সীমান্ত হত্যার সংখ্যা শূন্যতে আনা এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত— দুই দেশই সম্মত হয়েছে কয়েক বছর আগে। এরপরও সেটা বন্ধ হয়নি। বরং বেড়েছে। আবারও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি এক যুবক নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। গুলিতে আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন একজন।
উপজেলার শিংনগর সীমান্তে মঙ্গলবার(৩০ আগস্ট) রাতের কোনো একসময় এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
নিহত ৩০ বছর বয়সী ভেদু শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের মুনশিপাড়া সাহাপাড়ার তাজির উদ্দিন তাজুর ছেলে বলে জানা গেছে।
পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন মুনশিপাড়ার মাওলানাপাড়ার আজিজুল ইসলামের ছেলে ২৩ বছরের ওহিদুল ইসলাম।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শিংনগর সীমান্ত দিয়ে ১০-১২ জনের একটি দল অবৈধভাবে ভারতে গরু আনতে যায়। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে গরু নিয়ে ফেরার সময় ভারতের দৌলতপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা গুলি ছুড়লে ভেদুর মৃত্যু হয়।
স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য সেরাজুল ইসলাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘ভেদুকে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে দেখতাম। এখন গরু আনতে গেল, না কী কারণে গেল বলতে পারছি না। শুনছি বিএসএফের গুলিতে মারা গেছে। তবে লাশ কুণ্ঠে আছে খইতে পারছি না।’
৫৩ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাহিদ হোসেন জানান, সীমান্তে হতাহতের ব্যাপারে তার কাছে কোনো তথ্য নেই। গোলাগুলির বিষয়ে বিজিবি কিছুই জানে না। এমনকি বিএসএফের দিক থেকেও কিছু জানানো হয়নি।
নানা সময়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের শীর্ষ পর্যায়ের সম্মেলনে সীমান্তে নন-লিথ্যাল উইপন (প্রাণঘাতী নয়) অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার ব্যাপারে সদিচ্ছার কথাও বলেন নীতিনির্ধারকরা। এমনকি উভয় দেশের মধ্যে রাজনৈতিক পর্যায়ের আলোচনায়ও সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত; কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন খুব কমই চোখে পড়ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হত্যার ঘটনা উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলেছে।
সীমান্তে নিরস্ত্র বাংলাদেশি নাগরিকদের বেআইনিভাবে হত্যায় বাংলাদেশের উদ্বেগের বিষয়টি নয়াদিল্লিতে খুবই কম গুরুত্ব পেয়েছে। এখনও পর্যন্ত কোনো বাংলাদেশিকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্যের বিবরণ বাংলাদেশকে দেয়নি ভারত। ভারত সরকারের কোনো সুনির্দিষ্ট অনুমোদন না থাকলে অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি বিএসএফকেও ফৌজদারি কার্যবিধির বাইরে রাখা হয়। বিএসএফ সদস্যদের এমন জবাবদিহিতার বাইরে থাকাই সীমান্ত হত্যার ঘটনাগুলোকে বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকরা বলেন, ভালো প্রতিবেশী দেশ সীমান্তে চলাচলকারীদের সঙ্গে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আচরণ করে। ভারত সরকারের এটা নিশ্চিত করা উচিত যে তার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী মানুষের মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান করছে এবং আইনের শাসন অনুসরণ করছে। বিএসএফ এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারে জাতিসংঘের সাধারণ নীতিমালা মেনে চলার জন্য প্রকাশ্যে আদেশ দেওয়া উচিত। বিএসএফের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থা এখনও পর্যন্ত তার সদস্যদের বিচার করতে পারেনি। ভারত সরকার বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে নির্যাতনের মামলাগুলো তদন্তের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩৮
আপনার মতামত জানানঃ