বিশ্বেজুড়ে দিন দিন বেড়েই চলছে মুসলিম জনসংখ্যা। মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির এ হার বাড়তে থাকলে আগামী ৩৫ বছরেই বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগই হবে মুসলিম।
নরওয়ের ভারডেনস গ্যাঙ্গ-এর বরাতে আনাদোলু এজেন্সি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অব অসলো’র কালচারাল স্টাডিজ অ্যান্ড অরিয়েন্টাল ল্যাঙ্গুয়েজ বিভাগের এক গবেষক তুরস্কের আনাদোলু এজেন্সিকে জানান, নরওয়েতে প্রতি বছর অন্তত ৩ হাজার নরওয়েজিয়ান পবিত্র ধর্ম ইসলাম গ্রহণ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্স গবেষণা সংস্থার তথ্য মতে, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা ৭৩০ কোটি। এরমধ্যে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা ২৩০ কোটি। মুসলিম ১৮০ কোটি। হিন্দু ১১০ কোটি। ধর্মহীন মানুষ ১১০ কোটি আর। এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ১০০ কোটি।
গবেষণা সংস্থাটি প্রকাশ করে যে, বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টান মায়েরা সবচেয়ে বেশি শিশু জন্ম দেয়। কিন্তু আগামী ১৫/১৬ বছরে এ চিত্র বদলে যাবে। জরিপে উল্লেখ করা হয় যে, ২০১০-২০১৫ সালে জন্ম নেয়- খ্রিষ্টান ২২ কোটি ৩০ লাখ শিশু। মুসলিম ২১ কোটি ৩০ লাখ শিশু।
কিন্তু আগামী ২০৩০-৩৫ সাল নাগাদ এ চিত্র বদলে যাবে। সেখানে ২২ কোটি ৪০ লাখ খ্রিষ্টান শিশুর বিপরীতে মুসলিম শিশু জন্ম নেবে ২২ কোটি ৫০ লাখ বলে জানায় এ গবেষণা সংস্থা।
গবেষণায় আরো জানায়, ২০৬০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৯৬০ কোটিতে। আর এ জনসংখ্যার প্রায় ৭০ ভাগই হবে মুসলিম। মুসলিমদের মাঝে তরুণদের সংখ্যা হবে বেশি। ফলে তাদের প্রজনন হারও বেশি থাকবে বলে জানায় সংস্থাটি।
গবেষণা বলছে, ২০২০ সাল থেকে ২০৬০ সাল পর্যন্ত খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা বাড়বে ৮০ কোটি আর এর বিপরীতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর বাড়বে ১২০ কোটি।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণ সম্পর্কে নরওয়ের এক নারী নও-মুসলিম মনিকা সালমুক জানায়, ৪ বছর আগে বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে গবেষণা ও বিভিন্ন গ্রন্থ অধ্যয়নের পর সে ধর্ম হিসেবে ইসলামকে বেছে নেয়।
আবার সোলভা নাবিলা স্যাঙ্গেলিন নামের এক নারী জানায়, নরওয়েতে আশ্রয় নেয়া মুসলিম শরণার্থীদের সাহায্য করতে গিয়ে তাদের কাছ থেকে তিনি ইসলাম গ্রহণের অনুপ্রেরণা লাভ করেন।
বছর পাঁচেক আগে করা একটি গবেষণায় পিউ রিসার্চ সেন্টারের তরফে জানানো হয়, ২০৫০ সালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মুসলিমের বাস হবে ভারতে। সে সময় এ দেশের মুসলিম জনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩১১ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩১ কোট ১০ লাখ। যা বর্তমানে অর্থাৎ ২০২৩ সালে রয়েছে প্রায় ২০ কোটি।
এই গবেষনায় মার্কিন বিশেষজ্ঞ সংস্থা পিইডব্লু তথ্য দেয়, ২০১০-এ সমগ্র দুনিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১.৬ বিলিয়ন অর্থাৎ ১৬০ কোটি। এই প্রবণতা বহাল থাকলে বর্তমান শতকের শেষে মুসলিমরা সংখ্যায় ছাড়িয়ে যাবে খ্রিস্টানদের। গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, ইসলাম দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বাড়তে থাকা ধর্ম।
রিপোর্টে মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থাটি বলেছে, একদিকে মুসলিমরা সংখ্যায় বাড়ছে, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তাদের অভিবাসন হচ্ছে। তার সঙ্গে লিংক করা হচ্ছে ইসলামের নামে হিংসা, সন্ত্রাস ছড়ানো ইসলামিক স্টেট ও অন্য উগ্রপন্থী গোষ্ঠীগুলিকে। সব মিলিয়ে অনেক দেশেই রাজনৈতিক বিতর্কের কেন্দ্রে চলে এসেছে ইসলাম।
‘মুসলিমরা পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধমান ধর্মীয় গোষ্ঠী’। এই শিরোনামে তৈরি গবেষণা রিপোর্টিতে আরও বলা হয়, ২০১৫ সালে আমেরিকায় ছিল সব বয়সের ৩.৩ মিলিয়ন অর্থাৎ ৩৩ লাখ মুসলিম। যা মোট মার্কিন জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ। আর বর্তমানে মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধির ট্রেন্ড বা প্রবণতা একই থাকলে ২০৫০ নাগাদ আমেরিকার মোট জনসংখ্যার ২.১ শতাংশ হবে মুসলিমরা।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, মুসলিমদের একটা বড় অংশ, প্রায় ০.৬২ শতাংশের বাস এশিয়-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চলে। যার মধ্যে পড়ছে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, তুরস্ক। তবে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মুসলিম মানুষ থাকেন ইন্দোনেশিয়ায়। সমীক্ষায় এও বলা হয়, ২০৫০ নাগাদ গোটে ইউরোপের ১০ শতাংশ হবে মুসলিম নাগরিক।
এভাবেই বিশ্বব্যাপী মুসলিম অনুসারি বেড়ে চলেছে। পিউ রিসার্সের গবেষণায় প্রকাশ পায়, ‘এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৩৫ বছরে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগই হবে মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
আপনার মতামত জানানঃ