যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের অ্যালেন শহরে বসবাসরত একটি বাংলাদেশী পরিবারের ছয় সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, পরিবারের দুই কিশোর সদস্য অন্য চারজনকে হত্যা করে নিজেরাও আত্মহত্যা করেছে।
দুই ভাই ‘সুইসাইড নোট’ রেখে গেছেন। এই নোট থেকে মনে করা হচ্ছে, তারা হতাশায় ভুগছিলেন। পরিবারকে লজ্জা ও কষ্ট থকে মুক্তি দেওয়ার জন্য দুই ভাই সবাইকে হত্যা করে নিজেরা আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে সুইসাইড নোটে উল্লেখ রয়েছে। পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে।
স্থানীয় সময় রোববার (৪ এপ্রিল) দিবাগত রাত একটার দিকে নগরীর পাইন ব্লাফ ড্রাইভ এলাকার বাড়িটির দরজায় কড়া নাড়ে পুলিশ। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে পুলিশ কোনো ফোন কল পায়নি বলে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, ওই পরিবারের এক বন্ধু তাদের ফোন করে পাচ্ছিলেন না। এরপর তারা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ ওই ঘরে ছয়জনের লাশ দেখতে পায়। বন্দুকের গুলিতে ছয়জন মারা গেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। বাড়িটি থেকে বন্দুকও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হলেন ১৯ বছর বয়সী যমজ ভাই-বোন ফারহান তৌহিদ ও ফারবিন তৌহিদ, বড় ভাই তানভীর তৌহিদ (২১), মা আইরিন ইসলাম (৫৬), বাবা তৌহিদুল ইসলাম (৫৪), তানভীর তৌহিদের নানি আলতাফুন্নেসা (৭৭)।
অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, দুই ভাই চারজনকে হত্যার পর নিজেরা আত্মহত্যা করেছেন বলে মনে হচ্ছে। মানসিক বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পেতে তারা এই কাজ করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা পাওয়া গেছে।
পুলিশ বলছে, ঘটনার আগে ফারহান তৌহিদ ইনস্টাগ্রামে একটি দীর্ঘ ‘সুইসাইড নোট’ পোস্ট করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, সে তার ছোট বোন ও নানীকে হত্যা করবে। আর তার বড় ভাই খুন করবে তাদের মা-বাবাকে। সবাইকে শেষ করে দেওয়ার পর তারা নিজেরা আত্মহত্যা করবে। ফলে কষ্ট পাওয়ার মতো আর কেউ থাকবে না।
ফারহান আরও লিখেছেন, কীভাবে তিনি নবম শ্রেণি থেকে মানসিক হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তার বড় ভাইও হতাশার সঙ্গে লড়াই করেছেন।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ফারহান লেখেন, তার ভাই বলেছেন, ‘আমরা যদি এক বছরে সবকিছু ঠিক করতে না পারি, তবে আমরা নিজেদের ও পরিবারকে হত্যা করব।’
অ্যালেন পুলিশ জানিয়েছে, ২২ বছর বয়সী তানভীর তৌহিদ আইনসম্মতভাবে সম্প্রতি আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয় করেছিলেন।
মরদেহ উদ্ধারকারী অ্যালেন পুলিশের সার্জেন্ট জন ফেলটিকে বলেছেন, তিনি ২১ বছর ধরে শহরটিতে আছেন। এমন দুঃখজনক ঘটনার মুখোমুখি তিনি আগে কখনো হননি। পুরো ঘটনাকে মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গত শনিবার কোনো এক সময় মর্মান্তিক এ ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। মেডিকেল পরীক্ষার পর এ বিষয়ে জানা যাবে বলে নগরীর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
মর্মান্তিক এ হত্যাকাণ্ডের খবর চাউর হওয়ার সোমবার বিকালে ঘটনাস্থলে জড়ো হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাসের সদস্যরা। তাদের একজন শাওন আহসান জানান, তিনি ১১ বছর ধরে পরিবারটিকে চেনেন। তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। আহসান জানান, নিহত তৌহিদুল ইসলাম তার তিন সন্তানের জন্য গর্বিত ছিলেন।
এ হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে আহসান মনে করছিলেন তার সঙ্গে মজা করা হচ্ছে। তার ভাষায়, ‘সত্যি কথা বলতে আমি ২০ মিনিট ধরে ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারিনি। অফিসে বসে কাঁদছিলাম।’
ওই পরিবারের পরিচিত দিলারা হাসান বলেছেন, এমন কোনো ঘটনা এই পরিবারে ঘটতে পারে বলে তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না। বাইরে থেকে পরিবারটিকে সুখী বলেই তার মনে হয়েছে।
মর্মান্তিক ঘটনার শিকার বাংলাদেশি পরিবারটির কোনো নিকটাত্মীয় আশপাশে নেই। বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস লাশ দাফনের ব্যবস্থা করছে।
ডালাস ও আশপাশের নগরীতে বসবাসরত প্রায় ২০ হাজার বাংলাদেশির প্রতিনিধিত্ব করে বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব নর্থ টেক্সাস। অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হাশমত মোবীন জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ স্থানীয় কবরস্থানে দাফনের জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে স্থানীয় সময় আগামীকাল বুধবার ছয়জনের জানাজার পর দাফন হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
হাশমত মোবীন জানান, প্রায় ২২ বছর আগে ডিভি ভিসায় তৌহিদুল ইসলাম আমেরিকায় আসেন। তৌহিদুল ইসলামের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুনান ঢাকায়। পরিবার নিয়ে প্রথম দুই বছর নিউইয়র্কে ছিলেন। ২০ বছর আগে তারা টেক্সাসে স্থানান্তর হন। প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তিতে কাজ করলেও সম্প্রতি সিটি ব্যাংকের ভালো পদে কাজ করছিলেন তৌহিদুল।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১২৪৯
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগীতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগীতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগীতার অনুরোধ জানাচ্ছি।
[wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ