মহামারী করোনভাইরাসে জর্জরিত ভারতে টিকার সংকট। টিকা দেওয়ার অভাবে অনেক রাজ্যে ১৮-৪৪ বছর বয়সের টিকা দেওয়া শুরু করা যায়নি। অনেক জায়গায় এটি পুনরায় চালু করার পরেও বন্ধ করতে হবে। ৪৫ বছরের বেশি বয়সী প্রত্যেকেরই টিকা দেওয়া হয় না। অথচ এসবের মধ্যেও দেশটির প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়ে গেছে। তবে কী কারণে নষ্ট হয়েছে, তা জানায়নি ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে এক সপ্তাহ স্থগিত থাকার পর কানাডার অন্টারিও প্রদেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে।
ভারতে ৬.৩ শতাংশ টিকা নষ্ট
বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, রাজ্যগুলোকে বারবার অনুরোধ করা হয়ছে নষ্ট হওয়া টিকার পরিমাণ যেন কোনোভাবেই এক শতাংশের উপরে না যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি রাজ্যে প্রচুর পরিমাণ টিকা নষ্ট হয়েছে। এ তালিকায় সবার উপরে ঝাড়খণ্ড।
বিবৃতিতে বলা হয়, ঝাড়খণ্ডে মোট বরাদ্দের ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ টিকাই নষ্ট হয়ে গেছে। দ্বিতীয় স্থানে আছে ছত্তিশগড়। নষ্ট হয়েছে ৩০ দশমিক ২ শতাংশ টিকা। তামিলনাড়ুতে নষ্ট হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। কাশ্মীরে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং মধ্যপ্রদেশে ১০ দশমিক ৭ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে। সবমিলে দেশে গড়ে প্রায় ৬ দশমিক ৩ শতাংশ টিকা শুধু সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়নি বলে নষ্ট হয়েছে।
যদিও কেন্দ্রের এই পরিসংখ্যান মানতে নারাজ রাজ্যগুলো। কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এই পরিসংখ্যান প্রকাশের পরই টুইটারে পাল্টা পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন। তার দাবি, মিথ্যা তথ্য দিচ্ছে কেন্দ্র। ঝাড়খণ্ডে মাত্র ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ টিকা নষ্ট হয়েছে। একই রকম দাবি কংগ্রেস শাসিত ঝাড়খণ্ড সরকারেরও। রাজ্যটির মুখ্যসচিব বলছেন, তথ্য নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। আমরা শিগগিরই কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তাহলেই আসল তথ্য প্রকাশ্যে আসবে।
যদিও এসবের মধ্যে স্বস্তির খবরও রয়েছে। পরিসংখ্যান প্রকাশ করে কেন্দ্রের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে ৪২ শতাংশ নাগরিকই করোনার টিকার অন্তত একটি করে ডোজ পেয়ে গেছেন। আমেরিকার পর ভারতই দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ২০ কোটি মানুষকে করোনার টিকা দিতে পেরেছে।
কানাডায় শুরু অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ
এক সপ্তাহ স্থগিত থাকার পর অন্টারিও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে ভ্যাকসিনটি ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
‘রক্ত জমাট বাঁধার’ (ব্লাড ক্লট) আশংকার অভিযোগ ওঠার পর কানাডার অন্টারিওসহ বেশ কয়েকটি প্রভিন্স প্রথম ডোজ হিসেবে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রয়োগ স্থগিত রাখে। অন্টারিও দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে এই ভ্যাকসিন নাগরিকদের দেবে।
কিসের ভিত্তিতে অন্টারিও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পুনরায় প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিলো? স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাজ্য থেকে পাওয়া তথ্য উপাত্ত তারা বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। এমনিতেই তো ব্লাড ক্লটের আশংকা খুবই ক্ষীণ, সেই আশংকাটা থাকে প্রথম ডোজ নেয়ার পরের প্রথম কয়েকদিন। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার পর সেই আশংকাটা অনেকাংশেই কেটে যায়। ফলে প্রথম ডোজ নেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ আসলে ব্লাড ক্লটের আশংকাকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
মার্চের ১০ থেকে ১৯ তারিখের মধ্যে যারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তারা এখন দ্বিতীয় ডোজের জন্য বুকিং দিতে পারবেন। যারা প্রথম ডোজ ভ্যাকসিন নেবেন- তাদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইজার এবং মডার্নার ভ্যাকসিন আছে। বারো বছরের বেশি বয়সী যে কেউ যে কোনো এলাকায় এখন ভ্যাকসিনের জন্য বুকিং দিতে পারবেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩৩৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ