বাংলাদেশ পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠছে। আজ শুক্রবার বিরোধী দল বিএনপির কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
এমন এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রাজনীতিতে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র। বুধবার দেয়া বিবৃতির মতো প্রায় একই প্রতিক্রিয়া বৃহস্পতিবার আবারও দিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল।
তার কাছে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বিরোধী দল বিএনপি তাদের মহাসমাবেশ ২৭শে জুলাই থেকে আজ শুক্রবার নিয়ে এসেছে। বিরোধী দল সহিংস অবস্থা সৃষ্টি করবে এমন অভিযোগে পাল্টা রাজনৈতিক সভা আয়োজন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
ক্ষমতাসীন দলকে পাল্টা কর্মসূচিতে সুবিধা দিয়ে এবং বিরোধী দলের সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতে ওভারটাইম কাজ করছে রাষ্ট্রযন্ত্র। এর মধ্যে শুধু পুলিশই গ্রেপ্তার করেছে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে। এমনটাই দাবি করছে বিরোধী দলগুলো।
শাসকগোষ্ঠী রাজপথে সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছে। এর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কি?
এ প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত প্যাটেল বলেন, এ বিষয়ে আগের দিন আমি কিছুটা বলেছি। এ বিষয়ে পরিষ্কার করে কথা বলেছি আমি। আবারও বলবো, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই। কোনো রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করে না যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্য অর্জনে আমরা সমর্থন দিই।
এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বের ওপর আমরা জোর দিই। অবশ্যই বিশ্বাস করি এই প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
এদিকে, বাংলাদেশকে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদ থেকে বহিষ্কার এবং শান্তিরক্ষা মিশনে র্যাবসহ মানবাধিকার হরণকারীদের নিষিদ্ধ করতে জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত লিন্ডা টমাস গ্রিনফিল্ডকে চিঠি দিয়েছেন ১৪ কংগ্রেসম্যান।
তারা বলেছেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের সন্ত্রাস, নির্যাতন ও বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য আপনাকে চিঠি লিখছি। একই চিঠিতে তারা বাংলাদেশে জাতিসংঘের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য ব্যবস্থা নিতে আহবান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের কোন অংশ জাতিসংঘে কোন প্রস্তাব তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করলে তা জাতিসংঘে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত এর মাধ্যমেই করা হয়ে থাকে। কূটনীতিকরা কংগ্রেসম্যানদের এ ধরনের চিঠি জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপনের প্রক্রিয়া বলে অভিহিত করেছেন।
তারা দীর্ঘ চিঠিতে আরও বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াাচ, ফ্রিডম হাউস এবং রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারসহ বিপুল সংখ্যক মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের নথিভুক্ত করেছে। যার মধ্যে ভয়ভীতি, হামলা, মিথ্যা কারাদন্ড, নির্যাতন, গুম এবং এমনকি বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করেছেন যে বাংলাদেশ “সাংবাদিক এবং মানবাধিকার রক্ষাকারীদের দীর্ঘায়িত বিচারের জন্য দোষী।”
২০২১ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটির পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদসহ র্যাবের বর্তমান বা সাবেক সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যাইহোক, এই নিষেধাজ্ঞাগুলি সরকারের সন্ত্রাসকে মন্থর করেনি।
গত ৬ থেকে ৮ মাসে হাজার হাজার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সমর্থনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে। এই বিক্ষোভগুলি প্রায়ই সহিংসতা, নৃশংস হামলার সম্মুখীন হয়েছে।
আমরা অত্যন্ত সন্দিহান যে হাসিনা সরকার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের অনুমতি দেবে। এই কারণগুলির জন্য, এবং আরও অনেকগুলি দুর্নীতি, অত্যাচার, সহিংসতা এবং অপব্যবহার বন্ধে নিম্নে উল্লেখিত বিষয়গুলি কার্যকর করার জন্য অনুরোধ করছি:
এক. জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বাংলাদেশের সদস্যপদ অবিলম্বে স্থগিত করার জন্য ব্যবস্থা নিন।
শেখ সরকারের বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্তের তব্যবস্থা নিন। বিশেষ করে সাংবাদিক এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে তার সরকার যে সকল ব্যবস্থা নিয়েছে।
দুই. অস্থায়ীভাবে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর যে কোন সদস্যকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে মোতায়েন করা বন্ধ রাখতে হবে।
তিন. জাতিসংঘ বিশ্বজুড়ে নিরপেক্ষ সরকারগুলির সাথে সমন্বয়ে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের তত্ত্বাবধানে এবং পরিচালনায় অংশ নেবে। এতে ভোটারদের ভয়ভীতি, ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি, বা ভোটারদের উপর হামলা প্রতিরোধের জন্য শান্তিরক্ষা বাহিনী গঠনের বিধান অন্তর্ভুক্ত করবে।
২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার লেখা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন কংগ্রেসম্যান বব গুড,অ্যানা পলিনা-লুনা, র্যালফ নরম্যান, টম পেরি, যশ ব্রেচেন, এন্ড্রু ক্লেড, এইলি ক্রেইন, পল এ গসার, রনি এল জ্যাকসন,ব্রইন বেবিন, করি মিলস, ডাগ লামাফা, র্যান্ডি ওয়েবার ও গ্লেন গ্রোথম্যান।
এসডব্লিউএসএস/১৪৪০
আপনার মতামত জানানঃ