পৃথিবীকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে জলবায়ু বিপর্যয়। আর তার প্রথম প্রভাব পড়তে চলেছে ৪২টি ছোট দেশের উপর। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যথাযথ পদক্ষেপ না নিলে বিশ্ব থেকে হারিয়ে যাবে ৪২টি ছোট দেশ।
এজন্য জাতিসংঘের আসন্ন সম্মেলনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে জানিয়েছেন কমনওয়েলথের মহাসচিব ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড। বুধবার (১৪ অক্টোবর) বার্তাসংস্থা এএফপি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে এএফপিকে ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অস্তিত্বের হুমকিতে রয়েছে বিশ্বের ৪২টি ছোট দেশ। আমাদের কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে- এমন কিছুই হবে না। তবে ছোট ছোট এই দেশগুলো হারিয়ে যাবে।’
কমনওয়েলথ জোটের নেতৃত্ব থাকা ডোমিনিকা বংশোদ্ভূত এই আইনজীবী ও সাবেক ব্রিটিশ মন্ত্রী ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া ইতালির রাজধানী রোম সফরের সময় জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে একথা বলেন। সফরে তিনি পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
তিনি বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপ দেশ টুভ্যালু ও নাউরুর মতো কমনওয়েলথের ছোট ছোট সদস্য রাষ্ট্রগুলো এখন নতুন কোনো জায়গায় যাওয়ার কথা ভাবছে। কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে এবং এটি এখন খুবই বিপজ্জনক।
এছাড়া নিজের দেশসহ বিভিন্ন দেশে একের পর এক হ্যারিকেন ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়েও উদ্বেগ জানান তিনি। ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া বলেন, ‘ডমিনিকাকে দেখতে সাধারণত গার্ডেন অব ইডেনের মতো মনে হয়। তবে ২০১৭ সালে হ্যারিকেন মারিয়া আঘাত হানার পর সেখানকার অনেক গাছের বাকল পর্যন্ত উঠে যায়, সেসব গাছে একটি সবুজ পাতাও অবশিষ্ট ছিল না। সেটিকে এখন একটি রণক্ষেত্র বলে মনে হয়।’
স্টকল্যান্ডের গ্লাসগোতে আগামী ৩১ অক্টোবর থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে কার্বনের ব্যবহার রোধ করা এবং বিপর্যয়কর বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে বিশ্বকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক চুক্তি বা সমঝোতায় পৌঁছানোই এই সম্মেলনের লক্ষ্য।
গ্লাসগোর এই জলবায়ু সম্মেলনের সাফল্যের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে বিপর্যয় থেকে পৃথিবীকে বাঁচানোর চেষ্টা কতটা কাজ করবে। সম্মেলনে কী হয় তার ওপর আগামী দিনগুলোতে সারা বিশ্বের মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে বড় রকমের পরিবর্তন আসতে পারে।
সম্মেলনের সময় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ গ্লাসগোতে হাজির হতে পারেন, যাদের মধ্যে থাকবেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দ, মীমাংসাকারী এবং সাংবাদিক। হাজার হাজার অ্যাক্টিভিস্ট এবং বহু ব্যবসায়ীও সেখানে উপস্থিত হবেন। রেবেলিয়ান এক্সটিংশনের মত কট্টর পরিবেশবাদী গোষ্ঠী এখনই জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করার দাবি করছে।
সম্মেলনের শেষে, একটি সর্বসম্মত ঘোষণা আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। যেখানে সুনির্দিষ্ট সব অঙ্গীকার লিখিত থাকবে এবং সব দেশকে সেই ঘোষণায় স্বাক্ষর করতে হবে।
ব্যারোনেস প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ডের ভাষায়, ‘আমরা সবাই একই ঝড়ের মধ্যে আছি। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই আমরা সবাই একই নৌকায় নেই।’
এসডব্লিউ/এসএস/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ