে যান চলাচল করলেও পরে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর মাস দুয়েক সময়ে এক্সপ্রেসওয়ের মূল অংশে বাকি থাকা কিছু কাজ শেষ করা হয়েছে। বর্তমানে পতেঙ্গা প্রান্তে উঠানামার পথ এবং টাইগার পাস অংশে একটি নামার পথ রয়েছে। লালখান বাজার প্রান্তের উঠার পথ নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি। মূল কাজ শেষ হলেও উঠানামার পথ না থাকায় এক্সপ্রেসওয়েটি চালু করা যাচ্ছে না।
২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদন হওয়ার সময় ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি তিন বছরের মধ্যে শেষ করার সময় ঠিক করা হয়েছিল। তবে কাজ শুরু হতেই দেরি হয়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শুরু হলেও প্রধানমন্ত্রী নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। পরে ২০২২ সালে নকশা ‘সংশোধন’ করে আরো এক হাজার ৪৮ কোটি টাকা (আগের ব্যয়ের চেয়ে ৩২ শতাংশ) ব্যয় বাড়িয়ে মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তবে কাজের যে গতি তাতে পুরো কাজ শেষ হতে আরো দুই বছর লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, প্রকল্পের মেয়াদ আগামী ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। মেয়াদের পাশাপাশি ব্যয়ও আরো এক দফা বাড়তে পারে। কারণ এক্সপ্রেসওয়েতে উঠানামার জন্য র্যাম্পা রাখা হয়েছে ১৫টি। যার কোনটি এখনো নির্মাণ করা হয়নি। সবচেয়ে বেশি চারটি র্যাম্প থাকছে আগ্রাবাদে। সেগুলোর মধ্যে জাতিতাত্ত্বিক জাদুঘর সড়কে একটি, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার সড়কে একটি এবং আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে হবে দুটি। টাইগারপাস, নিমতলা, সিইপিজেড ও কর্ণফুলী ইপিজেড এলাকায় র্যাম্প থাকছে দুটি করে। জিইসি মোড়ে হোটেল পেনিনসুলা, ফকিরহাটে ও সিমেন্ট ক্রসিং এলাকায় থাকছে একটি করে র্যাম্প। এক্সপ্রেসওয়ে চালুর পর এসব উঠানামার পথ নির্মাণ করা হবে। উড়াল সড়কটি বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ইপিজেড-বন্দর-বারেক বিল্ডিং-চৌমুহনী হয়ে দেওয়ানহাট রেলসেতুর পশ্চিম পাশ দিয়ে পাহাড় ঘেষে টাইগার পাস মোড়ের পর মূল সড়কের ওপর দিয়ে লালখান বাজার মোড় পেরিয়ে ওয়াসার মোড়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গিয়ে মিলেছে।
এই অংশে এখন এক্সপ্রেসওয়েতে উঠার পথ নির্মাণ কাজ চলছে। কাজের ধীরগতির কারণে এই এলাকায় তীব্র যানজটে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। পবিত্র রমজানের আগে কাজ শেষ না হলে দুর্ভোগ আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে সিডিএর কর্মকর্তাদের প্রত্যাশা রোজার আগেই কাজ শেষ হবে। এরপর এক্সেপ্রেসওয়ে খুলে দেয়া হবে।
আপনার মতামত জানানঃ