পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গউ এভারেস্টের হিমবাহ ‘মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের’ কারণে গলে যাচ্ছে। যতটা সময় নিয়ে হিমবাহ তৈরি হয়, তার চেয়ে ৮০ গুণ দ্রুততার সঙ্গে এটি গলছে। এর মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু এলাকাতেও পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের গত বছরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নেচার পরিচালিত সাময়িকী ক্লাইমেট অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক সায়েন্সে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গবেষণাটি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মেইনের একদল বিজ্ঞানী ও পর্বতারোহীর তত্ত্বাবধানে।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও রোলেক্স পারপেচুয়াল প্ল্যানেট এভারেস্ট এক্সপেডিশন নামে ২০১৯ সালে এভারেস্টে একটি অভিযান চালানো হয়। বিজ্ঞানী ও পর্বতারোহীরা এভারেস্টের হিমবাহে ভ্রমণ করেন এবং সেখানকার নমুনা সংগ্রহ করেন। তথ্য সংগ্রহের জন্য তাঁরা সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া স্টেশনও প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের গবেষণার পরই এভারেস্টের হিমবাহ উদ্বেগজনক হারে গলে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়।
এরই ধারাবাহিকতায় জানা গেছে, জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে হিমালয়ের হিমবাহগুলো এখন ৬৫ শতাংশ বেশি দ্রুত গলছে। এর জেরে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা। এশিয়ার প্রায় ২০০ কোটি মানুষের পানির উৎস হিমালয়ের এই হিমবাহগুলো।
কাঠমান্ডুভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনটিগ্রেটেড মাউন্টেইন ডেভেলপমেন্টের (আইসিআইএমওডি) এক গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, হিমালয়ের হিমবাহগুলো ২০১১ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময়ে আগের দশকের তুলনায় ৬৫ শতাংশ বেশি হারে হারিয়ে গেছে। এভাবে গলতে থাকলে চলতি শতকের মধ্যে হিমবাহগুলোর ৮০ শতাংশ উধাও হয়ে যাবে।
হিন্দুকুশ হিলালয় অঞ্চলের (এইচকেএইচ) হিমবাহগুলো আশপাশের পাহাড়ি এলাকার ২৪ কোটি মানুষের পানির উৎস। এ ছাড়া নিচের দিকে নদী উপত্যকার আরও ১৬৫ কোটি মানুষ হিমালয়ের পানির ওপর নির্ভরশীল।
আইসিআইএমওডির প্রতিবেদনের প্রধান লেখক ফিলিপাস ওয়েসটার বলেন, তাপমাত্রা বাড়লে হিমবাহগুলো গলবে, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এগুলো গলছে অস্বাভাবিক হারে, দ্রুততার সঙ্গে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যেমনটা ভেবেছিলাম, তার চেয়ে বেশি গতিতে গলছে।’
গঙ্গা, সিন্ধু, মেকং, হোয়াংহো (ইয়েলো), ইরাবতীসহ বিশ্বের বড় বড় ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানির উৎস হিমালয়ের হিমবাহগুলো এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কোটি কোটি মানুষের খাদ্য, জ্বালানি ও দূষণমুক্ত বায়ুর জোগান দেয়। একই সঙ্গে বিপুলসংখ্যক এই মানুষের জীবিকাও অনেকটাই এর ওপর নির্ভরশীল।
এর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি মেনে যদি বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ে, তাহলে হিমবাহের অর্ধেক ২১০০ সালের মধ্যে গলে নিঃশেষ হবে। আর যদি বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্পযুগের আগের অভীষ্ট দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে, এরপরও ৩৬ শতাংশ হিমবাহ উধাও হবে।
তবে আইসিআইএমওডি বলছে, যে হারে এখন গলছে, তাতে চলতি শতকেরই মধ্যেই ৮০ শতাংশ হিমবাহ উধাও হয়ে যাবে।
আইসিআইএমওডি একটি আন্তসরকার সংস্থা। এর সদস্যদেশের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার ও পাকিস্তান। সংস্থাটির উপপ্রধান ইজাবেলা কোজিল বলেন, ‘হিমালয়ের হিমবাহ ও যে তুষার এখানে জমা আছে, তা থেকে পাওয়া পানির ওপর এশিয়ার ২০০ কোটি মানুষ নির্ভরশীল। হিমবাহের এই গলন এতটাই দ্রুত গলছে যে এর ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া কঠিন।’
এসডব্লিউএসএস/১৯১৫
আপনার মতামত জানানঃ