ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় অশ্চিয়তা ও সংঘর্ষের মধ্যে দিয়ে হয়েছে পঞ্চায়েত ভোট। তিন ধাপের এই ভোটগ্রহণ শনিবার সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়। রাজজুড়ে শাসকদল তৃণমূলের সঙ্গে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত হয়েছেন অনেকে।
রাজ্যের বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাই, ব্যালট বাক্স পুড়িয়ে দেওয়া, ব্যালট বাক্সে পানি ঢেলে দেওয়া, জোর করে ব্যালট পেপার সিল দেওয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে।
এ অবস্থায় রাজ্যের বিরোধীদলীয় নেতারা এই নির্বাচন বাতিল এবং অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির দাবি জানিয়েছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে জানা গেছে, নিহতদের মধ্যে পাঁচজন তৃণমূল সদস্য, বিজেপি, বাম ও কংগ্রেসের একজন করে কর্মী এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক রয়েছেন।
এমন পরিস্থিতির জন্য ভোটের মাঠে নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ভোট সহিংসতায় বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার পাশাপাশি অন্তত দুটি ভোট কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ধ্বংস করা হয়েছে।
এবার ২২টি জেলা পরিষদে ৯২৮, পঞ্চায়েত সমিতিতে ৯ হাজার ৭৩০ এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩ হাজার ২২৯ আসনে প্রতিনিধি নির্বাচনে রায় দিতে পারবেন প্রায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ ভোটার।
পঞ্চায়েত ভোটের আগের রাত থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত। বিভিন্ন জায়গা থেকে বোমাবাজি ও গুলি চালানোর অভিযোগ শাসক এবং বিরোধী দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
মুর্শিদাবাদে শুধুমাত্র শাসকদলেরই তিন জন কর্মী নিহত হন। পঞ্চায়েত ভোটকেন্দ্র করে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আহত ও মৃত্যুর খবর আসছে।
শনিবার ভারতের সময় সকাল সাতটায় পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন শুরু হয়েছে। এরপরই নানা জায়গা থেকে সহিংসতার খবর আসতে থাকে। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা–কর্মীদের ভোটে অনিয়ম ও সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। দুস্কৃতকারীদের তাণ্ডবের সামনে দাঁড়াতে না পেরে অনেক ভোট কর্মী কেন্দ্র ছেড়ে পালিয়েছেন।
আজ সহিংসতায় তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম দলের কর্মী–সমর্থক মিলিয়ে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এর আগে নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর নিহত হয়েছেন ২১ জন। সব মিলিয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৩৫ জনের প্রাণ গেল। গত ২০১৮ সালের সর্বশেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোটের দিন খুন হয়েছিলেন ২৩ জুন।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের কথা থাকলেও অধিকাংশ এলাকায় তা হয়নি। নামানো হয়নি পুলিশও। কেন্দ্র দখল, সহিংসতার কারণে মানুষ ভোট দিতে পারেননি। অনেক কেন্দ্রে ভোট দিতে ভোটাররা পুলিশের সহায়তা চাইলেও লাভ হয়নি।
মূলত রাজ্য পুলিশ মোতায়েন করে থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তবে তার আগে এই নির্দেশ আসে রাজ্যের নির্বাচন কমিশনারের কাছ থেকে। কিন্তু তিনি কোনো ব্যবস্থা নেননি।
বিরোধীরা লাগামহীন এই সন্ত্রাস ও ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিল করে পুনর্নির্বাচন আয়োজনের দাবি করেছে। পাশাপাশি রাজ্যের মানুষের জানমাল রক্ষায় অবিলম্বে রাষ্ট্রপতির শাসন জারির দাবি জানিয়েছে।
জানা গেছে, কংগ্রেস নির্বাচন বাতিলের দাবিতে আগামীকাল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির শরণাপন্ন হচ্ছে। একই দাবি তুলেছেন বিরোধী দলের নেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তৃণমূল কংগ্রেসও বিরোধীদের বিরুদ্ধে ভোটে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে এলাকাভিত্তিক পুনর্নির্বাচনের দাবি তুলেছে।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে মোট ৬১ হাজার ৬৩৬ বুথের মধ্যে স্পর্শকাতর বুথের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৪৩। অর্থাৎ, মোট বুথের ৭.৮৪ শতাংশ স্পর্শকাতর বুথ। কোন জেলায় কত স্পর্শকাতর বুথ রয়েছে তার একটি তালিকাও প্রকাশ করে কমিশন।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ৩৪ শতাংশ আসন বিনা ভোটে জিতেছিলেন শাসক দল তৃণমূলের প্রার্থীরা। বাকি ৬৬ শতাংশ আসনের সিংহভাগও দখল করেছিল শাসক দল।
এবারও সেই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে চাইলেও বিরোধী বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম দল প্রতিরোধ গড়ে তোলায় সেভাবে এগোতে পারেনি। তবে অন্তত ১২ শতাংশ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছেন তৃণমূলের প্রার্থীরা।
এসডব্লিউএসএস/১৫০৫
আপনার মতামত জানানঃ