নির্বাচন এলেই বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেপ্তারের হিড়িক পড়ে। এবারো এর ব্যতিক্রম ছিল না। সরকার পতনের একদফা দাবিতে বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে নামার সঙ্গে সঙ্গেই দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় মামলা-গ্রেপ্তার। গত বছরের ২৮শে অক্টোবরের আগে ও পরে কারাগারে ১৫ জন নেতাকর্মী মারা যাওয়ার অভিযোগ করেছে দলটি। বিএনপি জানিয়েছে, ২৮শে অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত দেশের ১০টি বিভাগে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ হাজার ৬৪৫টির বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২৫ হাজার ৭১১ জনকে। এই নেতাকর্মীদের অনেকে এখনো কারাবন্দি। নির্বাচনের পর কিছু নেতাকর্মীর জামিন হচ্ছে।
আবার প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন জেলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রেপ্তার রয়েছে রাজশাহী বিভাগে। এই বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৫৫ জন নেতাকর্মীকে।
এরপরেই রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এই বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৪৮ জন নেতাকর্মীকে। তারপরে রয়েছে খুলনা বিভাগ। এই বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৫ জনকে।
এদিকে জামিনে মুক্তি পেলেও এসব মামলায় আদালতে হাজিরা দেয়াসহ নানা কারণে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মী গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়িঘর ছেড়ে এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন।
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন না করে ক্ষমতায় জোর করে থাকার জন্যই বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল সুনির্দিষ্ট অভিযোগে। নির্বাচনের সঙ্গে এসব গ্রেপ্তারের সম্পর্ক ছিল না।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ২৫৩টি, এসব মামলা এই বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৮৫৫ জন নেতাকর্মীকে। চট্টগ্রাম বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ২০৪টি, এসব মামলা এই বিভাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ হাজার ২০৫ জনকে। কুমিল্লা বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ১২১টি, এই বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৩১৯ জনকে।
রংপুর বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ১৩৭টি, এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৮৯৩ জনকে। ঢাকা বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ৪১২টি, এই বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪ হাজার ৬৪৮ জন নেতাকর্মীকে।
ফরিদপুর বিভাগে মামলা রয়েছে ৩৭টি, এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭০৫ জনকে। ময়মনসিংহ বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ১১১টি, এই বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ৩৮৪ জন নেতাকর্মীকে। বরিশাল বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ৭৪টি, এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৭৪৮ জনকে।
খুলনা বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ১৪১টি, এই বিভাগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৫ জনকে এবং সিলেট বিভাগে নেতাকর্মীদের নামে মামলা রয়েছে ১৫৫টি, এসব মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার ৩৭৯ জনকে।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, নির্বাচন এলেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিএনপি’র ওপর চালানো হয় ক্র্যাকডাউন। মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মীদের। জোর করে ক্ষমতায় থাকার জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও অত্যাচার চালানো হয়।
ওদিকে ২০০৯ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ৪২ হাজার ৮২৫টির বেশি মামলা হয়েছে বলে বিএনপি’র দপ্তর সূত্র জানিয়েছে। এসব মামলায় আসামির সংখ্যা ৫০ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৫ জনের বেশি।
আপনার মতামত জানানঃ