সিলেট জেলার ওসমানীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট সৃষ্টির অভিযোগ সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ আনলেন সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারের যোগাসাজশে একটি ‘প্রভাবশালী সিন্ডিকেট’ সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
আজ শনিবার(২৯ মে) সিলেট নগরীর নবাবরোড এলাকায় সাংসদ তার বাসায় সংবাদ সম্মেলন করে লিখিত বক্তৃতায় এই অভিযোগ করেন। এ সময় বালাগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবদাল মিয়াসহ ওসমানীনগর উপজেলার সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারের যোগাসাজশে এই সিন্ডিকেট তৎপর, উল্লেখ করে সাংসদ মোকাব্বির খান বলেন, ‘এত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট, এই সিন্ডিকেটের নাম নিতেও আমি ভয় পাচ্ছি।’
লিখিত বক্তব্যে এমপি মোকাব্বির খান বলেন, সরকার দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যেখানে বিনামূল্যে জমি পাওয়া যাবে না, সেখানে ৩ গুণ বেশি টাকা দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ওসমানীনগর উপজেলায় এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য বিনামূল্যে জমি দানের আগ্রহী ব্যক্তি থাকা সত্ত্বেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনা আক্তারের সক্রিয় সহযোগিতায় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট জমি অধিগ্রহণের নামে প্রায় ১০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলো। বিষয়টি প্রমাণ সহ এমপি মোকাব্বির খানের নজরে আসলে তিনি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করে ডিওলেট পাঠান এবং জাতীয় সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করেন।
একই ভাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ওসমানী নগরের ইউএনও সরকারি বিধি বিধান উপেক্ষা করে সিন্ডিকেটের স্বার্থে কাজ করে আর্থিক মুনাফা অর্জনে সচেষ্ট রয়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় সাংসদের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে জনগণের স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজের এবং সিন্ডিকেটের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। এ ব্যাপারে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ এমপি মোকাব্বির খানের কাছে রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, ওসমানীনগরের গোয়ালাবাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যা খোলাবাজারে বিক্রির ব্যাপারে ইউএনও’র যোগসাজস রয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক টিআর, কাবিটা প্রকল্পে ১০-১৫% টাকা ইউএনও’র পকেটস্থ হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। যারা তার দাবী মোতাবেক টাকা পরিশোধ করতে পারেননি, তাদের বিল আটকে রেখে তিনি নানা ভাবে হয়রানী করে যাচ্ছেন। তার এসব কর্মকাণ্ডে জনগণ তাদের সরকারি সেবা ও সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাশাপাশি সরকারের ভাবমূতি ও উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এমপি মোকাব্বির খান বলেন, তার নির্বাচনী এলাকার জনগণের অধিকার রক্ষায় এসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ বিভাগীয় শাস্তিমূলক গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, জনসাধারণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচি শতভাগ সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে দুর্নীতিবাজ কর্মচারী এবং তাদের দোষর সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ডের যাবতীয় তথ্য প্রমাণ সহ জাতীয় সংসদে তুলে ধরবেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরো বলেন, ওসমানী নগরের ইউএনও এর দুর্নীতির অভিযোগ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরায় ইউএনও এবং তার দোসর বিশেষ সুবিধা ভোগী চক্রটি এমপির উপর বিরাগভাজন হয়েছেন। তারা এমপির মর্যাদা ও অধিকার ক্ষুণ্ন করতে পদে পদে বাধা সৃষ্টি করছেন এবং তাকে নানাভাবে অপদস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি নির্বাচনী এলাকার জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে জাতির বিবেক সাংবাদিক সমাজের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সাংসদ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজ আমলা ও অসৎ রাজনীতিবিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটগুলোর কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের ঘটনা উদঘাটন এবং দেশ ও জাতির শত্রু দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে আমি মহান জাতীয় সংসদে ক্রমাগতভাবে দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো তার নির্বাচনী এলাকায় (সিলেট-২, ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য রয়েছে।’
সাংসদ বলেন, ‘দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সহযোগিতায় একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে আমার নির্বাচনী এলাকার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন দেখা দেয় এবং আশপাশে বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। বিষয়টি আমার নজরে এলে আমি এ ব্যাপারে ভূমি মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার পাঠাই। কিন্তু মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিতে আগ্রহ না দেখালে আমি বিষয়টি সংসদে উত্থাপন করি। পরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের টনক নড়ে এবং কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা বন্ধ হয়।’
সাংসদ আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রকে যেমন যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে, তেমনি জনগণকেও তাদের অধিকার রক্ষায় সচেতন ও সচেষ্ট হতে হবে। সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির শতভাগ সুফল পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থে প্রয়োজনে আমি এসব দুর্নীতিবাজ কর্মচারী ও তাদের দোসর সিন্ডিকেটের কর্মকাণ্ডের কথা প্রমাণাদিসহ সংসদ তুলে ধরব।’
সংবাদ সম্মেলনে সাংসদের লিখিত বক্তব্যের সঙ্গে দেওয়া ৯০ লাখ ৪০ হাজার টাকার রেজিস্ট্রি হওয়া জমির একটি দলিলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আফজালুর রহমান চৌধুরীর নাম পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সাংসদের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দলিলে যাদের নাম আছে, তারাই সিন্ডিকেট। আমি তাদের নাম নিতে চাই না। তারা এত বড় সিন্ডিকেট, এই সিন্ডিকেটের নাম নিতেও আমি ভয় পাচ্ছি। আমি শুধু বলব, ইউএনও একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটকে পুষছেন। তাই সবার আগে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
সাংসদের অভিযোগ সম্পর্কে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ইউএনও তাহমিনা জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি মাননীয় সাংসদ। আমাদের চেয়ে অনেক অনেক ওপরের মানুষ। আমি প্রজাতন্তের সামান্য একজন কর্মচারী। আমার বিরুদ্ধে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করা দুঃখজনক।’
ওসমানীনগরে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ইউএনও বলেন, ‘আমি সরকারি নীতিমালার বাইরে কাউকে ফেভার করি না। যা করছি, যথাযথভাবেই করছি।’
উল্লেখ্য, সাংসদ মোকাব্বির খান সব সময় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সক্রিয়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে ইতিমধ্যে দেশবাসীর প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকায় একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলো। এতে করে নদী তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গনের আশংকা দেখা দিয়েছিলো। তিনি বিষয়টির আশু প্রতিকার চেয়ে ভূমিমন্ত্রী বরাবরে ডিওলেটার পাঠান এবং পরবর্তীতে মহান জাতীয় সংসদে বিষয়টি উত্থাপন করেন। যার ফলশ্রুতিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে এবং কুশিয়ারা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯৫১
State watch সকল পাঠকদের জন্য উন্মুক্ত সংবাদ মাধ্যম, যেটি পাঠকদের অর্থায়নে পরিচালিত হয়। যে কোন পরিমাণের সহযোগিতা, সেটি ছোট বা বড় হোক, আপনাদের প্রতিটি সহযোগিতা আমাদের নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে বড় অবদান রাখতে পারে। তাই State watch-কে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি। [wpedon id=”374″ align=”center”]
আপনার মতামত জানানঃ