একাদশ গ্লোবাল বাকু কনফারেন্সে বিশেষ বক্তা হিসেবে ভাষণ দিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার বক্তৃতায় তিনি প্রতিটি মানুষের উদ্যোক্তা-শক্তিকে বিকশিত করার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সম্পদ কেন্দ্রীকরণের বিপরীত প্রবাহ সৃষ্টি করতে এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে কমিউনিটিগুলোকে নিজ নিজ সমস্যার সমাধানকল্পে ক্ষমতায়িত করার আহ্বান জানান।
বুধবার ইউনূস সেন্টার থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার পথিকৃত হিসেবে এই দুটি ক্ষেত্রে তাঁর বিপুল অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে একটি তিন শূন্য – অর্থাৎ শূন্য নিট কার্বন নিঃসরণ, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ ও শূন্য বেকারত্বের পৃথিবী গড়ে তোলার লক্ষ্যে পৃথিবীকে পুনর্গঠিত করতে উদ্ভাবনমূলক সমাধান ও সহযোগিতামূলক কর্মকাণ্ডের উপর জোর দেন তিনি।
আজারবাইজানের বাকুতে ১৪-১৬ মার্চ অনুষ্ঠিত এই একাদশ বিশ্ব বাকু ফোরামের মূল বিষয়বস্তু ছিল “Fixing the Fractured World”।
নিজামী গানজাভি ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে অংশ নেন বিশ্বের খ্যাতনামা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বহু রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সংস্থার বর্তমান ও প্রাক্তন প্রধান, ও নোবেল লরিয়েটগণ সহ প্রায় ৪০০ বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরস আধানম গেবরেইসুস, নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী কৈলাস সত্যার্থী, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট মিস কেরি কেনেডিসহ বহু খ্যাতিমান ব্যক্তি সম্মেলনে অংশ নেন।
একাদশ বিশ্ব বাকু ফোরামে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরস আধানম গেবরেইসুসের সাথে দ্বি—পাক্ষিক বৈঠকে আলোচনারত নোবেল লরিয়েট প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে তাঁরা মহামারী—পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা এবং মাঠ পর্যায়ের অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন।
ফোরামে বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ ও নোবেল লরিয়েটগণের উপস্থিতি পৃথিবীর সবচেয়ে জরুরি চ্যালেঞ্জগুলোর, যেমন- দারিদ্র বিমোচন, স্বাস্থ্যসেবায় অধিকার, টেকসই পরিবেশ নিশ্চিত করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমন্বিত কর্মপ্রচেষ্টার গুরুত্ব বহন করে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নজীরবিহীন বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে গ্লোবাল বাকু কনফারেন্স সকলের জন্য একটি অধিকতর সমৃদ্ধ ও সুসমঞ্জস্য ভবিষ্যত গড়ে তোলার গুরুত্বকে আবারো সামনে নিয়ে এলো।
সম্মেলনের সময় প্রফেসর ইউনূস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. টেডরস আধানম গেবরেইসুস এবং UNAIDS -এর নির্বাহী পরিচালক ও জাতিসংঘের অন্যতম আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ড. উইনি বিয়ানইমার সাথে দ্বি-পক্ষীয় বৈঠক করেন। এই বৈঠকগুলোতে তারা মহামারি পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা এবং মাঠ পর্যায়ের অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারসমূহ নিয়ে আলোচনা করেন।
এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস-এর প্রেসিডেন্ট মিস কেরি কেনেডির সঙ্গে একটি তিন শূন্য’র পৃথিবী গড়ে তুলতে ইউনূসের রূপকল্প নিয়ে এক ফায়ারসাইড চ্যাটে অংশ নেন।
একাদশ গ্লোবাল বাকু সম্মেলনের শেষ দিনে প্রফেসর ইউনূসকে ইউনেস্কোর “দি ট্রি অব পিস” পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। অনুষ্ঠানের সমাপনী নৈশভোজে তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেয়া হয়।
বাকুতে অবস্থানকালে আজারবাইজানের প্রধানমন্ত্রী মি. আলী আসাদভের আমন্ত্রণে প্রফেসর ইউনূস আজারবাইজান সরকার প্রধানের সাথে এক বিশেষ বৈঠকে মিলিত হন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আজারবাইজানের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে প্রফেসর ইউনূসের কর্মসূচিগুলোর ভূয়সী প্রশংসা করেন।
ভবিষ্যতে এই সহযোগিতা সম্প্রসারণের সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেন।
এছাড়াও প্রফেসর ইউনূস আজারবাইজান স্টেট ইকোনমিক ইউনিভার্সিটিতে ইউনূস সোশ্যাল বিজনেস সেন্টারের নয়নাভিরাম কার্যালয় উদ্বোধন করেন।
আজারবাইজান স্টেট ইকোনমিক ইউনিভার্সিটিতে ইতিমধ্যেই সামাজিক ব্যবসা কোর্স চালু করা হয়েছে। সামাজিক ব্যবসার উপর বিভিন্ন কর্মশালাও পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রফেসর ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে এক মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেক্টর প্রফেসর আদালাত মুরাদভ ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল ইউরেশিয়া প্রেস ফান্ড-এর চেয়ারম্যান মি. উমুদ মির্জায়েভ এবং আজারবাইজানের খ্যাতিমান লেখক মি. চিংগিস আবদুল্লায়েভ যোগ দেন।
আপনার মতামত জানানঃ