টিকা নিয়ে রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি কিছু সামলে নিচ্ছে সরকার। দুই মাসের কম সময়ের মধ্যে বিভিন্ন উৎস থেকে প্রায় ২ কোটি ডোজ টিকা পেতে চলেছে। এর মধ্যে আগামীকাল সোমবারের মধ্যে দেশে আসবে ৫০ লাখ টিকা। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে না পেয়ে সরকার টিকা কিনতে চুক্তি করেছে চীনের সিনোফার্মের সঙ্গে। রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। টিকা আসছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমেও। গণটিকাদান কার্যক্রমের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, গণটিকাদান কর্মসূচি চালিয়ে নিতে আপাতত টিকার সংকটে পড়তে হবে না।
প্রায় ২ কোটি ডোজ টিকা সংস্থান
সূত্র মতে, আগামীকালের মধ্যে যে ৫০ লাখ টিকা দেশে আসবে, তার ২০ লাখ চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে কেনা। আর ৩০ লাখ টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যা মডার্নার তৈরি।
আশা করা হচ্ছে, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে এই ৩০ লাখসহ মোট ১ কোটি ২৯ লাখ টিকা আসবে আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে। চীন এ দফায় ২০ লাখ ছাড়াও আগামী আগস্টে আরও ৪০ থেকে ৫০ লাখ টিকা পাঠাবে।
রাশিয়া থেকে পাওয়া যেতে পারে ১০ লাখ টিকা। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে টিকার সংস্থান হতে পারে অন্তত ২ কোটি ডোজ।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকাগুলো আসবে উপহার ও নিয়মিত বরাদ্দ হিসেবে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া টিকা সোমবার পৌঁছাবে। এ মাসের শেষে অথবা আগামী মাসের শুরুতে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে জাপানের উপহার দেওয়া টিকা হাতে পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, কোভ্যাক্সের নিয়মিত বরাদ্দ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ও ফাইজারের ৬০ লাখ টিকা আসবে আগস্টের শেষে অথবা সেপ্টেম্বরের শুরুতে।
চীন থেকে কেনা হচ্ছে টিকা
ঢাকায় চীনের উপরাষ্ট্রদূত হুয়ালং ইয়ান জানান, বাংলাদেশ বিমানের দুটি আলাদা ফ্লাইট সিনোফার্মের ২০ লাখ টিকা নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে বেইজিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা করেছে। গত রাতেই ফ্লাইট দুটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা।
এটি হবে চীনের কাছ থেকে কেনা টিকার দ্বিতীয় চালান। চীনের সিনোফার্মের কাছ তিন মাসে দেড় কোটি টিকা কিনছে সরকার।
সেই অনুযায়ী ১ জুলাই দুটি ফ্লাইটে ২০ লাখ টিকা এসেছিল। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, বাংলাদেশকে নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকা সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে চীন।
রাশিয়ার সাথে চুক্তি সই
এদিকে রাশিয়ার কাছ থেকে ১ কোটি স্পুতনিক-ভি টিকা কিনতে সরকার এ মাসে চুক্তি সই করতে যাচ্ছে। প্রতি চালানে টিকার ডোজের পরিমাণসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো দুই দেশ প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে।
মস্কোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসান এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশা করছি, এ মাসে চুক্তি সই হলে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে বাংলাদেশ টিকার প্রথম চালান পাবে।’
তিনি জানান, প্রথম দফায় বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে ১০ লাখ টিকা পাবে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাশিয়া থেকে ১ কোটি টিকা আমদানির পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ।
টিকা আসতে পারে ভারত থেকেও
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী বলেছেন, ভারতে কোভিড টিকার উৎপাদন বেড়েছে। যোগান বাড়লে সমস্যা কেটে যাবে আশা করছি। চেষ্টা চলছে যাতে বাংলাদেশ দ্রুত টিকা পায়।
দিল্লি যাচ্ছি, সেখানে গিয়ে এসব বিষয় চেক করতে পারবো। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে ভালো কিছু হবে।
রবিবার (১৮ জুলাই) সকালে দিল্লি যাওয়ার পথে আখাউড়া স্থলবন্দরে দুই দেশের শূন্যরেখায় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়াদের জন্য সুখবর
দেশে এ পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এসেছে ১ কোটি ৩ লাখ। এর মধ্যে ৭০ লাখ টিকা সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে কেনা। বাকি ৩৩ লাখ ভারতের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া।
এবার কোভ্যাক্স পাঠিয়েছে ফাইজারের টিকা ১ লাখ এবং মডার্নার টিকা ২৫ লাখ। সেরাম টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষের অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ বাকি ছিল।
তাদের জন্যও স্বস্তিকর খবর হলো, কোভ্যাক্সের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা আসছে। জাপান যে ২৯ লাখ টিকা উপহার দেবে, তা অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি।
টিকা নিতে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের
দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় টিকা নিতেও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। গতকাল বেলা আড়াইটা পর্যন্ত টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন ১ কোটি ৫ লাখের বেশি মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গতকাল পর্যন্ত ৬৬ লাখ ৩১ হাজার ১৩৪ জনকে টিকার প্রথম ডোজ ও ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৯৭ জনকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে।
সরকার এখন ৩৫ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষকে টিকার জন্য নিবন্ধন করার সুযোগ দিচ্ছে। তবে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সব মানুষকে টিকা নিবন্ধনের সুযোগ দেওয়ার চিন্তার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
এসডব্লিউ/এমএন/এসএস/১৫০০
আপনার মতামত জানানঃ