যুক্তরাষ্ট্র র্যাব কর্তৃক আগে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি দেখতে চাওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে যেন এমন কিছু না হয় সেজন্য বাহিনীটির সংস্কার চায়। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাষ্ট্রদূত পিটার হাস দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরে ভয়েস অফ আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক, রোহিঙ্গা ইস্যু, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়েও বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন তিনি। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন আনিস আহমেদ।
গত বছর ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র।
র্যাব কর্মকর্তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য ছিল এমন: এটা একদম পরিষ্কার- আমাদের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বুঝিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রে রয়েছে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার। এই ইস্যুটি (র্যাব) নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই কথা বলে আসছি।
বিচারবহির্ভূত হত্যা একটা ইস্যু। মানবাধিকার বিষয়ক প্রতিবেদনগুলোতে র্যাব দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যার বিষয়টি অনেক বছর ধরেই উঠে এসেছে। এসব নিয়ে উদ্বেগের কারণে আমরা ২০১৮ সালে র্যাবকে প্রশিক্ষণ প্রদানও বন্ধ করে দিয়েছি। সুতরাং, অবশ্যই র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার একটা প্রভাব তো রয়েছেই। এগুলো অবশ্যই পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
আমি মনে করি, অনেকে এর প্রভাব নিয়ে অতিরঞ্জিত কথা বলছে। আমাদের সম্পর্ক অনেক বিস্তৃত, আমরা অনেক কিছু নিয়ে কাজ করি। সেটা একটা মাত্র ইস্যু। নিরাপত্তা ক্ষেত্রে যেমন আমরা নিরাপত্তা বাহিনীকে নিবিড়ভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশে ইতিপূর্বে ঘটে যাওয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের জবাবদিহি দেখতে চাই এবং ভবিষ্যতে র্যাব যেন এমন কিছু না করে সেজন্য বাহিনীটির সংস্কার চাই।
যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে প্রধান তিনটি ক্ষেত্র কী এবং ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানোর জায়গাগুলো সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত হাস বলেন, গত তিন মাসের দিকে তাকালে চমৎকার সব কার্যক্রম দেখতে পাবেন।
এই তিন মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ পার্টনারশিপ ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়েছে যাতে অংশ নিতে আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বাংলাদেশে এসেছিলেন, ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ নিরাপত্তা সংলাপ হয়েছে, হনুলুলুতে মিলিটারি পার্টনারশিপ ডায়ালগ হয়েছে এবং অতি সম্প্রতি ওয়াশিংটনে দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ হয় যাতে অংশ নিতে (প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা) সালমান এফ রহমান যুক্তরাষ্ট্র এসেছিলেন। সুতরাং, ওই চার ক্ষেত্রে আমরা কতোটা নিবিড়ভাবে, কতোটা একাগ্রতার সঙ্গে কাজ করছি বুঝাই যাচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ মুক্ত গণমাধ্যমের ভূমিকার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে মার্কিন দূত বলেন, কার্যকর গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হলো মুক্ত গণমাধ্যম। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে এটা বাংলাদেশে চাপের মধ্যে রয়েছে। এই আইনের কিছু প্রস্তাবিত ‘রেগুলেশন’ বরং সাংবাদিকদের জন্য কাজ করাটাকে আরও কঠিন ও ভয়ঙ্কর করে তুলবে। সমাজ স্বাধীন ও মুক্ত হয় না যদি গণমাধ্যমকে তার প্রশ্ন করতে দেয়া না হয়, সে তার মত প্রকাশ করতে না পারে, সরকারের সমালোচনা না করতে পারে (বলছি না যে দায়মুক্তি দিয়ে)।
সরকারের কোনো ভুল দেখলে তার সমালোচনা করার যেন তাদের সম্পূর্ণ অধিকার থাকে। আমি মনে করি, নির্বাচনের সময় এ বিষয়টি অত্যন্ত মূল্যবান এবং গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সক্রিয় গণমাধ্যম ছাড়া অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রে আপনার দীর্ঘ অবস্থানের কারণে আপনি অবগত যে, এখানকারও অনেক মানুষ, অনেক রাজনীতিবিদ গণমাধ্যমকে পছন্দ করেন না কারণ গণমাধ্যম তাদের ঘাম ছুটিয়ে দেয়।
এসডব্লিউ/এসএস/১৯০৫
আপনার মতামত জানানঃ