সিলেট-সুনামগঞ্জে যে বন্যা চলছে তা ১২২ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান। ভারতের আসাম ও মেঘালয়ের রেকর্ড বৃষ্টি চরম দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকায়। মৌসুমের তৃতীয় দফা বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সিলেট ও সুনামগঞ্জের অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ। আর এর মধ্যেই বাড়ছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৮৭৩ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জনে। শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
এ সময়ে করোনায় এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ফলে মোট মারা যাওয়ার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ১৩২ জন।
সোমবার (১৯ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯২ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১৯ লাখ ৫ হাজার ৮৯৯ জন।
২৪ ঘণ্টায় ৮ হাজার ৪৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় ৮ হাজার ২৮টি নমুনা। পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মহামারির শুরু থেকে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম ৩ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দুদিন সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।
এক সপ্তাহে শনাক্ত বেড়েছে ৩৮৩ শতাংশ
মূলত দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবারও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গত এক সপ্তাহে আগের সপ্তাহের তুলনায় করোনা শনাক্তের হার বেড়েছে ৩৮৩ শতাংশ। আগের সপ্তাহে এই বৃদ্ধির হার ছিল ১১৮ দশমিক ১ শতাংশ। তবে গত দুই সপ্তাহে দেশে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি।
সোমবার (২০ জুন) বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনা বিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ৬ জুন থেকে ১২ জুন পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৩৭৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এরপর গত ১৩ জুন থেকে ১৯ জুন পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৫২৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ২১২ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
জানা গেছে, গত ২৩ মে থেকে ২৯ মে দেশে করোনা শনাক্ত নিন্মমুখী ছিল। ওই সপ্তাহে ২১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। এর পরের সপ্তাহে সংক্রমণ আরও কমে আসে। ৩০ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত ২১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
আগের সপ্তাহের তুলনায় শনাক্তের হার কমে দাঁড়ায় এক দশমিক ৯ শতাংশে। তবে এর পরবর্তী সপ্তাহ থেকেই করোনা সংক্রমণ আবারও বাড়তে থাকে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে সংক্রমণ ১১৮ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে যায়। আর গত সপ্তাহে দেশে করোনা শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৩৮৪ শতাংশ।
ফের প্রস্তুত হচ্ছে রামেক করোনা ইউনিট
সারা দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। দেশের বিভিন্ন বিভাগে নতুন করে রোগী শনাক্ত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে করোনা রোগী শনাক্তের গড় হার বাড়ছে। সংক্রমণের নতুন ঢেউ সামাল দিতে আগেভাগেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল। যদিও এখনো রাজশাহীতে করোনা সংক্রমের হার শূন্যই রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, দেশে নতুন এই সংক্রমণের ঢেউ সামলাতে হাসপাতালগুলোতে বিশেষ শয্যা ও আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দিয়েছে কোভিড সংক্রান্ত সরকারের জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।
ইতিপূর্বে কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিত্সার জন্য যে বিশেষ শয্যা, আইসিইউ ব্যবস্থা ও জনবল ছিল, তা বর্ধিত হারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য যথাযথভাবে প্রস্তুত রাখার সময় এসেছে।
ঐ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্যবিধিতে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। জানতে চাইলে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, সারা দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হলেও রাজশাহীতে এখনো শনাক্তের হার শূন্য। দীর্ঘ দিন রোগী না থাকা সাপেক্ষে করোনা ইউনিট বন্ধ করা হয়েছিল। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আবারও প্রস্তুতি নিচ্ছি। করোনা রোগী শনাক্ত হলেই বন্ধ হওয়া ইউনিট পুনরায় চালু করা হবে। সে লক্ষ্যে সবরকম প্রস্তুতি রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত শুক্রবার রামেক ভাইরোলজি ল্যাবে সন্দেহভাজন মোট ৩২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে সংগৃহীত নমুনায় কারো শরীরে করোনা শনাক্ত হয়নি।
এসডব্লিউ/এসএস/১৭৪০
আপনার মতামত জানানঃ