বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসআইআর) সহযোগিতায় চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ ল্যাবে ভারতফেরত করোনা রোগীর নমুনায় আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) শনাক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৫ মে) খলিলুর রহমানের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১৫ মে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ভারতফেরত ছয় বাংলাদেশি নাগরিকের করোনাভাইরাস টেস্টের নমুনা সিভাসু’র ল্যাবে পাঠানো হয়। এর মধ্যে পাঁচজনের করোনা নেগেটিভ এবং একজনের পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়।
পরে সিভাসু’র উপাচার্য প্রফেসর ড. গৌতম বুদ্ধ দাশের সার্বিক নির্দেশনায় এবং পোল্ট্রি রিসার্চ ও ট্রেনিং সেন্টারের (পিআরটিসি) আর্থিক সহায়তায় প্রফেসর ড. পরিতোষ কুমার বিশ্বাস, প্রফেসর ড. শারমীন চৌধুরী, ডা. ইফতেখার আহমেদ রানা, ডা. ত্রিদীপ দাশ, ডা. প্রনেশ দত্ত, ডা. মো. সিরাজুল ইসলাম, ডা. তানভীর আহমদ নিজামী করোনায় আক্রান্ত রোগীর স্বাস্থ্যঝুঁকি মূল্যায়ন বিষয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
ওই গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাকার সহযোগিতায় করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনা থেকে SARS-Cov-2 বা নোভেল করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স (পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য উন্মোচন) করা হয়। প্রাপ্ত ফলাফল থেকে দেখা যায়, চট্টগ্রামে ভারতফেরত কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির নমুনায় আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্টের (বি.১.৩৫১) উপস্থিতি আছে।
সীমান্ত দিয়ে মানুষ আসছেই
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্ত বন্ধ থাকলেও অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা ঠেকানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ ভারত থেকে অবৈধভাবে দেশে আসছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা, যশোর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা। এসব জেলার ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে মানুষ যাতায়াত অব্যাহত রয়েছে।
বৈধ পথে যারা ফিরছেন, তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাদের অনেকের শরীরে করোনার অস্তিত্ব মিলছে। এদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে। কিন্তু যারা অবৈধ পথে ফিরছেন, তাদের চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে এসব জেলার অনেক স্থানে সংক্রমণ শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অবৈধভাবে ভারত থেকে মানুষ আসা বন্ধ না হওয়া দেশের জন্য বিপজ্জনক। যে কোনো সময় দেশে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পূর্ণ সংক্রমণ শুরু হতে পারে। আর সেই ধাক্কা সামাল দেয়া কঠিন হবে। মহাদুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে হলে অনতিবিলম্বে সীমান্তে সুরক্ষা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেন, ভারত থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের অনেকের শরীরেই সংক্রমণ ধরা পড়ছে। অধিক সংক্রমণশীল ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের পাঁচ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। তাই সীমান্তে এখনই কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে।
করোনায় ৪০ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৬৭৫
কোভিড-১৯ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না। সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে এসে আবারও বেড়ে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে করোনায় মৃত্যু আবারও বেড়েছে। নতুন করে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মহামারিতে দেশে ১২ হাজার ৪৪১ জনের মৃত্যু হলো। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, নতুন করে ১৬৭৫ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে গত একদিনে। এ নিয়ে সংক্রমণ বেড়ে দাঁড়ালো ৭ লাখ ৯২ হাজার ১৯৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১০ দশমিক ০৮।
সরকারি হিসাবে, আক্রান্তদের মধ্যে একদিনে আরও ১ হাজার ২৭৯ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের নিয়ে মোট সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৩২ হাজার ৮১০ জন। দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চের শেষ দিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দেখা দেয় দেশে। এতে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে যায়। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে সারাদেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাণহানি আবারও বাড়ল।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭২৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ