তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে এখন তীব্র আলোড়ন। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান ঘটিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অবশেষে নিজ ভূমিতে পা রাখতে যাচ্ছেন—এ খবরেই যেন নড়ে উঠেছে রাজনৈতিক মঞ্চ। গুলশান-২-এর অভিজাত এলাকায় ছায়াঘেরা ডুপ্লেক্স বাড়িতে তার ফেরার প্রস্তুতি এখন সম্পূর্ণ। এক সময়কার রাজনৈতিক বিতর্ক, আদালতের রায়, মামলার পর মামলা—সবকিছু পেছনে ফেলে বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই। একে একে সব সাজা বাতিল হয়ে গেছে আদালতের রায়েই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ায় তার দেশে ফেরার পথ সুগম হয়েছে।
এই বাড়িটিই একসময় খালেদা জিয়ার ছিল—যেখানে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তাকে বসবাসের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই বাড়িই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ভাড়া দেওয়া হয়, আর এখন তা নিজের পুত্রের নামে নামজারি করে দিয়েছেন বেগম জিয়া। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কাগজপত্র হস্তান্তর করেছেন, যা রাজনৈতিক অর্থেও এক অনন্য বার্তা। বাড়ির নিরাপত্তা, স্থাপত্য ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও এটি একটি প্রস্তুত যুদ্ধদুর্গ—যেখানে রাজনীতির নতুন যুদ্ধের রণকৌশল নির্ধারিত হবে।
তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবর যেমন রাজনৈতিক মাঠকে উত্তপ্ত করে তুলেছে, তেমনি এটি হয়ে উঠেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ও উদ্দীপনার উৎস। দীর্ঘদিন দলের কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন লন্ডন থেকে। সেই সময়কালে মা খালেদা জিয়া ছিলেন কারাগারে, দল ছিল চাপে, এবং মামলা-মোকদ্দমা ছিল নিত্যসঙ্গী। অথচ সেই সময়ই তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব গ্রহণ করে দলের হাল ধরেছিলেন, বিদেশ থেকে দূরদর্শী নেতৃত্ব প্রদানের চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতেই বিগত আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক মামলায় সাজা দিয়েছে তাকে—যা রাজনৈতিক হয়রানি হিসেবেই গণ্য করেছে বিএনপি।
কিন্তু সময় বদলেছে। একদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন, অন্যদিকে বদলে যাওয়া আন্তর্জাতিক ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপট। একে একে সাজা মাফ হয়ে যাওয়া, নতুন মামলায় খালাস পাওয়ার মাধ্যমে আইনি বাধা দূর হয়েছে। বিএনপি নেতাদের মতে, এখন তার দেশে ফেরার পথে আর কোনো বাধা নেই—এমনকি প্রশাসনিকভাবেও সবুজ সংকেত মিলেছে।
এই প্রেক্ষাপটে তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ঘটনা নয়, এটি হচ্ছে একটি রাজনৈতিক মোড়বদলের পূর্বাভাস। তারেক রহমান ফিরছেন এমন এক সময়ে, যখন দেশের রাজনীতি অপেক্ষাকৃত উন্মুক্ত, যখন এক নতুন নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। গুলশানের ডুপ্লেক্স বাড়িটি শুধু একটি আবাসস্থল নয়, বরং এটি হতে পারে বিএনপির নতুন রাজনৈতিক ঘাঁটি—যেখানে বসেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, দল পুনর্গঠন, নির্বাচনী রণনীতি নির্ধারিত হবে।
বিশেষ করে উল্লেখযোগ্য যে, তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানও লন্ডনে ফেরার আগে এই বাড়িটি পরিদর্শন করে গেছেন, অর্থাৎ পারিবারিক প্রস্তুতিও সম্পূর্ণ। এদিকে দলীয় নেতাদের সূত্র অনুযায়ী, নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলেই তার দেশে ফেরার দিন নির্ধারিত হবে। তবে অনেকে মনে করছেন, ৫ আগস্টের আগেই তিনি ফিরতে পারেন, যাতে নির্বাচনের আগেই নিজ হাতে দলের প্রস্তুতি গোছাতে পারেন।
এখানে তার ফেরাকে কেন্দ্র করে যেমন দলীয় চেতনার জাগরণ ঘটছে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও একধরনের কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তিনি কী বার্তা দেবেন, কী রাজনৈতিক ভাষ্য নিয়ে ফিরবেন, কোন কৌশলে মাঠে নামবেন—এসব প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে নানা মহলে। অনেকে তাকে আগামী দিনের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও দেখছেন। তার ওপর নির্ভর করছে বিএনপির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা ও নির্বাচনী কৌশল।
রাজনীতির এই নতুন অধ্যায়ে, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ব্যক্তির ফেরা নয়—এটি হতে পারে একটি নতুন রাজনৈতিক ঢেউয়ের সূচনা। তাঁর গুলশানের বাড়িতে আলোকসজ্জা শেষ, নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাউন্ডারির ওপর বসানো হয়েছে বাড়তি লোহার ফ্রেম, সুইমিং পুলসহ অত্যাধুনিক অভ্যন্তর—সবই যেন অপেক্ষা করছে সেই মুহূর্তটির জন্য, যেদিন এই বাড়ির ফটক খুলে ঢুকবেন বিএনপির ভবিষ্যতের কাণ্ডারি।
শুধু বিএনপির নেতাকর্মীরা নয়, পুরো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন অপেক্ষায়—তারেক রহমান ফিরছেন, এই বার্তাটি বাস্তব রূপ পায় কি না, তা দেখার জন্য। বাংলাদেশে রাজনীতির নতুন এক সূর্যোদয়ের পূর্বক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে জাতি, যেখানে ইতিহাসের চাকা ঘুরতে পারে আবার নতুন করে।
আপনার মতামত জানানঃ