ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণ করে গত ২৩ আগস্ট। ওই দিন চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামে চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার বিক্রম। চাঁদে অবতরণের পর থেকেই নানা তথ্য পাঠাচ্ছে বিক্রম। এবার চাঁদে কম্পন ও প্রাকৃতিক বস্তুর অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়েছে।
বিক্রমে থাকা লুনার সিসমিক অ্যাকটিটিভি (আইএলএসএ) এই ঘটনা রেকর্ড করেছে। বৃহস্পতিবার ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) নতুন এই বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা জানিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
ছয়টি উচ্চ সংবেদনশীল একসেলেরোমিটারের সমন্বয়ে আইএলএসএ গঠিত। দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিলিকন মাইক্রোমেশিনিং প্রক্রিয়ায় এটি তৈরি করা হয়েছে। এর মূল সেন্সরটি চিরুনির মতো ইলেকট্রোডসহ একটি স্প্রিং-মাস সিস্টেম দিয়ে গঠিত।
মূলত চাঁদের ভূমিকম্প রেকর্ড করার জন্য আইএলএসএ তৈরি করা হয়েছে। চাঁদে কোনো ধরনের কম্পন অনুভূত হলে স্প্রিংটি স্থানচ্যুত হয়।
ভারতীয় মহাকাশযান চন্দ্রযান–৩ চাঁদে অবতরণের দুই দিন পর গত ২৫ আগস্ট চাঁদে কম্পনের ঘটনা রেকর্ড করে বলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পোস্ট করে জানায় ইসরো।
সব শঙ্কা কাটিয়ে ২৩শে আগস্ট চাঁদের বুকে সফলভাবে অবতরণ করেছে ভারতের মহাকাশযান চন্দ্রযান-৩। বুধবার ভারতের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪ মিনিটে চন্দ্রযান-৩–এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে। এর মধ্য দিয়ে চাঁদে মহাকাশযান অবতরণকারী দেশের তালিকায় যুক্ত হলো ভারত।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) চন্দ্রযান-৩–এর অবতরণের দৃশ্য সরাসরি সম্প্রচার করে। লাখো মানুষ এই সম্প্রচারের সাক্ষী হন। এ উপলক্ষে দেশটির সব স্কুল খোলা রাখা হয়। ব্রিকস সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকায় থাকা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চ্যুয়ালি ইসরোর আয়োজনে যুক্ত হন।
চন্দ্রযান-৩ যেখানে নেমেছে, চাঁদের ওই অঞ্চলে বরফপানি অথবা জমাটবাঁধা বরফ রয়েছে। এতে স্থানটি পানির পাশাপাশি হতে পারে অক্সিজেন ও জ্বালানির উৎস, যা ভবিষ্যতে আরও চন্দ্রাভিযান অথবা স্থায়ীভাবে চাঁদে বসতি গড়তে সহায়ক হতে পারে।
চন্দ্রযান-৩–এর সফল অবতরণের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পাতায় ভারত নিজেদের নাম লেখাল, যারা প্রথমবারের মতো চাঁদের রহস্যময় দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে।
এর আগে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন চাঁদের বুকে সফলভাবে নভোযান অবতরণ করিয়েছে। এখন তাদের সঙ্গে চতুর্থ দেশ হিসেবে যোগ হয়েছে ভারতের নাম।
প্রায় একই সময়ে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের জন্য লুনা-২৫ নামের মহাকাশযান পাঠিয়েছিল রাশিয়া। তবে রাশিয়ার মহাকাশযানটি গত শনিবার চাঁদে বিধ্বস্ত হয়। এর মধ্য দিয়ে ৪৭ বছরের মধ্যে রাশিয়ার প্রথম চন্দ্রাভিযান ব্যর্থ হয়।
২০১৯ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছে অবতরণের উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান-২ পাঠিয়েছিল ভারত। কিন্তু অভিযানটি ব্যর্থ হয়।
গত ১৪ জুলাই ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশকেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-৩ উৎক্ষেপণ করা হয়। চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’, রোভারের নাম ‘প্রজ্ঞান’। ল্যান্ডারটি উচ্চতায় ২ মিটারের মতো, ওজন ১ হাজার ৭০০ কেজির বেশি। আকারে ছোট রোভারের ওজন ২৬ কেজি মাত্র। এই রোভারই চাঁদের বুকে ঘুরে ঘুরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালাবে।
এসডব্লিউএসএস/১২২০
আপনার মতামত জানানঃ