ক্যালিগুলা সিজারের আসল নাম ছিল গায়াস জুলিয়াস সিজার জার্মানিকাস। কেউ তাকে রোমের ঐতিহাসিক সম্রাট জুলিয়াস সিজারের সাথে মিলিয়ে ভুল করবেন না। কারণ, জুলিয়াস সিজার ছিলেন ক্যালিগুলার মহা-মহা-পিতামহ। ১২ খ্রিস্টাব্দের ৩১ আগস্ট রোমের সিজার ক্লডিয়ান পরিবারের নতুন সদস্য হিসেবে জন্ম নেন গায়াস সিজার। এই গায়াস সিজার পরবর্তীতে ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম পাকাপাকিভাবে লিখিয়ে নেন রোমের ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং অত্যাচারি শাসক হিসেবে।
তার শাসনামলের পুরোটা সময় জুড়ে তিনি জনতার মাঝে ত্রাস সৃষ্টি করে শাসন করেছিলেন। ‘মগের মুল্লুক’ কথাটির বাস্তবিক পরিণতি হয়েছিল ক্যালিগুলার রোমে। তিনি ছিলেন তার পিতা মহান জার্মানিকাস এবং মাতা আগ্রিপিনার ছয় সন্তানের মাঝে তৃতীয়। তিনি যখন জন্ম নেন তখন রোমের সম্রাট ছিলেন তার মহা পিতামহ অগাস্টাস সিজার।
তার পিতা জার্মানিকাস ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের জনপ্রিয় সেনাপতি। তাকে রোমের সাধারণ জনগণ মনেপ্রাণে ভালোবাসতো। জার্মানিকাস রোমান সেনাবাহিনী নিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযানে বের হতেন। তার সাথে থাকতেন তিন বছর বয়সী শিশু ক্যালিগুলা। ছোট বাচ্চারা যা দেখে, তাই অনুকরণ করতে ভালোবাসে। তাই কিশোর ক্যালিগুলাও সৈন্যদের দেখাদেখি পোশাক পরার বায়না ধরেছিলেন। জার্মানিকাস ছেলের বায়না মঞ্জুর করে তাকে পোশাক বানিয়ে দেন। পায়ে পরিয়ে দেন ‘ক্যালিগা’ নামক রোমান জুতা। ক্যালিগা পায়ে সৈন্যদের মাঝে ডানপিটে গায়াস সিজারের ছুটোছুটি ছিল বেশ পরিচিত দৃশ্য। এই ক্যালিগা থেকেই তাকে ধীরে ধীরে সবাই ক্যালিগুলা ডাকতে থাকে। যা পরবর্তীতে তার প্রচলিত ডাক নামে পরিণত হয়।
ক্যালিগুলার জন্মের দু’বছর পর ১৪ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যু হয় সম্রাট অগাস্টাস সিজারের। রোমের ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী এই সম্রাটের মৃত্যুর পর তার শূন্যস্থান পূরণ নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। অগাস্টাসের মৃত্যুর পূর্বেই প্রায় আধ-ডজন উত্তরাধিকারীর মৃত্যুর পর তখন বেঁচে ছিলেন তার সৎপুত্র টাইবেরিয়াস। অগাস্টাসের পর তিনি রোমের একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে মনোনীত হন।
সিংহাসনে বসেই তিনি তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং জনতার ভালোবাসার প্রতীক জার্মানিকাসকে পূর্ব প্রদেশের শাসনকার্যের ভার দিয়ে রোম থেকে দূরে সরিয়ে দেন। জার্মানিকাসের সাথে পূর্বে চলে যান ক্যালিগুলা। সেখানে যাওয়ার পর রহস্যজনকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন জার্মানিকাস। এই অসুখ থেকে তার মৃত্যু হয়।
স্বাভাবিকভাবে সন্দেহের তীর গিয়ে বিঁধে টাইবেরিয়াসের গায়ে। এখান থেকে শুরু হয় টাইবেরিয়াসের প্রতি রোমের জনগণের ঘৃণা। ক্যালিগুলার মা আগ্রিপিনাও এই তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি সরাসরি সম্রাটকে অপমান করে বসেন। সম্রাট ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে একটি ছোট দ্বীপে নির্বাসন পাঠিয়ে দেন। সেখানে অনাহারে দুর্বল হয়ে করুণ মৃত্যু ঘটে তার।
আগ্রিপিনার মৃত্যুর পর পরিস্থিতি যেন সম্রাটের নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেজন্য তিনি আগ্রিপিনার রেখে যাওয়া দুই জ্যেষ্ঠ ছেলেকে কারারুদ্ধ করেন। সেখানে একজন আত্মহত্যা করেন এবং অন্যজন অনাহারে মারা পড়েন। শুধু বেঁচে থাকেন ক্যালিগুলা এবং তার বোনেরা। নিতান্ত কিশোর বয়সের ক্যালিগুলাকে মেরে সময় এবং শক্তির অপচয় করতে চাননি সম্রাট।
ক্যালিগুলা বেঁচে থাকেন তার দাদি অ্যান্টোনিয়ার সাথে। এই সময়ে ক্যালিগুলার মাঝে কিছু অসামঞ্জস্য ব্যবহারের লক্ষণ দেখা যায়। যেমন, অনেক ইতিহাসবিদ ধারণা করেন, এই সময়ে তিনি তার বোন দ্রুসিলার সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হন। অবাক হলেও সত্য, কিশোর বয়সে ক্যালিগুলার এই রূপ অনেককেই ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো। পরবর্তীতে টাইবেরিয়াস স্বয়ং ক্যালিগুলার দেখভালের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সুদূর ক্যাপ্রিতে ক্যালিগুলাকে ডেকে পাঠান।
কিশোর বয়সে পরিবারের অভিভাবক সবাইকে হারিয়ে দিশেহারা ক্যালিগুলা তখন তারই পিতার হত্যাকারী সন্দেহভাজনের মাঝে আশ্রয় খুঁজে পান। তবে সেই আশ্রয় ছিল অনেকটা বন্দিদশার মতো। একজন রাজকুমার হয়ে বন্দি অপরাধীর ন্যায় জীবনযাপন ক্যালিগুলার মানসিক অবস্থাকে বিপর্যস্ত করে তুলে। ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকেন তিনি। একটা সময় দেখা গেলো তিনি অন্যের দুঃখে নির্লিপ্ত হয়ে আছেন।
এমনকি তিনি মঞ্চ নাটকের ন্যায় বন্দিদের অত্যাচারের দৃশ্য দেখে আনন্দ লাভ করতেন। ক্যালিগুলার চরিত্রের এই কঠোর রূপ দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিলেন টাইবেরিয়াস। তিনি এই সময়ে ক্যালিগুলা সম্পর্কিত তার বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন, “রোমের গর্ভে এক বিষধর সাপ বেড়ে উঠছে।” যা পরবর্তীতে অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণিত হয়।
ক্যালিগুলাকে বন্দি করার ছয় বছরের মাথায় সম্রাট টাইবেরিয়াস মারাত্মকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর আগেও সম্রাট বহুবার অসুস্থ হয়েছিলেন কিন্তু মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়েও ফিরে এসেছেন অলৌকিকভাবে। তাই সবাই ভাবলো, এবারও বেঁচে যাবেন ‘ঘাটের মরা’ সম্রাট। এদিকে রোমের অবস্থাও ভালো নেই। বিশৃঙ্খল সম্রাটের অধীনে ছন্নছাড়া রোম। তার মৃত্যুর মাধ্যমে সবাই এই অভিশাপ থেকে মুক্তি চায়। জনতার এই প্রার্থনা বুঝি কবুল হলো। ৩৭ খ্রিস্টাব্দে মৃত্যুবরণ করলেন টাইবেরিয়াস।
সম্রাটের মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি হিসেবে রোমের মসনদে আসীন হলেন গাইয়াস ক্যালিগুলা সিজার। কিন্তু এই মৃত্যু নিয়েও নানা গুজব রটিত হয়েছিলো। অনেকের মতে, সম্রাট অচেতন হয়ে পড়লে ক্যালিগুলা তাকে মৃত ভেবে নিজে সম্রাটের রাজ আংটি আঙুলে পরেছিলেন।
যেই না তিনি সিনেটরদের সম্রাটের মৃত্যুর খবর জানাতে যাবেন, তখন খবর আসলো, টাইবেরিয়াস মরেননি এবং তিনি তার আংটির খোঁজ করছেন। ক্রুদ্ধ ক্যালিগুলা তখন তার বিশ্বস্ত কমান্ডার মার্কোর সাহায্যে টাইবেরিয়াসকে হত্যা করে নিজের শাসনকালের সূচনা করেন। কিন্তু এই ঘটনা কতটুকু সত্য, তা নিয়ে তর্ক করা যায়। ক্যালিগুলা নিয়ে নির্মিত সিনেমা ও নাটকগুলোতে অবশ্য এই ঘটনাকে সত্য ধরে বেশ ফলাও করে চিত্রায়ন করা হয়েছে।
একপ্রকার পাগলামির মাধ্যমে যাত্রা শুরু করা ক্যালিগুলা শাসনকালের প্রথমদিকে জনতার সমর্থন জিতে নেন। তিনি জরুরি ফরমান জারি করে সকল নাগরিককে টাইবেরিয়াসের কারা থেকে মুক্তি দান করেন। আগের সম্রাটের জারি করা অতিরিক্ত কর মওকুফ করে দেন। তার এই ঘোষণায় রোম উল্লাসে ফেটে পড়ে। চারদিকে ধ্বনিত হতে থাকে, “জয় সিজারের জয়! জয় সম্রাটের জয়!”
ক্ষমতা গ্রহণের ছয় মাসের মাথায় হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। ঠিক যেমন টাইবেরিয়াস মরার আগে অসুস্থ হয়েছিলেন। সবাই ভাবলো এযাত্রায় বুঝি আর রক্ষা নেই। তারা সম্রাটের উত্তরসূরি গেমেলাসকে মানসিকভাবে সম্রাট হওয়ার জন্য প্রস্তুত করতে লাগলেন। কিন্তু এক মাসের পর ক্যালিগুলা সুস্থ হয়ে উঠলেন। যেন ‘পুনর্জন্ম’ হলো সম্রাটের। অবশ্য এই পুনর্জন্ম শুভ হলো না তার জন্য। তিনি যেন এক ভিন্ন ক্যালিগুলায় রূপান্তরিত হলেন। টাইবেরিয়াসের সেই বন্দি রাজকুমার ক্যালিগুলার মতো কিছুটা বিভ্রান্ত থাকতেন তিনি।
তিনি উপদেষ্টা হিসেবে তার চাচা ক্লডিয়াসকে নিযুক্ত করেন, যিনি তখন রোমে ভাঁড় হিসেবে পরিচিত ছিলেন। অনেকেই তার এই নিযুক্তিতে অবাক হলেও সম্রাটের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। এই ক্লডিয়াস একদিন লক্ষ করলেন, নিজের কক্ষে নারীর ভূষণে নাচছেন সম্রাট। ভয়ার্ত চোখে ক্লডিয়াস এই দৃশ্য অবলোকন করলেন। হয়তো তিনি তখন বুঝেছিলেন, পুনর্জন্ম হয়ে যে মানুষটি উঠে এসেছেন, তিনি আর তাদের সেই পুরাতন ক্যালিগুলা নন, ভিন্ন কোনো উন্মাদ মানুষ।
এই উন্মাদ সম্রাট নতুন ফরমান জারি করে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী সকলের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। এদের মধ্যে কিশোর গেমেলাসও ছিলেন। পাগলামির চূড়ান্ত করে তিনি তাদের পিতামাতার চোখের সামনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার হুকুম দেন। জল্লাদখানা অসহায় পিতামাতার কান্নায় ভারী হয়ে উঠলো। রোমের সেই ভারী বাতাসকে আরো ভারী করতে ক্যালিগুলা ঘোষণা করলেন, তিনি আর মানুষ নন, একজন দেবতায় রূপান্তরিত হয়েছেন। এখন থেকে রোমে তার পূজাও করতে হবে। এই উন্মাদনাকে বধ করতে তাকে বিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু সন্তান জন্ম দেওয়ার পরেও তার পাগলামি একটুও কমলো না। বরং বেড়ে গেলো কয়েকগুণ।
ক্যালিগুলা কারো ‘ভুলে যাওয়া’ সহ্য করতে পারতেন না। যেমন ধরা যাক জন্মদিনের কথা। সম্রাটের জন্মদিন ভুলে যাওয়ার অপরাধে দুই উপদেষ্টাকে কতল করেছিলেন তিনি। সিনেটর থেকে শুরু করে রাজপ্রাসাদের সবাই ভীত থাকতো, এই বুঝি তার মৃত্যু পরওয়ানা চলে আসলো। প্রশ্ন করতে পারেন, রোমের প্রজাতন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর সভা থাকতে ক্যালিগুলা কীভাবে এত মানুষের মৃত্যু পরওয়ানা জারি করেছিলেন? শাসনকালের শুরুর দিকে সম্রাট অনেকটা জনপ্রিয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তাকে রোমের প্রধান বিচারপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। নিজেকে দেবতা ঘোষণা করার পর সেটা অনেকটা দেবতার রায়ের মতো অখণ্ডিত হয়ে পড়ে। তাই অসহায় সিনেটরদের কিছুই করার ছিল না।
ক্যালিগুলা খরচ করতে ভালোবাসতেন। তার লাগামহীন খরচের ভারে নুইয়ে পড়েছিলো রোমান অর্থনীতি। কিন্তু সম্রাটের কাছে কেউ ভুলেও বলতে পারতো না যে, কোষাগারে একটি কড়িও বাকি নেই। তবে ক্যালিগুলা অর্থ ঘাটতির ব্যাপারটি নিজে থেকে বুঝতে পারলেন। সবাই ভাবলেন, এবার হয়তো সম্রাটের টনক নড়বে। কিন্তু কিসের কী? উল্টো ‘টনক’ নড়ার বদলে বাকি সবাইকে নাড়িয়ে দিলেন সম্রাট।
তিনি ঘোষণা করলেন অর্থ যোগানের জন্য এক রাজপতিতালয় খোলা হবে। সেখানে ১৪ বছর বয়সী তরুণী থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা পর্যন্ত সব রাজকীয় নারীদের বাধ্যতামূলক পতিতাবৃত্তি গ্রহণ করতে হবে দুই সপ্তাহের জন্য। যৌন বিকারগ্রস্ত জনতা লুফে নিলো সম্রাটের এই প্রস্তাব। অনেক নারী সম্মান বাঁচাতে আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। কিন্তু এখানেও লাভ হলো সম্রাটের। তিনি আত্মহত্যার অপরাধে সেই পরিবারের পুরো সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে দেন। শূন্য রাজকোষাগার আবার অর্থের ঝনঝনানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো।
নির্দয় ক্যালিগুলার হৃদয়ে বোধহয় একফোঁটা মমতাও ছিল না। কিন্তু এই ধারণা ভুল। নির্দয় ক্যালিগুলারও মায়া-মমতা ছিল। তার সব মায়া মমতা উৎসর্গ করেছিলেন তার ঘোড়া ইনসিটাটাসের প্রতি। কথিত আছে, এই ঘোড়াকে তিনি এতটাই ভালোবাসতেন যে, একবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একে রোমের সিনেটরের মর্যাদায় উত্তীর্ণ করবেন। কিন্তু এই কথার ঐতিহাসিক ভিত্তি কিছুটা দুর্বল হওয়ায় অনেকেই ভুয়া আখ্যায়িত করেছেন।
মাত্র চার বছরের মাথায় ক্যালিগুলার অত্যাচারে সহ্যের বাঁধ ভেঙে গেলো কতিপয় সিনেটর এবং সেনা কর্মকর্তার। এভাবে ত্রাসের মাঝে আর কয়দিন বেঁচে থাকা যায়। আর আগামীকাল যে তারা বেঁচে থাকবেন, সেটারই বা নিশ্চয়তা কই? অনেকেই তার পরিবার-পরিজনকে সম্রাটের দণ্ডাদেশে হারিয়েছেন। অনেকের কন্যা, স্ত্রী সম্রাটের পতিতালয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যায় জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। তাই ক্যাসিয়াস শেরিয়া নামক এক প্রিটোরিয়ান রক্ষীর নেতৃত্বে গোপনে গোপনে তারা একত্র হয়ে ক্যালিগুলাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করতে থাকেন।
এদিকে ক্যালিগুলা ঘোষণা করলেন, তিনি রোম ত্যাগ করে মিশরে চলে যাবেন। সেখান থেকে তিনি তার নতুন রাজত্ব শুরু করবেন। এই পুরাতন রোম ধ্বংস করে তিনি মিশরে গড়ে তুলবেন দেবতা ক্যালিগুলার আশীর্বাদপুষ্ট রোম। ক্যালিগুলার এই ঘোষণা তার হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সতর্ক করে দিলো। হাতে একদম সময় নেই তাদের। তাই তারা পরদিনই খেলার ময়দানে ক্যালিগুলাকে হত্যা করার পরিকল্পনা করলেন।
ক্যালেন্ডারের পাতায় ৪১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি একটি খেলার অনুষ্ঠানে একজন দেহরক্ষী প্রথম ক্যালিগুলাকে ছুরিকাঘাত করে বসে। এরপর মুহূর্তের মধ্যে কয়েকজন প্রিটোরিয়ান রক্ষী ক্যালিগুলাকে ঘিরে ছুরিকাঘাত করতে থাকে। ইতিহাসবিদদের মতে, মোট ৩০ বার তাকে ছুরিকাঘাত করার মাধ্যমে হত্যা করা হয়। ক্যালিগুলার নাম এবং বংশ চিরতরে রোমের মাটি থেকে মিশিয়ে দিতে তার স্ত্রী এবং সন্তানদেরও হত্যা করা হয়। তার মন্দির ধ্বংস করে দেওয়া হয়। সম্রাটের মৃত্যুতে হঠাৎ করে রোমের রাজনীতির ময়দান গরম হয়ে উঠে। প্রিটোরিয়ান রক্ষীরা বিশৃঙ্খলার হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে তথাকথিত ভাঁড় উপদেষ্টা ক্লডিয়াসকে রোমের সম্রাটের আসনে বসিয়ে দেন। এভাবে এক অত্যাচারীর বিদায়ে রোমের ইতিহাসের এক কাল অধ্যায়ের অবসান ঘটে।
এসডব্লিউএসএস/১৬০০
আপনার মতামত জানানঃ