জিএসপিসহ র্যাব এবং এর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো আগামী মার্চ মাসে ঢাকা-ওয়াশিংটন অংশীদারিত্ব সংলাপে আলোচনার এজেন্ডায় প্রাধান্য পাবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রসংগত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে (জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস) জিএসপি সুবিধা স্থগিত থাকায় আরেকটি বড় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে বাংলাদেশের। উন্নয়নশীল দেশে বেসরকারিখাতের জ্বালানি, স্বাস্থ্যসেবা, অত্যাবশ্যক অবকাঠামো ও প্রযুক্তিভিত্তিক প্রকল্প উন্নয়নে গঠিত ইউএস ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স করপোরেশনের (ডিএফসি) ৬ হাজার কোটি ডলারের তহবিল থেকে ঋণ সুবিধা পাচ্ছে না বাংলাদেশ।
রানা প্লাজা ভবন ধসের পর বাংলাদেশে শ্রম অধিকার এবং কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তায় গুরুতর ত্রুটির কথা উল্লেখ করে ২০১৩ সালের জুন মাসে বাণিজ্য সুবিধাটি স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। এখনও সে সুবিধা ফিরিয়ে দেয়নি ওয়াশিংটন। ফলে ডিএফসি থেকে ঋণের জন্যও বাংলাদেশকে বিবেচনা করা হয় না।
২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ডিএফসি উদীয়মান বাজারে কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে ছোট ব্যবসা এবং মহিলা উদ্যোক্তাদের অর্থায়নও করে। অর্থায়নকারী কর্পোরেশনটি সর্বোচ্চ ১০০ কোটি ডলারের ঋণ ও গ্যারান্টি সর্বোচ্চ ২৫ বছর মেয়াদ পর্যন্ত দিয়ে থাকে।
আরও দেয় উদীয়মান বাজারে বিনিয়োগের পুঁজি ঘাটতি পূরণে বেসরকারি ইক্যুইটি তহবিলে সমর্থন। তাদের সর্বোচ্চ বিনিয়োগ সীমা ৬ হাজার কোটি ডলার। একইসাথে মুদ্রার পরিবর্তনযোগ্যতা, সরকারি হস্তক্ষেপ এবং সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাসহ রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে ক্ষতির বিপরীতে ১০০ কোটি ডলার পর্যন্ত কাভারেজ দেয়।
বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার সময় ১৬ দফা অ্যাকশন প্ল্যান দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যা বাস্তবায়িত হলে জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করার কথা বলা হয়।
অ্যাকশন প্ল্যানে অন্তর্ভুক্ত শর্ত ছিল- বাংলাদেশে শ্রম মান উন্নয়ন, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা, শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার ও বাবুল আক্তারের সংগঠনের নিবন্ধন পুনবর্হাল, আমিনুল হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা ইত্যাদি।
এসব শর্ত পূরণ করার দাবি করে ২০১৫ সাল থেকে ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) সভা, পার্টনারশিপ ডায়ালগসহ দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন আলোচনায় বাংলাদেশ জিএসপি পুনবর্হালের দাবি করলেও তাতে সম্মতি দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। বার বার হতাশ হয়ে অবশেষে ২০১৮ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জিএসপি পুনবর্হালের অনুরোধ না করার সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা।
২০২০ সালে জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর শ্রম মান ও শ্রমিক অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের অগ্রগতির তথ্য তুলে ধরে জিএসপি পুনবর্হালে আবার অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ।
তবে ডিএফসি থেকে ঋণ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি এবং যুক্তরাষ্ট্র নতুন জিএসপি নীতি প্রতিনিধি পরিষদে (কংগ্রেসে) উপস্থাপন করায় বাংলাদেশ নতুন করে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা ফিরে পেতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। আসছে ২০ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র পার্টনারশিপ ডায়ালগে আবারও জিএসপি পুনবর্হালের বিষয়টি ঢাকা গুরুত্ব দিয়ে উপস্থাপন করতে পারে বলে মনে করছেন বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র দফতরের রাজনৈতিক বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড।
চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এম শহীদুল ইসলাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) ক্রিস্টোফার উইলসন এবং উপ-সহকারী প্রতিনিধি জেবা রিয়াজুদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি ঢাকায় যে বার্তা পাঠিয়েছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জিএসপি নীতি নিয়ে বাংলাদেশের আশাবাদী হওয়ার তেমন কোন কারণ দেখছেন না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি বিশেষজ্ঞরা।
কংগ্রেসে উত্থাপন করা নতুন জিএসপি পলিসি ২০২২ সালেই কার্যকর হওয়ার আশা রয়েছে। তবে নতুন এই বিলে জিএসপি পাওয়ার জন্য যোগ্যতা নির্ধারণে আরও কঠিন শর্তারোপ করা হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, যেহেতু ফেব্রুয়ারির এ মিটিংয়ে ইউএসটিআর কর্মকর্তারা আমাদের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে নয়া জিএসপি নীতি নিয়ে আলোচনা করেছেন, সেহেতু আমাদের মনে সামান্যতম আশার সঞ্চার হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জিএসপি পলিসি সম্পর্কে তেমন কিছু জানেন না তিনি।
একই কথা বলেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন- বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। তবে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা পুনবর্হাল করলেও তৈরি পোশাক পণ্যকে এ সুবিধা দেবে না। অন্য কোনো দেশের গার্মেন্ট আইটেমকেও যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা দেয় না।
যুক্তরাজ্যের কমনওয়েলথ সচিবালয়ের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভাগের প্রাক্তন প্রধান এবং বর্তমানে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন জিএসপি নীতিতে খুব সম্ভবত বাংলাদেশের জন্য সুখবর পাওয়ার মতো কিছু থাকছে না।
তিনি বলেন, আফ্রিকা গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (আগোয়া) এর আওতায় আফ্রিকার দেশগুলোকে জিএসপি সুবিধা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সেখানেও যেসব দেশ শ্রম অধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা, মানবাধিকার ও মেধাস্বত্ব অধিকার এর ক্ষেত্রে কমপ্লায়েন্স নয়, তাদের জিএসপি স্থগিত করেছে দেশটি। এ প্রেক্ষাপটে নতুন জিএসপি নীতি আরও কঠোর হবে, সেটিই স্বাভাবিক।
‘বাংলাদেশের শ্রমিক অধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট নয়। পরিবেশ সুরক্ষা, মানবাধিকার ও মেধাস্বত্ব অধিকার নিশ্চিতের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের উল্লেখ করার মতো অগ্রগতি নেই। তাই নতুন জিএসপি পলিসির আওতায় বাংলাদেশকে অন্তর্ভূক্ত করার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং এখনও যেসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে, তার মধ্যে অনেক দেশ বাদ পরে যাবে’- ব্যাখ্যা করেন তিনি।
আনুষ্ঠানিক তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বার্ষিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৯০০ কোটি ডলারের বেশি। দেশটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির ভাগ বড় হলেও আরএমজি পণ্যের উপর উচ্চ শুল্ক, শ্রম সমস্যা এবং স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে উত্তরণ ভবিষ্যতে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের দ্রুত প্রবৃদ্ধির জন্য চ্যালেঞ্জিং হবে।
২০২১ সালের এপ্রিলে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মার্কিন পক্ষকে একটি নিবেদিত বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রস্তাব দেন। মার্কিন পক্ষ সেখানে মেধাসম্পদ অধিকার সংক্রান্ত গবেষণা প্রকল্প ও সক্ষমতা বৃদ্ধি, আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করতে পারে। এখানে মার্কিন বিনিয়োগের জন্য অন্যান্য সুনির্দিষ্ট খাত যেমন অবকাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, ইলেকট্রনিক্স, জ্বালানি, চিকিৎসা সরঞ্জাম, কৃষি ও চামড়াজাত পণ্য ইত্যাদি চিহ্নিত করবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্চে অনুষ্ঠেয় পার্টনারশিপ ডায়ালগের এজেন্ডা নিয়ে মার্কিন পক্ষের সাথে আলোচনা করছে। তারা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে সংলাপের সাথে প্রাসঙ্গিক এজেন্ডা আইটেম প্রস্তাব করার অনুরোধ করেছেন বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পার্টনারশিপ ডায়ালগে বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার, র্যাব আর এর সিনিয়র কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে বলে উল্লেখ করেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আরও থাকবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-সংক্রান্ত সহযোগিতা, মুক্ত ও অবাধ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের সুবিধাগ্রহণ, শান্তিরক্ষা মিশনে সহায়তা, সন্ত্রাসবাদ বিরোধীতা, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মহড়া এবং প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয়ের মতো ইস্যু।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত পার্টনারশিপ ডায়ালগে ইউএসটিআর প্রতিনিধিরা বলেছিলেন, বাংলাদেশে তাদের শীর্ষ উদ্বেগগুলি হলো- কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার এবং ট্রেড ইউনিয়নের সমস্যা।
শ্রম অধিকার সংক্রান্ত ১৬ দফা অ্যাকশন প্ল্যান ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে শিশুশ্রম অবসানের ওপর জোর দিচ্ছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতির তথ্য উপস্থাপন করবে ঢাকা।
এছাড়া এই সংলাপে ঢাকা-নিউইয়র্ক সরাসরি ফ্লাইট পুনরায় চালু করতে হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত নির্দিষ্ট কিছু কমপ্ল্যায়েন্স শর্ত নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টা পর্যালোচনা করা হতে পারে এবং প্রক্রিয়াটি দ্রুত করার সম্ভাব্য বিষয়েও আলোচনা হওয়া উচিত।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভ্যাক্স উদ্যোগের আওতায় বাংলাদেশকে মোট ১৮.৫ মিলিয়ন ডোজ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন অনুদান দিয়েছে। মার্কিন সরকার টিকাকরণ সহায়তা, পরীক্ষা, সংক্রমণ ও প্রতিরোধ নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসা, টিকা সরবরাহ চক্র এবং লজিস্টিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উন্নতির জন্য কোভিড-সম্পর্কিত ১২১ মিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথভাবে এদেশেই টিকা উৎপাদন করতে চায় বাংলাদেশ। আরও চায় গবেষণা ও ভ্যাকসিন উৎপাদনের সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মসূচিতে অংশীদারিত্ব এবং এই সহযোগিতায় মেধাস্বত্ব অধিকার থেকে অব্যাহতি।
এদিকে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় অংশীদারিত্ব সংলাপে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং শ্রম সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠকে মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ হিসেবে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের বিষয়টি তুলে ধরবে।
বাংলাদেশি কর্মকর্তারা মনে করছেন, গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে অনুষ্ঠিত মার্কিন গণতন্ত্র সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ বাদ পড়ায় গণতন্ত্রের বিষয়টিও সামনে আসতে পারে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মানবাধিকারের ইস্যুতে র্যাব এবং এর সাতজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞাও সংলাপের আলোচ্যসূচিতে থাকবে।
আগে থেকে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্র এ ধরনের একতরফা পদক্ষেপ নেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার বেশ হতাশ হয়েছে। সরকার মনে করে, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মহল থেকে প্রাপ্ত পক্ষপাতদুষ্ট, অসত্য এবং বানোয়াট তথ্যের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকার ইতোমধ্যেই এ নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহারে পদক্ষেপ নিয়েছে। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশ আইনের শাসন নিশ্চিত করার পাশাপাশি নাগরিকদের মানবাধিকার সুরক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা আরো বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সরকার যেকোনো মানবাধিকার ইস্যুতে দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে।
সমুদ্র সীমা নির্ধারণ নিয়ে ভারত ও মায়ানমারের সাথে বিরোধ সফলভাবে সমাধান করার পর, বাংলাদেশ নিজস্ব বিপুল সামুদ্রিক সম্পদ অনুসন্ধান এবং ব্যবহার করতে চায়।
এজন্য বঙ্গোপসাগরের শান্তি ও স্থিতিশীলতার সাথে সাথে ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলেও একই অবস্থা দেখতে আগ্রহী ঢাকা- যা সমুদ্র বিরোধের শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তি এবং নৌ চলাচলের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, পারস্পরিক আস্থা ও সম্মানের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ মার্কিন নেতৃত্বাধীন আইপিএস-এর অংশ হিসেবে থাকতে চায়। তবে কোনো সামরিক জোটে যোগ দিতে চায় না।
বাংলাদেশ সামুদ্রিক নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রেখেছে। দুই দেশের নিয়মিত যৌথ মহড়া, যৌথ মানবিক অভিযান সহায়তা এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া কর্মসূচি, নিরাপদ সামুদ্রিক অঞ্চল গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত, নিরাপত্তা দক্ষতা বিনিময়ে উৎসাহী ঢাকা। তার পাশাপাশি জাহাজ নির্মাণ এবং গভীর সমুদ্রে থেকে মৎস সম্পদ আহরণের প্রযুক্তি হস্তান্তর বৃদ্ধি করে সুনীল অর্থনীতির বিকাশ চায়।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন চীন-বিরোধী সামরিক জোট কোয়াড-এ বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়েও অংশীদারিত্ব সংলাপে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করেন বাংলাদেশি কর্মকর্তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এ জোটে রয়েছে জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশকে কোয়াডের সদস্য হওয়ার প্রস্তাব দিলেও সরকার তা গ্রহণ করেনি।
২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত অংশীদারিত্ব সংলাপেও দুই দেশ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিল। এ বছর ১৮-২০ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত তিন দিনের মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনেও বিষয়টি আলোচনা হয়। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বাংলাদেশকে চীন থেকে সরে কোয়াডমুখী হওয়ার পরামর্শ দেয়।
অপরদিকে, বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সহযোগী চীনও গত বছর সতর্ক করে জানায়, কোয়াডে বাংলাদেশের যোগদান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে।
এসডব্লিউ/এসএস/১৫৩৫
আপনার মতামত জানানঃ