খুলনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক লোকসমাজের রামপাল প্রতিনিধি এম এ সবুর রানাকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।
আসামিপক্ষের আইনজীবী বেলাল হোসেন বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জানান, জামিনের জন্য আবেদন করলে নিম্ন আদালতে নামঞ্জুর করেছেন। তিনি এ জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ১৮ এপ্রিল এনটিভির খুলনা প্রতিনিধি আবু তৈয়ব মুন্সির ব্যবহৃত ফেসবুক আইডি থেকে খুলনা সিটি মেয়রের বিপক্ষে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়।
এ ঘটনার পরে ২০ এপ্রিল মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক খুলনা থানায় দুজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। ওই দিন রাতে আবু তৈয়ব মুন্সিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২১ দিন কারাগারে থাকার পর তিনি জামিনে মুক্ত হন।
বৃহস্পতিবার এ মামলার অপর আসামি সাংবাদিক সবুর রানা জামিনের জন্য আদালতে হাজির হন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ১ এর বিচারক শাহীদুল ইসলাম তার আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণ করেন।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩ বছরে ৪ হাজার মামলা
সমালোচনার মুখে বাতিল করা হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা। পরে ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩ বছরে মামলা হয়েছে প্রায় চার হাজার। সত্যতা না পাওয়ায় শুরুতেই খারিজ হয়ে গেছে অর্ধেক অভিযোগ।
আইনবিদরা বলছেন, এ আইনে মামলা হলেই গ্রেপ্তার, মেলে না জামিনও। ফলে কাউকে হয়রানি করার শক্তিশালী হাতিয়ার এ আইন। তদন্তের আগে কাউকে গ্রেপ্তার না করার বিধান তৈরির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের। আইন পাসের পর শুধু ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালেই মামলা হয়েছে এক হাজার ৫০৪ টি। প্রাথমিকভাবেই ৬৩৩ টি খারিজ করে দেয় আদালত। আর তিন বছর ধরে তদন্ত চলছে ৮৭১ টির।
আগের আইসিটি আইন ও বর্তমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা সারা দেশের মামলাগুলোর বিচার হচ্ছে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে। এই আদালতে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলা এসেছে ২ হাজার ৬৮২টি। এর অর্ধেকের বেশি আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় করা মামলা।
ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনালে গত সাত বছরে ৯৯০টির মতো মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাড়ে চার শর বেশি মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে নিষ্পত্তি হয়। অনেক মামলায় অভিযোগ গঠনের উপাদান না থাকায় আসামিরা অব্যাহতি পান।
তথ্য-উপাত্ত বলছে, কেবল ২৫টি মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষ্য-প্রমাণে অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে। এর ২৪টি আইসিটি আইনের এবং একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা। আইনজীবী বলছেন, বেশিরভাগই আপসের মাধ্যমে মীমাংসা হয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া জানান, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মিথ্যা মামলার শিকার ব্যক্তিরও আইনি প্রতিকার পাওয়ার বিধান নেই। বেশিরভাগ মামলাই হয় ২৫ ও ২৯ ধারায়। যাতে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন ও মানহানির অভিযোগ তোলা হয়। ফলে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে গ্রেপ্তার না করা, জামিন দেয়ার সুনির্দিষ্ট বিধান করার পরামর্শ এই আইনবিদদের।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯১৩
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ