চাঁদে এবার আরও সহজ হতে পারে মানুষের বসবাস। কারণ যে কোনও জায়গায় শহর গড়তে গেলে প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে অক্সিজেন সবার সবার আগে প্রয়োজন হয়। তবে যদি গাছ না থাকে তাহলে অক্সিজেন মিলবে না। তাই চাঁদকে মানুষের বসবাসযোগ্য করে তুলতে বিজ্ঞানীদের যুগের পর যুগ ধরে চলা গবেষণার সফলতার দিকে আরও এক ধাপ অগ্রসর হল।
পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ নিয়ে বহুদিন ধরেই গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। চাঁদে বসবাস সম্ভব কি না সেই বিষয়েও গবেষণা চলছে। পৃথিবীর বাইরে কোথাও বসতি গড়তে হলে সেখানে অনেক কিছুরই প্রয়োজন হবে। তার মধ্যে সবার আগে দরকার হবে অক্সিজেন।
চাঁদে ছেয়ে গেছে সবুজ গাছপালা, ফলছে নানা শস্য, শাকসবজি; কথাগুলো শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও বিজ্ঞানীরা এ পথেই হাঁটছেন। সেই চেষ্টায় সফলও তারা। চাঁদ থেকে আনা মাটিতে প্রথমবারের মতো সফলভাবে গাছ জন্মিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত, গত শতকে যুক্তরাষ্ট্রের চন্দ্রাভিযানের সময় ওই মাটি পৃথিবীতে আনা হয়েছিল।
গাছ জন্মানোর পেছনে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। এ নিয়ে তাঁদের গবেষণাপত্রটি গত বৃহস্পতিবার জীববিজ্ঞানবিষয়ক আন্তর্জাতিক সাময়িকী কমিউনিকেশনস বায়োলজিতে প্রকাশ করা হয়েছে।
গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের একজন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচার সায়েন্সের (আইএফএএস) অধ্যাপক রব ফেরল।
তার ভাষ্যমতে, আগামী দিনগুলোতে মহাকাশে বড় পরিসরে অভিযান চালাবে মানুষ। এ সময় চাঁদকে মহাকাশযান উৎক্ষেপণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে। ফলে অক্সিজেন ও খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সেখানে গাছপালা লাগানোর প্রয়োজন পড়তে পারে।
এমন চিন্তা থেকেই মাথায় আসে চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানোর পরিকল্পনা। সে অনুযায়ী কাজে নেমে পড়েন রব ফেরল। সঙ্গে ছিলেন আইএফএএসের আরেক অধ্যাপক অ্যানা লিসা পলসহ কয়েকজন।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার কাছে সংরক্ষিত চাঁদের মাটি পেতে আবেদন করেন তাঁরা। গত শতকে নাসার অ্যাপোলো ১১, ১২ ও ১৭ অভিযানের সময় চাঁদ থেকে ওই মাটি সংগ্রহ করা হয়।
নাসা জানায়, মূলত অ্যাপোলো অভিযানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মানোর পরীক্ষাটি করার কথা ভাবেন বিজ্ঞানীরা। ওই অভিযানে চাঁদের মাটি সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যই ছিল এটা নিয়ে ভবিষ্যতে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার।
১৯৬৯ সাল থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার চন্দ্রাভিযানের সময় নমুনা হিসেবে চাঁদ থেকে পৃথিবীতে মোট ৩৮২ কিলোগ্রাম পাথর আনা হয়।
সেই পাথর ভেঙে গুঁড়ো করা মাটিতেই গাছ গজানোর কাজটি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ফ্লোরিডার কয়েকজন বিজ্ঞানী। চাঁদ থেকে আনা মাটি থেকে মাত্র ১২ গ্রাম মাটি নিয়ে তাতে পানি ও সার যুক্ত করে গাছ জন্মিয়েছেন তারা।
চাঁদের মাটি পেতে গবেষকেরা নাসার কাছে আবেদন করেছিলেন ১১ বছর আগে। অবশেষে বছর দেড়েক আগে মাটি দিতে রাজি হয় সংস্থাটি। তাও মাত্র ১২ গ্রাম মাটি পাঠানো হয়।
অল্প এই মাটি নিয়েই কাজে লেগে পড়েন গবেষকেরা। তাতে মেশানো হয় পানি আর বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান। এরপর সেই মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয় ‘থ্যাল ক্রেস’ নামের একটি গাছের বীজ।
ছোট আকৃতির এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ‘আরাবিডোপসিস থালিয়ানা।’ এই গাছ ফুলকপি, সরিষা ও ব্রোকলির মতো একই উদ্ভিদ পরিবারের অংশ।
এত প্রচেষ্টার পরও চাঁদের মাটিতে গাছ জন্মাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন গবেষকেরা। তবে সব শঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে প্রায় সব কটি বীজ থেকে চারা বের হয়।
এ প্রসঙ্গে অ্যানা বলেন, ‘আমরা অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। এমনটি হবে তা ভাবিনি। এর অর্থ, চাঁদের মাটি গাছের জন্ম নিতে বাধা দেয় না।’
তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যাও গবেষকদের নজরে আসে। জন্ম নেওয়া চারাগাছগুলোর কয়েকটি আকারে ছোট, আর বেড়ে উঠতে অন্যগুলোর চেয়ে বেশি সময় নিচ্ছে।
এসডব্লিউ/এসএস/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ