বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বলা হয়। এই বিভাগ যেকোনো দেশ ও জাতির একটি স্থায়ী সম্পদ। তারা আইন ও নীতি-নৈতিকতার ব্যাপারে উচ্চতর স্থানে থাকার কথা। অথচ সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে পুলিশের কিছু সদস্য বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।
সম্প্রতি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় তিন বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা আমলে না নিয়ে উল্টো আসামিদের ফোন করে বাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মুরাদনগর থানার এসআই বোরহান উদ্দিনের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) সকালে স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেয় ভুক্তভোগী পরিবার। এদিকে, অভিযুক্ত এসআই বোরহান উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
শিশুটির বাবা বলেন, ‘গত ১৮ আগস্ট সকালে আমি আমার মুরাদনগর সদরের বাসা থেকে ৩ বছরের একমাত্র মেয়েকে উপজেলার পাহাড়পুর গ্রামে নানার বাড়িতে দিয়ে আসি। ওইদিন বিকালে তাকে নিয়ে আসার কথা থাকলেও জরুরি কাজ থাকায় যেতে পারিনি। পাহারপুর গ্রামের আমার মামাতো ভাই কামাল মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (১৬) ও শাহ জাহানের ছেলে সাদেক মিয়া (১৭) প্রায় আমার বাসায় আসা-যাওয়া করতো, সেই সুবাদে তারা আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমার বাসায় আসবে। তখন আমি তাদের দুজনকে আমার মেয়েকে নিয়ে আসার কথা বলি। ওরা আমার বাসায় বিকাল ৪টায় আসার কথা থাকলেও সন্ধ্যা ৬টার দিকে এসে মেয়েকে তাড়াহুড়া করে দিয়ে চলে যায়।’
শিশুটির বাবা আরও বলেন, ‘সোহাগ ও সাদেক চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার মেয়ে তার গোপনাঙ্গে ধরে কান্না করতে করতে বলে চাচ্চুরা আমাকে দুই হাতে ধরে রেখে অনেক মেরেছে। তখন আমার স্ত্রীর সন্দেহ হলে তার কাপর খুলে দেখেন রক্ত। মুরাদনগর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তারা বলে আমার মেয়ের গোপনাঙ্গে কিছু প্রবেশ করানো হয়েছে। ফলে সে ব্যথায় কাতরাচ্ছে।’
থানায় কর্মরত এসআই বোরহান আমাকে সহযোগিতা না করে উল্টো হয়রানি করতে থাকেন। আসামিদের না ধরে আমার সামনে তাদের ফোন করে মামলার বিষয়টি জানিয়ে দেন।
ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘পরে বিষয়টি নিয়ে আমি মুরাদনগর থানায় গেলে তারা আমাকে সকালে আসেন, বিকালে আসেন বলে নানা অজুহাতে ঘুরাতে থাকেন। এতেও কোনো কাজ না হওয়ায় স্থানীয় কিছু সংবাদকর্মীর সহযোগিতায় মঙ্গলবার সকালে আমি আমার স্ত্রীসহ লিখিত অভিযোগ নিয়ে থানায় যাই। তখন থানায় কর্মরত এসআই বোরহান আমাকে সহযোগিতা না করে উল্টো হয়রানি করতে থাকেন। আসামিদের না ধরে আমার সামনে তাদের ফোন করে মামলার বিষয়টি জানিয়ে দেন। এদিকে আমাকে বলা হয় বুধবার সকালে আসো, আমরা তোমার মামলা রুজু করবো।’
শিশুর বাবা বলেন, ‘খবর নিয়ে জানতে পারি এসআই বোরহান আসামিদের ফোন করে জানিয়ে দেওয়ার পর তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এখন আমি আমার মেয়ের বিচার পাওয়া নিয়ে খুব ভয়ে আছি।’
এবিষয়ে অভিযুক্ত মুরাদনগর থানার এসআই বোরহান উদ্দিন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি কোনো আসামি বাগিয়ে দেইনি, কিংবা ওই শিশুর পরিবারের কাউকে কোনো প্রকার হয়রানিও করিনি। অভিযোগ পেয়ে আমি ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিদের ফোন দিয়েছি। এখন যদি আসামি ভেগে যায় আমার কী করার আছে।’
মুরাদনগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পিযুষ চন্দ্র দাস বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানতে পেরে ওই শিশু ও তার বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে মঙ্গলবার বিকালে মামলা রুজু করার জন্য মুরাদনগর থানাকে বলে দিয়েছি। শিশুটি ছোট হলেও সে নিজেই আমার কাছে ঘটনার বিবরণ দিয়েছে, যেটা আমি কখনোই আশা করিনি। আসামিদের না ধরে বাগিয়ে দেওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই।’
বিশেষজ্ঞরা জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে ৬ মাসের মধ্যে এসব মামলার বিচার শেষ করার বিধান আছে৷ কিন্তু নানা অজুহাতে তা শেষ হয় না৷ অর্থ ও ক্ষমতার কারণে কিছু অসৎ পুলিশও প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে মামলা নিতে গড়িমসি করে। আবার মামলা নিলেও তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে টালবাহানা করে। কখনো টাকার বিনিময়ে অপরাধীদের বাঁচিয়ে প্রতিবেদন দিতে চেষ্টা করে দুর্নীতিপরায়ণ পুলিশ। কিংবা অপরাধী প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাদের না দেখার ভান করে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫২০
আপনার মতামত জানানঃ