ধর্ষণ, যৌন নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির মতো ঘটনায় ইমাম-মুয়াজ্জিনদের সংশ্লিষ্টতা এদেশে এখন ডালভাত হয়ে গেছে। ইমাম-মুয়াজ্জিনদের মধ্যে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এ ধরণের অপরাধ প্রবণতা। এবার চট্টগ্রামের সদরঘাট থানার পূর্ব মাদারবাড়ী এলাকায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ঝাড়-ফুকের মাধ্যমে চিকিৎসার নামে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মো. আশিকুল ইসলামে (৩৪) নামের এক মুয়াজ্জিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২ জুন) সন্ধ্যায় জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল পেয়ে সদরঘাট থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
শুক্রবার (৩ জুন) ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা।
তিনি বলেন, ভিকটিমের পরিবার সদরঘাট থানার পূর্ব মাদারবাড়ী এলাকায় থাকেন। ভিকটিম চট্টগ্রামের একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। গত তিন মাস ধরে অসুস্থ সে। এ জন্য তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ডাক্তারের চিকিৎসা করা হয়। কিন্তু সুস্থ হয়নি। একপর্যায়ে ভিকটিমের বাবাকে বাসার মালিকের ভাই জানান, স্থানীয় হাজী নসু মালুম মসজিদের মুয়াজ্জিন মো. আশিকুল ইসলাম (৩৪) ঝাড়-ফুক দিয়া চিকিৎসা করান। পরে ভিকটিমের বাবা মুয়াজ্জিন মো. আশিকুল ইসলামকে দিয়ে তার মেয়েকে ঝাড়-ফুক দিয়া চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ভিকটিমের বাসায় এসে আশিকুল ভিকটিমকে দেখে তার মা-বাবাকে বলেন, তাকে জ্বীন আছর করেছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, মুয়াজ্জিন একপর্যায়ে বলেন মেয়েটিকে ঝাড়-ফুকের মাধ্যমে দ্রুত চিকিৎসা না করালে তিন দিনের মধ্যে মারা যাবে। এসময় চিকিৎসা খরচ বাবদ ২১ হাজার টাকা দাবি করেন আশিকুল। ভিকটিমের বাবা ভয়ে তার মেয়েকে চিকিৎসা করাতে নগদ ১০ হাজার টাকা দেন। তখন মুয়াজ্জিন মেয়েটিকে ঝাড়-ফুকের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু করেন।
একপর্যায়ে আশিকুল বলেন, ভিকটিম মেয়েটিকে দরজা-জানালা বন্ধ করে রুমের মধ্যে একা রেখে চিকিৎসা করতে হবে। এ কথায় রাজি হয়ে রুম থেকে মেয়েটির মা-বাবা বের হয়ে যান। এ সুযোগে মো. আশিকুল ইসলাম মেয়েটির স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। প্রায় পাঁচ মিনিট পর মেয়েটি রুম থেকে বের হয়ে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। তখন আশিকুলকে আশপাশের লোকজনের সহায়তায় আটক করে রেখে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ কল করেন পরিবারের সদস্যরা। এরপর সদরঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আসামি আশিকুলকে গ্রেপ্তার করে।
পুলিশের কর্মকর্তা নোবেল চাকমা বলেন, এ ঘটনায় সদরঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
দেশের মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের খবরে শিউরে উঠছে সারা দেশ। যদিও মসজিদ-মাদ্রাসাগুলোতে ক্রমবর্ধমান এই ধর্ষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই সরকারের। দেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও সরব নয়। নেই বার্ষিক কোন প্রতিবেদন। তাই এই সব নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র থেকে যাচ্ছে অজানা।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের পর শিশুরা লজ্জা, ভয়, নানান কিছুর কারণে তা প্রকাশ করে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে শিশুদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সবথেকে কম কথা বলা হয়। এর কারণ হয়তো সেক্স, অপ্রাপ্তবয়স্ক ভুক্তভোগী এবং ধর্মের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে মানুষের অন্ধবিশ্বাস।
মসজিদের ইমাম কিংবা মাদ্রাসা শিক্ষক কর্তৃক একের পর এক শিশু ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মসজিদ-মাদ্রাসা বিষয়ে দেশবাসীর নিকট এক নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকে মনে করেন এরা আদব কায়দা শিক্ষা দেন। নৈতিকতা শিক্ষা দেন। সে কারণে ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে হোক বা নিরাপত্তার কথা ভেবে অনেকে ছেলেমেয়েদের মাদ্রাসায়/মক্তবে পড়াতে দেন। কিন্তু বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, যে নিরাপত্তার কথা ভেবে ছেলেমেয়েদের পড়াতে দেয়া হয় সেখানে আদৌ নিরাপদ নয়। দেখা যায় ছেলেরাও নিরাপদ নয় এসব তথাকথিত হুজুরদের কাছে। এটিও সমাজের বৈকল্যতা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৫৮
আপনার মতামত জানানঃ