সৌদি নারীদের ওপর থেকে গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়েছে, যা ২০১৮ সালের জুন থেকে কার্যকর হয়। তাই, সে দেশের নারীদের গাড়ি চালানোতে আর কোনো বাধা না থাকায় এখন থেকে নারীরা হতে পারছেন উবার ড্রাইভার। বছর কয়েক আগেও উবারের সব ড্রাইভারই ছিল পুরুষ। এখন দেশটিতে পুরুষের পাশাপাশি বাড়ছে নারী উবার চালকও। বৈশ্বিক রাইড শেয়ারিং সেবা উবারের চালক হিসেবে সৌদি আরবের নারীর অংশগ্রহণ এক বছরে ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবার দেশের নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার দেওয়ার চার বছরের মাথায় সৌদি সরকার ঘোষণা দিয়েছে, এখন থেকে সৌদি নারীরা ট্যাক্সি ড্রাইভার হওয়ার জন্যও আবেদন করতে পারবেন। খবর আরব নিউজ
নিজেদের টুইটার একাউন্ট @eMoroor থেকে এ ঘোষণা দিয়েছে সৌদি ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ট্রাফিক। আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে জানানো হয়, নারীরা রিয়াদ, জেদ্দা, জাজান, আসির, নাজরান, জোউফ, হাইল এবং তাইফসহ রাজ্যের বিভিন্ন শহরের ১৮টি ড্রাইভিং স্কুলে ‘জেনারেল ট্যাক্সি লাইসেন্স’ এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।
ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, এ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে খরচ পড়বে ২০০ সৌদি রিয়াল (৫৩ ডলার)।
সরকারের এমন সিদ্ধান্তের প্রতি সাধুবাদ জানিয়ে শিল্পী লতিফাহ আল-শালহাব আরব নিউজকে বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে আমার সবসময়ই এই ইস্যু নিয়ে চিন্তা ছিল। একজন পুরুষ ড্রাইভারকে সাথে নিয়ে আমার নিজের ট্যাক্সিতে চড়তে আমার অস্বস্তি লাগতো। উবার এবং কেয়ারিম এর মাধ্যমে তাও ড্রাইভার সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া যায়। বিশ্বের বেশিরভাগ ট্যাক্সি ড্রাইভারই পুরুষ হলেও কিছু দেশে তো নারী ড্রাইভারও আছে। পুরুষ ড্রাইভারের সাথে গাড়িতে চড়ার চেয়ে নারী ড্রাইভার সাথে থাকা অনেক ভালো’।
দোভাষী আসিল আতিফ মনে করেন, ‘এই সিদ্ধান্তের ফলে নারীরা চাকরির বাজারে আরও বেশি সুযোগ পাবেন এবং এটা তাদের ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করবে। আমার নিজেরও গাড়ি চালাতে ভালো লাগে, আমি নিজেও হয়তো এই পেশা বেছে নিতে পারি’!
২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার দেওয়ার পর থেকে সৌদিতে পরিবহণ খাতে নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিমান বা ট্রেন চালনা থেকে ধরে রেসিগ কার চালনার ক্ষেত্রেও নারীরা এখন ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। নতুন নিয়মের আওতায় নারীরা উবার বা কেয়ারিম-এর মতো রাইড অ্যাপগুলোতেও ড্রাইভার হিসেবে যোগ দিতে পারবেন।
দেশের নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার দেওয়ার চার বছরের মাথায় সৌদি সরকার ঘোষণা দিয়েছে, এখন থেকে সৌদি নারীরা ট্যাক্সি ড্রাইভার হওয়ার জন্যও আবেদন করতে পারবেন।
অতীতে সৌদিতে নারীদের খেলাধুলা অনৈতিক কাজের অংশ হিসেবে দেখতো রক্ষণশীলরা। এখন সময় বদলেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদির নারীরাও রাজপথে সাইকেল চালাতে পারছেন। আর জেদ্দা শহরে এই দৃশ্য এখন স্বাভাবিক।
সব প্রতিকূলতা পেছনে ফেলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো সৌদির নারীরাও এগিয়ে চলছেন। বর্তমানে সৌদি আরবের নারীদের সাইকেল চালানোর ঘটনা চোখে পড়ার মতো। সৌদির কঠিন শাসন উপেক্ষা করেই এই দুই চাকার বাহন নিয়ে ছুটে চলছেন নারীরা।
সৌদি আরবে গত কয়েকবছর ধরে নারী অধিকারসহ নানা বিষয়ে সংস্কারকাজ চলছে৷ ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মেদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সৌদি নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন৷ গাড়ি চালানো থেকে শুরু করে সৌদি নারীরা পুরুষ সঙ্গীর অনুমতি ছাড়াই ব্যবসা শুরু করতে পারছেন৷ কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে৷ ২০৩০ সালের মধ্যে মোট জনশক্তির এক তৃতীয়াংশ নারী করতে চায় দেশটি৷ এ সব ছাড়াও সম্প্রতি প্রথম নারী রেস্তোরাঁ মালিক, প্রথম নারী পশু চিকিৎসক, প্রথম নারী ট্যুর গাইড পেয়েছে সৌদি আরব৷
২০১৭ সালের পর সৌদির পরিস্থিতি কিছুটা বদলেছে। যুবরাজ সালমান দেশটির সামাজিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনায় আগের চেয়ে স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারছেন নারীরা। ২০১৭ সালের আগে সৌদিতে নারীদের সাইকেল চালানোর কথা যেখানে ভাবাই যেতো না।
২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় দেশটি। ফলে গাড়ি চালাতে সৌদি নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না। এছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা।
ওজন ও উচ্চতার শর্ত পূরণ করে নারীরা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে পারবে। তবে অন্তত উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করা লাগবে তাদের।
২০২০ সালে সৌদি আইন মন্ত্রণালয় ১০০ নারীকে পাবলিক নোটারি হিসেবে নিয়োগ দেয়। চলতি বছর জানুয়ারিতে ঘোষণা দেওয়া হয়, শিগগিরই আদালতে নারী বিচারকও নিয়োগ দেওয়া হবে।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো নারী বিমানবালা নিয়োগ দেয় সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস। দেশটিতে নারী যাত্রীদের সেবার জন্য ৫০ জন বিমানবালা নিয়োগ করা হয়।
সৌদি আরবকে আরও আধুনিক, উদার এবং ব্যবসা ও পর্যটনবান্ধব করতে ২০১৬ সালে ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণা করেছিলেন ক্রাউন প্রিন্স মোহামেদ বিন সালমান৷ এরপর বেশ কিছু আইনে পরিবর্তন করা হয়৷ ফলে সেদেশের নারীরা এখন গাড়ি চালানো, একা সিনেমা হলে যাওয়া, ঘুরতে যাওয়াসহ নানান কাজ করতে পারছেন৷
সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলোও ভিশন ২০৩০ এর অংশ বলে বিবেচনা করা যেতে পারে৷ এমনও কথা শোনা যাচ্ছে, সেখানে অ্যালকোহল পান বিষয়ে সীমিত পরিসরে হলেও অনুমোদন দেয়া হতে পারে৷
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব দেরি হলেও নিজেদের বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। উবার চালানো, সাইকেল চালানো সৌদি নারীদের জন্য যুগান্তকারী এক ব্যাপার বটে। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন নারীদের মতো সৌদি আরবের নারীরাও নিজেদের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা লক্ষণীয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫৬
আপনার মতামত জানানঃ