সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেই এখন শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ ক্লাসে অনুপস্থিত থাকছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ ঝরে যেতে পারে।
এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যালয়পড়ুয়া কিছু ছাত্রীর বিয়ে হওয়ার তথ্য বের হচ্ছে। আবার কিছু শিক্ষার্থী শিশুশ্রমে জড়িয়ে যাচ্ছে। অনেক অভিভাবক আবার করোনা সংক্রমণের কারণে শিশুকে স্কুলে পাঠাবেন কি না, তা নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের এই ঝরে পড়ার সংখ্যাটা বেশ বড়। কিছু ক্ষেত্রে তা প্রায় ৪০ শতাংশ।
ঝরে পড়তে পারে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রতিষ্ঠানগুলোর দৈনন্দিন তথ্য সংগ্রহ করছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের তদারক ও মূল্যায়ন শাখা। গুগল ডকসের (অনলাইনে) মাধ্যমে তারা এই তথ্যগুলো সংগ্রহ করছে। এই শাখার হিসাব অনুযায়ী ১৬ সেপ্টেম্বর গড় উপস্থিতি ছিল ৬০ শতাংশ। এদিন সারা দেশের ১৮ হাজার ৩৯২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছে তারা।
এতে প্রতিদিন ক্লাস হওয়া পঞ্চম (মাধ্যমিকের অনেক স্কুলে প্রাথমিক স্তরও আছে), দশম, এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে মোট শিক্ষার্থী ছিল ৪৯ লাখ ৩৩ হাজার ৮৪১ জন। এর মধ্যে উপস্থিত ছিল ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ জন। পঞ্চম শ্রেণিতে ৭৪ শতাংশ উপস্থিত ছিল। দশম শ্রেণিতে ছিল ৬৩, এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ৫৩, একাদশ শ্রেণিতে ৪৮ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে ৬৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
অবশ্য শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঝরে পড়ার প্রকৃত চিত্রটি জানা যাবে আরও কিছুদিন পরে। আর একেবারে প্রকৃত হিসাব পাওয়া যাবে আগামী ডিসেম্বরে শিক্ষাবর্ষ শেষ হলে।
প্রসঙ্গত, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়েছিল। করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী হওয়ায় ১২ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।
তবে এখন শুধু এ বছর ও আগামী বছরের এসএসসি–এইচএসসি পরীক্ষার্থী ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হচ্ছে। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে এক দিন করে ক্লাস হচ্ছে।
মাধ্যমিক পর্যায়ে যেদিন যে শ্রেণির ক্লাস থাকছে, সেদিন ওই শ্রেণির সর্বোচ্চ দুটি ক্লাস হচ্ছে। আর প্রাথমিকে দিনে তিনটি করে ক্লাস হচ্ছে। তবে এখন মাধ্যমিক পর্যায়ে অষ্টম ও নবম শ্রেণির ক্লাস আরও এক দিন করে বাড়িয়ে সপ্তাহে দুই দিন করা হয়েছে।
আগামীকাল সোমবার থেকেই নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। প্রাথমিক স্তরের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাসও এক দিন করে বাড়িয়ে দুই দিন করার চিন্তা চলছে।
বাংলাদেশে শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) ২০১৯ সালের তথ্যানুযায়ী দেশে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ১৭ দশমিক ৯০। আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ঝরে পড়ার হার ৩৫।
উপবৃত্তিসহ নানা ধরনের উদ্যোগের কারণে ঝরে পড়ার হার উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আগে ঝরে পড়ার হার অনেক বেশি ছিল। কিন্তু গত দেড় বছর বন্ধের কারণে এই ঝরে পড়ার হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক সৈয়দ গোলাম ফারুক বলেন, তিনি গতকাল বরিশাল এলাকার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়েছিলেন। সেখানকার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে জানতে পারেন, আটজন ছাত্রীর বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এই আটজনের মধ্যে আবার ছয়জন ক্লাসে ফিরেছে। বাকি দুজনকেও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।
আবার কোনো কোনো শিক্ষার্থী মাছ ধরার কাজেও যুক্ত হয়েছে। কিন্তু তারা আবার অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিচ্ছে। কেউ কেউ অন্য জায়গায় চলে গেলেও অ্যাসাইনমেন্ট পাঠাচ্ছে। ফলে, তারা ঝরে গেছে, তা বলা যাবে না।
শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযান। সংস্থাটির উপপরিচালক কে এম এনামুল হক বলেন, এটা ঠিক যে কিছু কিছু শিক্ষার্থীর বাল্যবিবাহ হয়েছে। কেউ কেউ শিশুশ্রমে জড়িয়েছে। কিন্তু ঝরে পড়ার বিষয়টি বোঝার জন্য আরও দু-এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
কারণ, করোনায় অনেক অভিভাবক এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় চলে গেছেন। অনেকে ফিরলেও আস্থার অভাব আছে। সে জন্য হয়তো এখনো সন্তানকে স্কুলে পাঠাননি। তাই এখন সবার আগে সব শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আনার চেষ্টাটা করতে হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৩৪৭
আপনার মতামত জানানঃ