প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার সমুন্নত রেখে অবাধ এবং সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
দোহার র্যাফেলস হোটেলে কাতার ইকোনমিক ফোরামে (কিউইএফ) “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথোপকথন” শীর্ষক এক অধিবেশনে তিনি বলেন, আমাদের সরকারের অধীনে অবশ্যই নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হবে। কিউইএফ-এর হোস্ট এবং এডিটর ইনচার্জ হাসলিন্দা আমিন অনুষ্ঠানস্থল জনাকীর্ণ হল রুমে এই অধিবেশন পরিচালনা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এখানে এসেছি আমাদের জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে। জনগণই ঠিক করবে কে দেশ চালাবে। এটা জনগণের ক্ষমতা। তাই, আমি জনগণের ক্ষমতা নিশ্চিত করতে চাই। তিনি আরো বলেন, আমি এখানে ক্ষমতা দখল করার জন্য আসিনি বরং আমি জনগণের ক্ষমতায়ন করতে চাই, যাতে তারা তাদের সরকার বেছে নিতে পারে।
কিছু দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণে অনাগ্রহ রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কীভাবে অংশগ্রহণ করবে? কারণ, তাদের সময় দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমাদের জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সে সময় সন্ত্রাস, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও শোষণ ছিল সর্বত্র। তারা কখনই মানুষকে গণনায় ধরতো না।
তিনি বলেন, আমাদের জনগণের জন্য একদিনে একবেলা খাবার জোটানোই খুব কঠিন ছিল। এটাই ছিল তাদের অবস্থা।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার দল যখন আবার ক্ষমতায় আসে, তারা জনগণের জন্য সবকিছু নিশ্চিত করেছে। তাই, এখন নির্বাচন, এটা জনগণের অধিকার। তিনি বলেন, এখন, মানুষ বুঝতে পারে। তারা যদি আমাদের ভোট দেয়, আমি এখানে থাকব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা চিন্তা করুন, মি. ট্রাম্প এখনো ফলাফল মেনে নেননি। তারা এখন কী বলতে পারেন?
তিনি বলেন, যারা পর্যবেক্ষক পাঠাতে চায় তাদের ইতোমধ্যেই বলেছি তারা পাঠাতে পারে। তিনি বলেন, আমি এখানে আমার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে এসেছি এবং এটি আমাদের সংগ্রাম। প্রধানমন্ত্রী বিএনপির নাম উল্লেখ না করে হাসলিন্দা আমিনের প্রশ্নের জবাবে বলেন, দলটি একজন সামরিক শাসক দ্বারা গঠিত হয়েছে।
ওই দল বা যুদ্ধাপরাধী দল বা আমাদের বাবা-মায়ের খুনিরা হয়তো স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না। কিন্তু, অন্যরা, আরও অনেক দল আছে এবং তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। সুতরাং, আমি বুঝতে পারছি না কেন বারবার এই প্রশ্ন করা হচ্ছে?’
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে যখন তার বাবাকে হত্যা করা হয়-তখন সামরিক স্বৈরশাসক সমস্ত ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিল। তখন তারা সমস্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ করে ফেলে। তিনি আরো বলেন, ১৯৮১ সালে আমার দল-বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আমার অনুপস্থিতিতেই আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। এরপর থেকে গণতন্ত্রের জন্য আমার সংগ্রাম চলছে।
আইএমএফ ঋণ সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি সুন্দরভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এটা এমন নয় যে-আমাদের অর্থনীতি সংকটে আছে। এই ঋণ কেবল আমাদের অর্থনীতিকে সুরক্ষিত করবে। শেখ হাসিনা বলেন, আইএমএফ শুধু সেই দেশকে ঋণ দেয়, যারা তাদের ঋণ পরিশোধ করতে পারে।
তিনি আরো বলেন, তারা (আইএমএফ) প্রথমে মনে করেছিল যে তারা যাদের ঋণ দিচ্ছে, তারা তা ফেরত দিতে পারবে কি না। বাংলাদেশ এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব শুধু বাংলাদেশ নয়, সব দেশেই পড়ছে। আমরা আমাদের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে নবায়নযোগ্য শক্তি, সৌর বিদ্যুৎ ও অন্যান্য বিকল্প খুঁজছি।
হাসলিন্দা আমিন বলেন, ভারতের মতো দেশ রাশিয়ার কাছে অনেক কম দামে তেল চাইছে। তিনি প্রশ্ন করেন, রাশিয়া তাদের জন্য সম্ভাব্য সরবরাহকারী কিনা? জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, রাশিয়া থেকে আমরা কখনোই তেল কিনিনি। যেখানেই তেল পাওয়া যাবে, নিশ্চিতভাবেই আমরা তা নেব, কেন নয়?
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুবই পরিষ্কার। আমি শুধু দর্শকদের বলতে চাই যে, বাংলাদেশ অনুসরণ করে-সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরীতা নয়। তিনি বলেন, আরেকটি বিষয় আমার উল্লেখ করা উচিত যে-দেশে দেশে বিরোধ থাকতে পারে, কিন্তু আমরা কখনই এতে হস্তক্ষেপ করিনি। আমরা কখনই পক্ষপাতমূলক ভূমিকা পালন করব না।
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের দেশের উন্নয়ন করতে হবে। আমাদের জনগণের চাহিদা পূরণ করতে হবে। আমাদের দেশের উন্নয়ন করতে হবে- যাতে আমাদের দেশের মানুষ উন্নত জীবন পায়।
এসডব্লিউএসএস/২০১০
আপনার মতামত জানানঃ