নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জামফারা রাজ্যের একটি মসজিদে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী। এ ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার জুমার নামাজের সময় বুক্কুয়ুমের রুয়ান জেমা শহরের জুমুআত কেন্দ্রীয় মসজিদে এ হামলা চালানো হয়। খবর রয়টার্সের।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জামফারা প্রদেশের রুয়ান জেমা শহরের বুক্কুয়ুম স্থানীয় সরকার এলাকায় অবস্থিত জুমুআত কেন্দ্রীয় মসজিদে গত শুক্রবার জুমার নামাজের সময় এই হামলা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটে বলে সেখানকার তিন বাসিন্দা রয়টার্সকে জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আমিমু মুস্তাফা বলেছেন, ‘সশস্ত্র দস্যুরা মোটরবাইকে এসে তাদের বন্দুক নিয়ে সোজা মসজিদে চলে যায় এবং বিক্ষিপ্তভাবে আমাদের গুলি করতে শুরু করে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক বাসিন্দা জানান, স্থানীয় সময় দুপুর ২টার দিকে এই হামলাটি হয়। হামলায় আরও অনেকে আহত হয়েছেন।
জামফারা প্রাদেশিক পুলিশের মুখপাত্রের কাছে বাসিন্দাদের দেওয়া এই তথ্য নিশ্চিত করার জন্য ফোনকল বা ক্ষুদেবার্তা দেওয়া হলেও তাৎক্ষণিকভাবে তিনি কোনো জবাব দেননি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
রয়টার্স বলছে, স্থানীয়ভাবে ডাকাত নামে পরিচিত ভারী অস্ত্রধারী এসব সন্ত্রাসীরা গত দুই বছরে উত্তর-পশ্চিম নাইজেরিয়াজুড়ে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এসময় সেখানে তারা হাজার হাজার অপহরণের ঘটনা ঘটানোর পাশাপাশি শত শত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেছে। এতে করে আফ্রিকার এই দেশটির এসব এলাকায় ভ্রমণ করা অনিরাপদ হয়ে উঠেছে।
সশস্ত্র দস্যুরা মোটরবাইকে এসে তাদের বন্দুক নিয়ে সোজা মসজিদে চলে যায় এবং বিক্ষিপ্তভাবে আমাদের গুলি করতে শুরু করে।’
এর আগে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে নাইজেরিয়ার একটি মসজিদে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে বেশ কয়েকজন মুসল্লিকে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জামফারা প্রদেশের জুগু শহরের জুমুআত কেন্দ্রীয় মসজিদে ঘটে এ ঘটনা।
জামফারার রাজধানী গুসাউ থেকে জুগুর দুরত্ব ১৭০ কিলোমিটার। সন্ত্রাসীরা যখন হানা দেয়, সে সময় মসজিদটিতে আসরের নামাজ চলছিল।
সংবাদমাধ্যম সেসময় জানায়, মসজিদে ঢোকার পরেই কাপড়ের আড়াল থেকে অস্ত্র বের করে ফাঁকা গুলি ছোড়ে সন্ত্রাসীরা এবং সেখান থেকে বেশ কয়েকজন মুসল্লিকে জিম্মি করে নিয়ে যায়।
গত কয়েক বছর ধরে দেশজুড়ে গড়ে ওঠা বেশ কিছু সশস্ত্র সন্ত্রাসীগোষ্ঠী ও জঙ্গি সংগঠন বোকো হারামের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নাইজেরিয়াবাসী। স্থানীয়ভাবে এসব সন্ত্রাসীগোষ্ঠীকে ‘ডাকাতদল’ বলা হয়। যেকোনো সময়, দেশের যে কোনো গ্রামে-শহরে হামলা চালায় এই ডাকাতদল।
সাধারণত মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে এসব ডাকাতদল আসে; হামলাস্থলে এলোপাথাড়ি গুলি চালায়, লুটপাট করে এবং মুক্তিপণের জন্য অপহরণ করে।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ বুহারি গত জানুয়ারির প্রথম দিকে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর থেকে নাইজারের বিভিন্ন স্থানে সামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে সংঘাত হচ্ছে এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর।
নাইজেরিয়ায় মসজিদে হামলার ঘটনা এই প্রথম নয়। গত বছর ডিসেম্বরে দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় একটি গ্রামের মসজিদে বন্দুকধারীদের হামলায় ১৬ জন মুসল্লি নিহত হন।
তখন এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকারের চেয়ারম্যান আলহাসান ইসা মাজাকুকা জানিয়েছিলেন, নাইজার প্রদেশের মাশেগু এলাকার বা’আর গ্রামে কয়েক ঘণ্টা ধরে এ হামলা চালানো হয়। কয়েক ডজন আততায়ী মোটরসাইকেলে করে এসে গ্রামে এই হামলা চালায়। এ সময় আততায়ীরা মসজিদে নামাজিদের হত্যা করে এবং গ্রাম লুটপাট করে।
তবে, পুলিশের দাবি করে, ওই ঘটনায় নয় জন নিহত হয়েছে। যদিও নাইজেরীয় পুলিশের বিরুদ্ধে এ ধরনের হামলায় হতাহতের সংখ্যা কম করে দেখানোর অতীত অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, এই হামলাকারীদের একটি বড় অংশ ফুলানি জাতিগোষ্ঠীর যুবকদের নিয়ে গঠিত। ঐতিহ্যগতভাবে একসময় এসব যুবক গবাদি পশুপালক হিসেবে কাজ করতেন। পানি ও চারণভূমি দখল নিয়ে হাউসা কৃষক সম্প্রদায়ের সঙ্গে তাদের কয়েক দশক ধরে দ্বন্দ্ব চলছে।
এসব বন্দুকধারীরা ক্রমেই সংগঠিত ও সশস্ত্র হচ্ছে নাইজেরিয়ায়। তবে, এখনও প্রকাশ্যে তারা কোনো রাজনৈতিক আদর্শ বা উদ্দেশ্যের কথা ঘোষণা করেনি।
নাইজেরিয়ার একজন গভর্নর সম্প্রতি বলেছেন, এ ধরনের বেআইনি দলের সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়েছে। এসব দলের নাম নেই বা পরিচিত কোনো নেতাও নেই। নাইজেরিয়ার একটি আদালত তাদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবেও ঘোষণা করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৩
আপনার মতামত জানানঃ