ভারত-অধিকৃত কাশ্মিরের একটি মন্দিরে এক পুলিশ সদস্যকে ভুলে জঙ্গি ভেবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গভীর রাতে প্রবেশের চেষ্টা করায় মন্দিরের নিরাপত্তা রক্ষীরা ওই পুলিশ সদস্যকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পুলিশ জানায়, অজয় ধর নামে এক পুলিশ সদস্য গভীর রাতে জোর করে মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করে। মন্দিরে দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা সন্দেহভাজন জঙ্গি ভেবে গুলি করে। পরে তাকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে।
বুধবার কাশ্মির পুলিশের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ওই পুলিশ সদস্য রাতের বেলা নিরাপত্তা রক্ষীদের বাধা উপেক্ষা করে মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। পরে নিরাপত্তা রক্ষীরা তাকে দেশবিরোধী মনে করে গুলি চালিয়ে হত্যা করে।
জানা যায়, নিহত পুলিশ কনস্টেবলের নাম অজয় ধর। তিনি কাশ্মিরের হ্যান্ডওয়ারার ল্যাংগাত এলাকার বাসিন্দা। এক বিবৃতিতে কাশ্মির পুলিশ অজয় ধরের প্রাণহানির এই ঘটনাকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে দুঃখপ্রকাশ করেছে।
পুলিশের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা বলেছেন, মঙ্গলবার গভীর রাতে পুলিশ কনস্টেবল অজয় ধর মন্দিরে প্রবেশের জন্য দরজায় ধাক্কাধাক্কি করলে সেখানকার নিরাপত্তা রক্ষী আকাশে ফাঁকা গুলি ছোঁড়েন।
কাশ্মির পুলিশের মহাপরিদর্শক বিজয় কুমার বলেন, ‘আকাশে ফাঁকা গুলি ছোঁড়া সত্ত্বেও তিনি (কনস্টেবল ধর) নিজের পরিচয় না জানিয়ে মন্দিরের দরজায় ধাক্কাতে থাকেন। এটি একেবারে পরিষ্কার ভুল বোঝাবুঝি। কারণ মন্দিরের নিরাপত্তা রক্ষী মনে করেছিলেন সেখানে হামলা হয়েছে।’
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ওই পুলিশ সদস্যের কানে হেডফোন লাগানো ছিল, সহকর্মীদের উচ্চশব্দ সত্ত্বেও তিনি সাড়া দেননি। পরে মন্দিরে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে গুলি করেন।
কাশ্মিরের বেশিরভাগ মন্দিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে কাশ্মিরে যে আতঙ্ক রয়েছে এই ঘটনা তার একটি উদাহরণ। অতীতেও কাশ্মিরে ভুল পরিচয় ভেবে রাতের আঁধারে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বেসামরিক লোকজনকে গুলি করে হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।
তালিবান আফগানিস্তানের মসনদ দখলের পর থেকেও নড়েচড়ে বসে কাশ্মীর প্রশাসন। জঙ্গি সহিংসতার আশঙ্কায় কাশ্মীর মুড়ে যায় নিরাপত্তার চাদরে। পাশাপাশি সম্প্রতি স্থানীয় সংবাদপত্রগুলোকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তালিবান তথা আফগানিস্তানের ব্যাপারে কোনও কিছু লেখা চলবে না।
১৫ আগস্ট আফগানিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি যখন দেশ ছাড়েন, কাশ্মীরের সংবাদপত্রগুলো সেই খবর প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশ করেছিল। পরের দিনই তথ্য কর্মকর্তার দফতর থেকে পত্রিকার সম্পাদকদের ডেকে বলে দেওয়া হয়, তালিবান কিংবা আফগানিস্তান প্রসঙ্গে কোনও খবর যদি তারা প্রকাশ করেন, তা হলে সরকারি বিজ্ঞাপন মিলবে না।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় একটি উর্দু পত্রিকার সম্পাদক বলেন, “তথ্য কর্মকর্তার দপ্তর থেকে আমাদের ডেকে পাঠানো হয়েছিল। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, আফগানিস্তান নিয়ে কোনও কিছু লেখা চলবে না।” লিখলে সরকারি বিজ্ঞাপন মিলবে না বলে কাশ্মীরের পত্রিকাগুলোর সম্পাদকদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১২৩০
আপনার মতামত জানানঃ