রাজধানী ঢাকায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সমাবেশ প্রসঙ্গ উঠে এসেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রেস ব্রিফিংয়ে। এছাড়া মহাসমাবেশকে ঘিরে নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তারে বিএনপির অভিযোগের বিষয়টিও পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে উঠেছে।
ওই ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছে, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনও স্থান নেই। এছাড়া বাংলাদেশে আলাদা করে কোনো রাজনৈতিক দলকে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করে না বলেও জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রিন্সিপাল ডেপুটি স্পোকসপারসন বেদান্ত প্যাটেল। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে ব্রিফিংয়ের বিস্তারিত বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠছে। বিরোধী দল বিএনপি তাদের জনসভা ২৭ জুলাই থেকে একদিন পিছিয়ে শুক্রবারে নির্ধারণ করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও পাল্টা রাজনৈতিক সমাবেশের আয়োজন করছে।
ক্ষমতাসীন এই দলটি বিরোধীদের সভা-সমাবেশকে রাষ্ট্রের ওপর সহিংসতার উস্কানি হিসেবে বিবেচনা করে। এছাড়া ক্ষমতাসীন দলের পাল্টা কর্মসূচির সুবিধার্থে বিরোধীদের সমাবেশে বাধা দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র অতিরিক্ত সময় কাজ করছে।
পুলিশ হাজার হাজার বিরোধী কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে বলে বিরোধী দল অভিযোগ করেছে। শাসকদল রাজপথে যেভাবে সহিংসতাকে উস্কে দিচ্ছে তাতে বাংলাদেশের এই সংঘাতময় পরিস্থিতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
জবাবে প্যাটেল বলেন, আমি গতকাল এই বিষয়ে একটু কথা বলেছিলাম এবং আমি খুব স্পষ্ট করেই সেসব কথা বলেছি। আমি আমার আগের কথাই পুনর্ব্যক্ত করে বলব, গণতন্ত্রে রাজনৈতিক সহিংসতার কোনও স্থান নেই এবং যুক্তরাষ্ট্র, আমরা কোনও রাজনৈতিক দলের পক্ষপাতী নই।
তিনি আরও বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে বাংলাদেশের লক্ষ্যকে আমরা সমর্থন করি। আমরা এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বের ওপরও জোর দিয়েছি। আমরা নিশ্চিতভাবেই বিশ্বাস করি যে, এই প্রচেষ্টায় রাজনৈতিক সহিংসতার কোনও স্থান বা সুযোগ নেই।
উল্লেখ্য, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে শুক্রবার দুপুরে ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এছাড়া একইদিন একই দাবিতে পৃথকভাবে সমাবেশ করবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোও।
অন্যদিকে শুক্রবার দুপুরে ঢাকার বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনমনে উত্তেজনার আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেলে ২৩ শর্তে বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে সমাবেশের অনুমতি দেয় পুলিশ।
এদিকে, সাম্প্রতিক আর এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ দল সংসদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৯টি আসনে জয়লাভ করে। সে নির্বাচনে ব্যাপক ভোট কারচুপি, ব্যালট বাক্স ভর্তি করা এবং ভয়ভীতি দেখানো হয়েছিল। নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের হয়রানি এবং সহিংসতার কারণে স্বাধীনভাবে নির্বাচনী প্রচারণা ও সমাবেশ করা তাদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল।
এই রিপোর্টের সাথে সংযুক্ত ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ‘ইন্টিগ্রেটেড কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজি’ রিপোর্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আরো বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। ২০২২ সালের জুলাই মাসে এটি প্রকাশ করা হয়।
এখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০১৮ সালের ‘ত্রুটিপূর্ণ’ নির্বাচনের পর নাগরিক অধিকারের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও অন্যান্যভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা, আইনের শাসন, শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার সক্ষমতা এবং বাক-স্বাধীনতার মতো জায়গাগুলো সংকুচিত করা হয়েছে।
সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণের কারণে গণতান্ত্রিক জায়গাগুলো যদি সংকুচিত হতে থাকে এবং এর কোন উন্নতি না হয়, তাহলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যেমন নষ্ট হতে পারে তেমনি মানবাধিকারও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘ইন্টিগ্রেটেড কান্ট্রি স্ট্র্যাটেজি’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে কারণ এর মধ্য দিয়ে নির্ধারণ হবে বাংলাদেশ কি আরও ‘গণতান্ত্রিক’ দিকে নাকি ‘স্বৈরতন্ত্রের’ দিকে এগিয়ে যাবে। গণতন্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের উন্নতি না হলে আমেরিকার সাথে সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
এসডব্লিউএসএস/২১২০
আপনার মতামত জানানঃ