করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকার দুই ডোজ ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ কার্যকর জানিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ড (পিএইচই) কোভিশিল্ড টিকার ওপর গবেষণা চালিয়েছে। যেখানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার মজুদ যখন ফুরাতে শুরু করেছে এবং দ্বিতীয় ডোজ টিকা অনেকে পাবেন কিনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তখন এই সুখবর এলো। পিএইচই জানিয়েছে, ৯ মে পর্যন্ত ইংল্যান্ডের ষাট এবং ষাটোর্ধ্ব ১৩ হাজার মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে টিকা। শুধু তা-ই নয়, টিকার দুটি ডোজ নেওয়ার ফলে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে এমন প্রায় ৪০ হাজার মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেছেন, নতুন এই তথ্য প্রমাণ করছে যে টিকা মানুষের জীবন বাঁচাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদের যত দ্রুত সম্ভব প্রথম ডোজ দেওয়ার লক্ষ্যে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চালাচ্ছে ব্রিটিশ প্রশাসন।
পিএইচইর বিশ্লেষণ বলছে, কোভিশিল্ড টিকার দুই ডোজ উপসর্গ বা লক্ষণগত রোগের ক্ষেত্রেও বেশ কার্যকর।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদানের ‘রিয়েল-ওয়ার্ল্ড ডাটা’ বিশ্লেষণ করে এমন পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে পিএইচই। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, টিকা দেওয়া হয়নি এমন মানুষের চেয়ে কোভিশিল্ড যাদের দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে কভিড-১৯ প্রতিরোধে টিকার ৮৯ শতাংশ কার্যকারিতা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকার কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ।
টিকাদান কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা ব্রিটিশ মন্ত্রী নাদিম জাহায়ি বলেন, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার ৯০ শতাংশ কার্যকারিতার এই তথ্য অবিশ্বাস্য এক ইতিবাচক প্রভাবের প্রতিফলন।
এর আগে গত বছর ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত আরেক গবেষণায় বলা হয়, কোভিশিল্ড ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অধিকাংশ অংশগ্রহণকারীকে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর সুরক্ষা দিতে পেরেছে।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি জানায়, তৃতীয় ধাপের ট্রায়ালে এই টিকার দুই ধরনের ডোজের তথ্য বিশ্লেষণে একটিতে ৯০ শতাংশ এবং অন্যটিতে ৬২ শতাংশ কার্যকারিতা দেখা গেছে। অর্থাৎ, গড়ে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে এ টিকা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। তবে ডোজের মাত্রা পরিবর্তন করে দিলে তা ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
অন্যদিকে ১৯ মার্চ এই টিকার ভ্যাকসিন নিয়ে পর্যালোচনা শেষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইএমই এটিকে ‘নিরাপদ ও কার্যকর’ অ্যাখ্যা দেয়। এই টিকার উপকার ঝুঁকির চেয়ে অনেক বেশি বলেও উল্লেখ করা হয় এই পর্যালোচনায়।
টিকা নেওয়ার পর কয়েকজনের রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে- এমন খবরে ইউরোপের ১৩টি দেশ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রয়োগ স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়ার পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে পর্যালোচনা শেষে ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি (ইএমএ) ভ্যাকসিনটিকে নিরাপদ অভিহিত করে।
অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার ‘কোনো সংযোগ নেই’ বলেও এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানিয়েছে সংস্থাটি।এই ধরনের কোনো সংযোগ থাকার বিষয়েও গবেষণা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেয় ইএমএ।
ব্রিটিশ ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে সঙ্গে নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি এই টিকা দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশেও। বাংলাদেশকে এই টিকা সরবরাহ করছে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট। এর মধ্যে সেখান থেকে কেনা টিকার মধ্যে এসেছে ৭০ লাখ ডোজ, আর ভারতের উপহার হিসেবে পাওয়া গেছে ৩২ লাখ ডোজ। সব মিলিয়ে এসেছে ১ কোটি ২ লাখ ডোজ।
মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে কোম্পানিটি বাংলাদেশে দুই চালান পাঠানোর পর আর টিকা দিতে পারছে না। এতে দেশজুড়ে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে সরকার চীনের সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি টিকা সংগ্রহের পথে পা বাড়ায়।
দ্রুত এই দুই কোম্পানির টিকা পেতে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সঙ্গে অন্যান্য প্রক্রিয়াও জোরদার করা হয়। টিকা কেনা ও দেশে উৎপাদনের আলোচনা চলছে। এর মধ্যে চীনের উপহার দেওয়া ৫ লাখ ডোজ টিকা দেশে এসেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৫৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ