প্রেমের টানে পটুয়াখালীর বাউফলের কনকদিয়া ইউনিয়নের এক তরুণ ও কিশোরী পালিয়েছিলেন বাড়ি থেকে। ঘটনাটি মিমাংসার জন্য ডাকা সালিশে খোদ চেয়ারম্যানই বিয়ে করে ফেললেন ওই কিশোরীকে। চেয়ারম্যানের এমন কাণ্ডে অবাক হয়েছেন এলাকাবাসী।
শাহিন হাওলাদারের (৬০) ইউপি নির্বাচনে গত ২১ জুন কনকদিয়া ইউনিয়নের দ্বিতীয়বার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। তিনি আবার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগেরও সভাপতি।
জানা যায়, ঘটনার আগে থেকেই চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের প্রথম স্ত্রী পটুয়াখালী অবস্থান করছেন। তবে এ বিষয়ে তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। চেয়ারম্যানের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। ছেলে বিবাহিত।
গত শুক্রবার (২৫ জুন) ওই কিশোরীর সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসেন তিনি। এলাকায় বেশ চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা ঘটনাটি স্থানীয় প্রশাসনও গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এদিকে সালিশে এমন বিচার দেখে কিশোরীর সঙ্গে পালানো তরুণ (২৫) আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। শুক্রবার রাত থেকে বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি আছেন তিনি।
যা ঘটেছিল সালিশে
সূত্র মতে, দীর্ঘদিন ধরে কনকদিয়া ইউনিয়নের নারায়ণপাশা গ্রামের এক তরুণের সঙ্গে একই ইউনিয়নের ওই কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক। কিশোরী অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। এদিকে, প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি মেয়ের বাবা। তাই গত তিন দিন আগে এই প্রেমিক-প্রেমিকা বাসা থেকে পালিয়ে যায়। এরপর কিশোরীর বাবা তাদেরকে পাশের বাড়ির এক আত্মীয়ের বাসা থেকে ধরে নিয়ে আসেন। সেই সঙ্গে বিষয়টি সমাধানের জন্য চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারকে জানান। শাহিন হাওলাদার শুক্রবার ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ ডাকেন। বৈঠকে দুই পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে কিশোরীকে দেখে পছন্দ হয়ে যাওয়ায় অভিভাবকের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেন চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার। মেয়ের বাবা বিয়েতে সম্মতি প্রকাশ করলে ওইদিন বাদ জুমা চেয়ারম্যানের আয়লা বাজারের বাসায় কাজি ডেকে পাঁচ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে করেন।
যদিও সালিশের কথা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান মো. শাহিন হাওলাদার। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই কিশোরীর সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি পারিবারিকভাবে জানা ছিল সবার। আমার বিয়ের প্রয়োজন থাকায় সবাইকে অবগত করেছি। একপর্যায়ে গত ২১ জুন নির্বাচনে জয়ী হয়ে ওইদিন রাতেই তার সঙ্গে বিয়ের কাবিন করেছি। পরে পারিবারিকভাবে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সেরে তাকে আমার ঘরে নিয়ে আসি। বিয়েতে উভয়পক্ষের লোকজন উপস্থিত ছিল।
বিয়ে নিয়ে বিভ্রান্তি
জানা যায়, কনকদিয়া ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজি স্থানীয় মুছা মাওলানার ছেলে বিবাহ সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু তার নাম বলতে পারেননি চেয়ারম্যান। এ বিষয়ে চেয়ারম্যান বলেন, এই মুহূর্তে তার নাম আমার মনে নেই। আমার নিকটাত্মীয় হাফেজ আবু সাদেক বিয়ের সময় দোয়া ও মিলাদ পড়িয়েছেন।
এদিকে, হাফেজ আবু সাদেক জানান, কাবিন ও বিয়ে শুক্রবারই হয়েছে। কিন্তু চেয়ারম্যান যে বলেছেন, ‘২১ জুন কাবিন হয়েছে’ এমন প্রশ্নের জবাবে হাফেজ সাদেক বলেন, সেটা তিনিই ভালো জানেন। আমি শুক্রবার তাদের পাঁচ লাখ টাকা কাবিন করিয়েছি। আমার কাছে কাগজপত্রসহ প্রমাণ আছে। সেখানে মেয়ের বাবা, চাচা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাল্যবিবাহের অভিযোগ!
মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে, এ প্রসঙ্গে হাফেজ আবু সাদেক জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ দাখিল করেছে। সেখানে তার বয়স ১৮ দেখানো হয়েছে। তা দেখেই কাবিন করিয়েছি। তাছাড়া সেখানে মেয়ে ও মেয়ের বাবা-চাচাসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকায় আমরা বিস্তারিত যাচাই করিনি।
একই প্রশ্নের জবাবে চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদার জানান, সে তিন বছর আগে নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। বর্তমানে সে লেখাপড়া করে না। জন্মসনদ অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ২০০৩ সালের ১১ এপ্রিল।
তবে জন্ম তারিখের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে ওই কিশোরীর বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরিমল চন্দ্র জানান, সে বর্তমানে অষ্টম শ্রেণীর নিয়মিত শিক্ষার্থী। শুক্রবার চেয়ারম্যান শাহিন হাওলাদারের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর বিয়ের ঘটনা কিছুক্ষণ আগে লোকমুখে শুনেছেন এবং তিনি অবাক হয়েছেন এতে।
কিশোরীর বাবা বলেন, সালিশে আমি বলেছি, আজকে যদি এর একটা ব্যবস্থা না হয় তাহলে আমি আর মেয়ে নেবো না (ওই ছেলের সঙ্গে দিয়ে দেবে)। এ কথার জবাবে চেয়ারম্যান বলেন, ‘তাহলে আপনার মেয়েকে আমার কাছে দিয়ে দেন, মেয়েকে আমি নিয়ে যাই’। রাগের মাথায় আমি বলেছি, আপনি নিয়ে যান। এতে যে এ ঘটনা ঘটবে আমি তা বুঝতে পারিনি।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আল মামুন জানান, লোকমুখে ঘটনা শুনেছি। তবে মেয়ের পক্ষ থেকে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। যদি বাল্যবিয়ের অভিযোগ পাওয়া যায়, তবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাকির হোসেন জানান, মেয়ের বয়স নির্ধারণ নিয়ে ইতোমধ্যে যাচাই-বাছাই শুরু করেছি। তার জন্মসনদ এবং স্কুলের সার্টিফিকেট সবকিছু আমরা সংগ্রহ করেছি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫৩০
আপনার মতামত জানানঃ