আধুনিক এসির জনক হিসেবে আলোচনায় যার নামটি সর্বপ্রথম আসে, তিনি হলেন আমেরিকান প্রকৌশলী হ্যাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার। ১৯০২ সালে উইলিস হ্যাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার প্রথম বৈদ্যুতিক এয়ার কন্ডিশনার আবিষ্কার করেন। সেই এসি মূলত শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল।
হ্যাভিল্যান্ড একটি ছাপাখানায় কাজ করতেন। সেখানকার বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে ঠিকঠাক কাজ করা সম্ভব হচ্ছিল না। উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মূলত এই যন্ত্রের নকশা করা হয়েছিল। বাতাসের আর্দ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ছাপা কাগজের আকার ও কালির যথার্থ ব্যবহার ঠিক রাখতে এসি ব্যবহার শুরু হয়েছিল। ১৯০৬ সালে তিনি এসির জন্য আমেরিকান সরকারের পেটেন্ট পান।
মূলত কর্মক্ষেত্রের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য তিনি এসি আবিষ্কার করেছিলেন। ১৯১৫ সালে আরো ছয় প্রকৌশলীসহ তিনি ৩২ হাজার ৬০০ ডলার খরচ করে ‘ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন’ প্রতিষ্ঠা করেন। আজ ক্যারিয়ার কর্পোরেশন বিশ্বের বৃহত্তম এয়ার কন্ডিশনার প্রস্তুতকারক। তারা ১৯১৬ সালে শিকাগোর একটি গরুর খামারে প্রথম এসি বসান। ১৯২৬ থেকে বাসাবাড়িতে এসি ব্যবহার শুরু হয়।
১৯৫০ সালের ৭ অক্টোবর হ্যাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার মারা গেলেও থেমে থাকেনি ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং। ১৯৭৯ সালে আমেরিকার ‘ইউনাইটেড টেকনোলজিস’ ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কিনে নিলেও ব্র্যান্ডের নাম বদলানো হয়নি। ১৭০ টি দেশে ক্যারিয়ার বাজারজাত করে থাকে।
এর আগে ১৮২৪ সালে রেফ্রিজারেশন নীতি আবিষ্কারের ফলে তরল অ্যামোনিয়া বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বাতাসকে শীতল করার পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। ১৮৪০ সালে পদার্থবিদ ও চিকিৎসক জন গরি উচ্চ তাপমাত্রা থেকে নগরবাসীকে বাঁচাতে ফ্লোরিডার শহরগুলোকে শীতল করার ধারণা প্রস্তাব করেন। তার মতে, ম্যালেরিয়ার মতো বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের একমাত্র সমাধান হতে পারে এই শীতলীকরণ পদ্ধতি।
কৃত্রিম শীতলীকরণ পদ্ধতির ধারাবাহিকতায় জন গরি কমপ্রেশার ব্যবহার করে রেফ্রিজারেটর তৈরি করেন, কিন্তু তিনি পেটেন্ট নিতে ব্যর্থ হন। এরপর উইলিস হ্যাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার এয়ারকন্ডিশন আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত বেশ কিছু বছর কৃত্রিম শীতলীকরণ এই ব্যবস্থার কাজ বন্ধ ছিল।
১৯১৫ সালে ক্যারিয়ার ও ছয় প্রকৌশলী মিলে বিশ্বের বৃহত্তম এসি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালে আবাসিক গৃহে এসির ব্যবহার শুরু হয়। তখন এসিতে অ্যামোনিয়া, প্রপেন ও মিথাইল ক্লোরাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহৃত হতো।
১৯২৮ সালে টমাস মিগলি জুনিয়র ফ্রেয়ন আবিষ্কারের মাধ্যমে আবাসিক, শিল্প ও বাণিজ্যিক কাজে মানুষের জন্য নিরাপদ এসি উদ্ভাবন করেন। ১৯৩০ সালে হোয়াইট হাউস শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত করা হয়।
তবে ক্যারিয়ারের উদ্ভাবিত এসি এতটাই বিশাল ছিল যে এটি রাখতে একটি ঘরের প্রয়োজন হতো। ফলে বড় বড় কারখানা ছাড়া এই এসি তেমন একটা ব্যবহার করা যেত না। পরবর্তী সময়ে ১৯৪৫ সালে রবার্ট শেরম্যান পোর্টেবল এসি আবিষ্কার করেন, যা জানালার পাশে রেখে ব্যবহার করা যেত।
এই এসি ঘরের বাতাসকে ফিল্টার করার পাশাপাশি গরমের দিনে ঘর ঠান্ডা রাখত এবং শীতের দিনে ঘর গরম রাখত। ১৯৫০ সালের ৭ অক্টোবর হ্যাভিল্যান্ড ক্যারিয়ার মারা যান। ১৯৭৯ সালে আমেরিকার ইউনাইটেড টেকনোলজিস ক্যারিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কিনে নেয়।
১৯৪৬ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে এসি উৎপাদনের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। সে বছর ৩০ হাজার এসি উৎপাদিত হয়। ১৯৫৩ সালেই তা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এরপর প্রতিবছরই উৎপাদন বেড়েছে কমবেশি। এর মধ্যে প্রযুক্তির পরিবর্তন হয়েছে। নতুন ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেই প্রযুক্তি বিশ্বের সব দেশ কমবেশি তা গ্রহণ করেছে।
তবে এসি ব্যবহারে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়, সে জন্য ইদানীং এসিতে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০১০
আপনার মতামত জানানঃ